ঝুঁকি বাড়াচ্ছে জাঙ্ক শেয়ার

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: ঊর্ধ্বমুখী পুঁজিবাজারে শেয়ারদর বৃদ্ধিতে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে রয়েছে ভালো মৌলভিত্তিসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানগুলো। এই দৌড়ে এগিয়ে রয়েছে স্বল্প মূলধনি ও জেড ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ার হিসেবে পরিচিত ‘জাঙ্ক’ শেয়ারগুলো। বিনিয়োগকারীদেরও আগ্রহের শীর্ষে এসব প্রতিষ্ঠান। মৌলভিত্তি বিচার-বিবেচনা না করেই এসব শেয়ারে বিনিয়োগ করছেন তারা। যে কারণে প্রতিদিনই বাড়ছে এ ধরনের শেয়ারদর। গতকাল সোমবার এ তালিকায় ছিল মুন্নু সিরামিক, স্ট্যান্ডার্ড সিরামিক ও দুলামিয়া কটনের নাম। এ ধরনের শেয়ারে বিনিয়োগ প্রবণতা বেড়ে গেলে বিনিয়োগকারীর পাশাপাশি পুঁজিবাজারও ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে বলে মনে করছেন বাজারসংশ্লিষ্টরা।

এদিকে ঠিক কী কারণে এসব শেয়ারদর বাড়ছে, তা বলতে পারছেন না বাজারসংশ্লিষ্ট থেকে শুরু করে কোম্পানি কর্তৃপক্ষের কেউই। প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ারের দর বৃদ্ধি অস্বাভাবিক মনে হওয়ায় ইতোমধ্যে এদের কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। জবাবে কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। সবগুলো প্রতিষ্ঠান থেকে জানানো হয়েছে, তাদের কাছে শেয়ারের দর বাড়ার কোনো কারণ জানা নেই। কিন্তু এই খবরকে তোয়াক্কা করছেন না বিনিয়োগকারীরা। এরপরও তারা উচ্চদরে এসব শেয়ার কিনে নিচ্ছেন।

এ প্রসঙ্গে ডিএসইর সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বর্তমান পরিচালক রকিবুর রহমান শেয়ার বিজকে বলেন, ‘দুর্বল এবং জেড ক্যাটাগরির শেয়ার থেকে দূরে থাকার জন্য সবসময় বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করি। কিন্তু এরপরও তারা বিষয়টি আমলে নেন না। কেউ যদি জেনে-বুঝে নিজের পুঁজি ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে চান, কিছু করার নেই।’

তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানগুলো মালিকানা পরিবর্তনসহ বিভিন্ন গুজব ছড়িয়ে ফায়দা হাসিল করার চেষ্টা করছে। বিষয়গুলো বিনিয়োগকারীদের বুঝতে হবে। কারণ সর্বশেষ ভোগান্তি কিন্তু তাকেই পোহাতে হবে।’

বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে বাজারসংশ্লিষ্টরা জানান, উচ্চদরে এসব শেয়ার কিনে নিজেদের ঝুঁকির মধ্যে ফেলছেন বিনিয়োগকারীরা। একইভাবে বাজারও হয়ে পড়ছে ঝুঁকিপূর্ণ। এখনই সচেতন না হলে এসব শেয়ার নিয়ে তাদের ভোগান্তি পোহাতে হতে পারে বলে মন্তব্য করেন তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, লভ্যাংশের আশায় নয়, শুধু ক্যাপিটাল গেইন করার জন্যই এক শ্রেণির বিনিয়োগকারী এসব কোম্পানিতে স্বল্পমেয়াদি বিনিয়োগ করছেন। এ প্রসঙ্গে রাসেল আহমেদ নামে এক বিনিয়োগকারী বলেন, ‘যে যত কথাই বলুক না কেন, সবার উদ্দেশ্য থাকে যে কোনো মূল্যে পুঁজিবাজার থেকে মুনাফা অর্জন করা। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান কোনো বিষয় হতে পারে না। আমার পুঁজি কোথায় ব্যবহার করব, সেটা আমার বিষয়।’

গতকাল সকাল থেকেই জাঙ্ক শেয়ার কিনতে এক শ্রেণির ক্রেতাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করা যায়। ফলে বিক্রেতাও দর বাড়াতে থাকেন। পক্ষান্তরে ক্রেতাও সঙ্গে সঙ্গে ওই দরে শেয়ার কিনে নিতে থাকেন। পরে আর দর বাড়ানোর সীমা না থাকায় শেয়ার বিক্রি বন্ধ করে দেন বিক্রেতা। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বিক্রেতা শূন্য হয়ে যায়। এ প্রতিষ্ঠানগুলো ছাড়া তালিকায় ছিল আরও ৯টি প্রতিষ্ঠান।

শেয়ারের দর বৃদ্ধি পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর সাম্প্রতিক লেনদেন চিত্রে দেখা যায়, এক মাসের ব্যবধানে মুন্নু সিরামিকের শেয়ারের দর বেড়েছে ৩৭ টাকা বা ৮৬ শতাংশ। এক মাস আগে এই শেয়ারের দর ছিল ৪৩ টাকা ৩ পয়সায়, গতকাল যা লেনদেন হয় ৮০ টাকা ৩০ পয়সায়।

একইভাবে এক মাসের ব্যবধানে দুলামিয়া কটনের শেয়ারের দর বেড়েছে প্রায় ছয় টাকা ৪৯ শতাংশ। গতকাল এ প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি শেয়ার দিন শেষে লেনদেন হয় ১৭ টাকা ৪০ পয়সায়। এক মাস আগে যার দর ছিল ১১ টাকা ৪০ পয়সা।

তালিকায় থাকা অন্য কোম্পানি স্ট্যান্ডার্ড সিরামিকের শেয়ারের দর এক মাসের ব্যবধানে বেড়েছে ২০ টাকা বা ৩১ শতাংশ। ৬৪ টাকা ২০ পয়সার শেয়ার এক মাসের ব্যবধানে বেড়ে হয় ৮৪ টাকা ২০ পয়সা।