ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার আগেই বিদেশি ঋণ পরিশোধে ব্যবস্থা নিন

‘বিদেশি ঋণের ঝুঁকিপূর্ণ পথেই কি বাংলাদেশ’ শীর্ষক শিরোনামে গতকাল প্রধান প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে শেয়ার বিজে। আমাদের প্রতিবেদক বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে জানিয়েছেন, গত কয়েক বছর ধরে বিদেশি ঋণ দ্রুত বাড়ছে। বেসরকারি-সরকারি উভয় খাতেই এ ঋণ বেড়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে বাংলাদেশের বিদেশে ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে প্রায় ৯ হাজার ৯০০ কোটি ডলার। মোট ঋণের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মাথাপিছু বিদেশি ঋণও। মাত্র সাত বছরেই তা ২২৫ শতাংশ হয়েছে। এছাড়া বিদেশি ঋণের বিপরীতে রিজার্ভের অনুপাত ক্রমেই কমছে। এ অনুপাতটি যতই কমবে বিদেশি ঋণ পরিশোধ ততই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় যাবে বলে অভিমত বিশেষজ্ঞদের।

দেশের উন্নয়নে দাতা সংস্থা ও উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ঋণ নেয়া একটি স্বাভাবিক বিষয়। একসময় যারা ঋণ নিয়েছে, পরবর্তী সময় তারাই বড় ঋণদাতা দেশ হিসেবে অনেক দেশের পাশে দাঁড়িয়েছে। যারা ঋণের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার করে করেছে, তারা ঋণ নিয়ে কখনও বড় সমস্যায় পড়েনি।

ঋণ নিয়ে ভয়ের কোনো কারণ নেই; যদি আমরা নি¤œমুখী রিজার্ভ ও ঊর্ধ্বমুখী বিদেশি ঋণ সমস্যা মোকাবিলায় প্রজ্ঞার পরিচয় দিতে পারি।  

আমাদের প্রধান করণীয় হবে বিদেশি ঋণের সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং ঋণের হিসাব যথানিয়মে সংরক্ষণ করা। তাহলে ঋণ কখনও  যেন দেশের জন্য গলার কাঁটা হয়ে না দাঁড়াবে না। ঋণ সহায়তায় যেসব প্রকল্প গ্রহণ করা হয়, তা থেকে দেশ কতটা সুফল পাবে, সে বিষয়ে প্রকল্প গ্রহণের আগেই বিচার-বিশ্লেষণ করা জরুরি।

ঋণ গ্রহণ করতে কৌশলী হওয়া উচিত। বেহিসাবি ঋণ নিলে ব্যক্তি-সংগঠন এমনকি দেশকেও বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। ঋণ নিয়ে শ্রীলঙ্কা কী বিড়ম্বনায় পড়েছে, তা আমাদের অজানা নেই। দেশটি আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক, চীনসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ঋণ নিয়ে  অনেক উন্নয়ন করেছে। তাই ঋণের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করা যেমন জরুরি, তেমনই ঋণের অভিঘাত সম্পর্কে সচেতন থাকাও গুরুত্বপূর্ণ।

ইআরডির বাইরেও রাষ্ট্রায়ত্ত বিভিন্ন সংস্থা নিজস্বভাবে কিছু বিদেশি ঋণ নিয়ে থাকে। এছাড়া জ্বালানি তেল কেনার জন্য কিছু ঋণ নেয়া হয়। কঠিন শর্ত ও উচ্চ সুদহারের কারণে বৈদেশিক ঋণের অর্থ যথাযথ ব্যয় কঠিন হয়ে পড়ে। দীর্ঘদিনের অভিযোগ, দক্ষতা অর্জন ও সঠিক তদারকি না থাকায় বৈদেশিক ঋণের বড় অংশই উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর বিশেষজ্ঞদেরই দিতে হয়।

বর্তমানে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশের মহাসড়কে রয়েছে। এ ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হলে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে, সন্দেহ নেই। আর তা যদি হয় ঋণের অর্থে, তাহলে সেটা নেয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই সচেতন হতে হবে। ঋণ-ফাঁদে পড়ে অনেক দেশ প্রতিকূল পরিস্থিতির শিকার হয়েছে।

ঋণের ক্ষেত্রে দূরদর্শী না হলে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। অথচ বিদেশি ঋণ আমরা দেশের জন্য ব্যয়ই করতে পারছি না। আমাদের প্রত্যাশা বিদেশি ঋণের হিসাব যথানিয়মে সংরক্ষণ, যথাস্থানে ঋণ ব্যয় করার বিষয়ে সরকার শিগগিরই কার্যকর ব্যবস্থা নেবে।