নিজস্ব প্রতিবেদক: ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাতে কোনো উল্লেখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান। তিনি বলেন, ‘ঝড়ে আমাদের সিগনিফিক্যান্ট কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। যেভাবে এটার পূর্বাভাস ছিল সেই অনুযায়ী কিছু হয়নি। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার শতভাগ মানুষকে আমরা আশ্রয়কেন্দ্রে আনতে পেরেছিলাম, যার জন্য হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।’
গতকাল সোমবার সচিবালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ এই প্রথম কোনো ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলা করল, যেখানে কোনো মৃত্যু সংবাদ নেই। সে কারণেই আমরা এটাকে বিশাল সফলতা বলছি। কারণ প্রাণহানিটাই আমাদের বড় লস। সবকিছু রিকভার করা যায়, কিন্তু মানুষের প্রাণকে ফিরিয়ে আনা যায় না।
টানা তাপপ্রবাহের মধ্যে গত সপ্তাহে সাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়, যা ধীরে ধীরে শক্তি সঞ্চয় করে অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়।
প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাতে কক্সবাজারে সম্পূর্ণ ও আংশিক মিলিয়ে ১২ হাজারের বেশি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা সোয়া ৩ লাখ মানুষ। এছাড়া রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরে আড়াই হাজার ঘর ও স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে ত্রাণ, শরণার্থী ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়।
দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে ১ হাজার দুইশোর মতো ঘরবাড়ির ক্ষতি হয়েছে। গাছপালা উপড়ে গেছে, ঘরবাড়ি ভেঙে মানুষের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী এনামুর জানান, প্রাণহানি না হলেও ঝড়ে অনেক গাছপালা পড়ে গেছে। ঘরবাড়িও বিধ্বস্ত হয়েছে। টেকনাফ এবং সেন্টমার্টিনে দুই হাজারের মতো ঘর সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। তবে শুধু সেন্টমার্টিনেই ১ হাজার ২০০ ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। আর সবমিলিয়ে ১০ হাজারের মতো ঘরবাড়ি আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গাছ চাপা পড়ে কয়েকজনের আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তাদের স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এছাড়া আর কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর আমরা পাইনি।
প্রতিমন্ত্রী জানান, ঝড়ে যাদের ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে, তাদের টিন এবং গৃহ নির্মাণের জন্য অর্থ সহায়তার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। দুর্গতদের নিরাপদ পানি, ড্রাই কেক, খিচুড়ি দেয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মাঠপর্যায় থেকে তালিকা চাওয়া হয়েছে। সেই চাহিদা অনুযায়ী সহায়তা পাঠানো হবে। এছাড়া আমাদের জেলাগুলোতে মানবিক সহায়তা মজুত থাকে। একান্ত জরুরি হলে সেখান থেকে সরবরাহ করা হবে। যেমন জেলা প্রশাসকের কাছে ২০০ বান্ডিল করে টিন থাকে, ১০ লাখ টাকা থাকে, ২০০ মেট্রিকটন চাল থাকে, দুই হাজার প্যাকেট খাবার থাকে। এখান থেকে তারা জরুরি প্রয়োজন মেটাতে পারবে।’
সহায়তা কবে নাগাদ মানুষের হাতে পৌঁছাবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রিপোর্ট আসতে প্রায় ২ সপ্তাহ সময় লাগে। রিপোর্ট হাতে এলে ৩ সপ্তাহের মধ্যে কাজ শুরু হবে। আন্তঃমন্ত্রণালয়ে একটা সভা হবে। মাঠ থেকে লস অ্যান্ড ড্যামেজের যে রিপোর্ট আসবে, সেটা পাওয়ার পরে প্রত্যেক মন্ত্রণালয় লস অ্যান্ড ড্যামেজ রিকভারি এবং রিহ্যাবিলিটেশনের জন্য কাজ করবে। রাস্তায় যেসব গাছ পড়েছিল, সেগুলো কেটে ইতোমধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক করা হয়েছে।