শেখ মোহাম্মদ রতন, মুন্সীগঞ্জ: মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার দিঘিরপাড় বাজারের পশ্চিম পাশ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে পদ্মার শাখা নদী। এ নদীতে সেতু না থাকায় ট্রলারই একমাত্র যাতায়াতের ভরসা মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, চাঁদপুরসহ নদীবেষ্টিত পাঁচটি জেলার অন্তত ১১টি ইউনিয়নের মানুষের। এতে করে ঝড়-তুফানের ঝুঁকিসহ রাতবিরাতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে এ পথ ব্যবহারকারী লাখো বাসিন্দাকে।
স্থানীয় ও এ নৌপথ ব্যবহারকারীরা জানান, দিঘিরপার বাজারের পাশ দিয়েই বয়ে গেছে পদ্মার শাখা নদী। নদীর পূর্ব পারে রয়েছে দিঘিরপার বাজার, স্কুল ও কলেজ।
মুন্সীগঞ্জ জেলা শহর ও রাজধানীতে যাতায়াতের পথও এদিক দিয়ে। নদীর পশ্চিম ও উত্তর-দক্ষিণ পারে টঙ্গিবাড়ী উপজেলার দিঘিরপাড়, কামারখাড়া, হাসাইল বানারি ও পাঁচগাঁও ইউনিয়নের ১২-১৩টি গ্রাম, মুন্সীগঞ্জ সদরের শিলই ও বাংলাবাজার তিন-চারটি গ্রাম, শরীয়তপুরের নওপাড়া, চরআত্রা, কাঁচিকাটা, কুণ্ডের চর এবং কোরবি মনিরাবাদ ঘড়িশালসহ পাঁচটি ইউনিয়নের ১০-১২টি গ্রাম। এছাড়া কুমিল্লার জেলার এলামচর, পূর্ব বানিয়াল, চাঁদপুরে হাইমচরের কিছু অংশ মুন্সীগঞ্জ জেলার সঙ্গে লাগোয়া। এসব ইউনিয়নের গ্রামগুলোর অন্তত দুই লাখ মানুষ তাদের প্রয়োজনে প্রতিদিনই ট্রলারে করে এ নদী পারাপার হচ্ছেন। নদী পারাপার হয়ে টঙ্গিবাড়ী শহর, মুন্সীগঞ্জ সদর, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জে যাতায়াত করেন।
এসব গ্রামবাসী দিঘিরপাড় বাজার ঘাট এলাকায় দিনের পর দিন একটি সেতুর দাবি জানিয়ে এলেও তাদের সে দাবি পূরণ হচ্ছে না। মঙ্গলবার দিঘিরপার বাজার এলাকায় দেখা যায়, ট্রলার ভর্তি করে নদীর পশ্চিম পার থেকে মানুষজন আসছেন। ট্রলার থেকে নেমে তারা প্রয়োজনে দিঘিরপার বাজার, টঙ্গিবাড়ী উপজেলা পরিষদ, মুন্সীগঞ্জ শহর ও রাজধানীর দিকে ছুটছেন। একইভাবে প্রয়োজন শেষে এ পার থেকে ট্রলার ভর্তি করে নদীর পশ্চিম পাড়ে যাচ্ছেন যাত্রীরা। এছাড়া নদীর উত্তর ও দক্ষিণ পাশ থেকে ট্রলার ভর্তি করে দিঘিরপাড় হাটে কেউ মালামাল বিক্রি করতে আসছেন। কেউ কেউ আবার এ হাট থেকে তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও গৃহস্থালির জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনে নিয়ে বাড়ি ফিরছেন। সবকিছুই হচ্ছে ট্রলারের ওপর ভরসা করে।
এদিন কথা হয় শরীয়তপুর কাঁচিকাটা ইউনিয়নের বাসিন্দ মো. ইয়াসিন ব্যাপারীর সঙ্গে। তিনি কাজের সুবাদে এ পথ হয়ে রাজধানীর দিকে যাচ্ছিলেন। ইয়াসিন ব্যাপারী বলেন, আমরা শরীয়তপুরের মানুষ হলেও আমাদের সব কাজকর্মের জন্য মুন্সীগঞ্জেই সুবিধা বেশি। আমাদের হাটবাজার করতে হয় দিঘিরপার বাজারে। ঢাকায় যাই এ পথ দিয়ে। তিনি বলেন, রাত-বিরাতে ট্রলার পাওয়া যায় না। ট্রলার পেলেও ৫০ টাকার ভাড়া ৫০০ টাকা গুনতে হয়। নদীপথে সময় লাগে বেশি।
এছাড়া ট্রলারে করে দিঘিরপার আসার সময় প্রায়ই আমাদের ডাকাতির শিকার হতে হয়। যদি দিঘিরপারে বাজার এলাকায় একটি সেতু নির্মাণ করা হতো, তাহলে আমাদের এত ঝক্কিঝামেলা পোহাতে হতো না। খুব সহজে সড়কপথে ঢাকা ও মুন্সীগঞ্জ যেতে পারতাম।
সরকারি হরগঙ্গা কলেজের সম্মান শ্রেণির দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো.মোবারক হোসেন। তিনি মুন্সীগঞ্জ সদরের শিলই ইউনিয়নের বাসিন্দা। তিনি সপ্তাহে চার দিন ট্রলারে করে পদ্মার শাখা নদী পার হয়ে মুন্সীগঞ্জে আসা-যাওয়া করেন।
মোবারক বলেন, দিঘিরপাড় খেয়াঘাট থেকে আমার বাড়ির দূরত্ব দুই কিলোমিটার। নদীর পশ্চিমপাড়ে সড়কের অবস্থাও তেমন ভালো নয়। যাত্রীবাহী কোনো যানবাহন চলে না। এটুকু রাস্তা পাড়ি দিয়ে দিঘির পারে আসা-যাওয়া করতে মোটরসাইকেলে ২০০ টাকা ভাড়া গুনতে হয়। সেতু নেই, তাই ঘাটে এসে ট্রলারের জন্য প্রতিদিন ৩০-৪০ মিনিট বসে থাকতে হয়। তবে ট্রলার পার হতে পারলে দিঘিরপাড় থেকে মুন্সীগঞ্জে ১৫ কিলোমিটার দূরত্বে ৩০ মিনিটের মধ্যে যেতে পারি। যাওয়া-আসা করতেও মাত্র ৮০ টাকা খরচ হয়।
মোবারক বলেন, যদি দিঘিরপার এলাকায় একটি সেতু থাকত, তাহলে অল্প সময়ে ১০০ টাকার কম খরচে প্রতিদিন আমাদের মতো শিক্ষার্থীরা মুন্সীগঞ্জে যাতায়াত করতে পারত।
দিঘিরপার ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও টঙ্গীবাড়ী উপজেলা পরিষদের সদ্যনির্বাচিত চেয়ারম্যান মো. আরিফুল ইসলাম হালদার বলেন, একটি সেতুর অভাবে মানুষের কত দুর্ভোগ, সেটি আমি নিজের চোখে প্রতিনিয়ত দেখছি। সেতু নির্মাণের জন্য ইউপি চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় সংশ্লিষ্ট দপ্তরে বারবার জানিয়েছি। যতদূর জানতে পেরেছি এখানে খুব শিগগিরই একটি সেতু নির্মাণ করা হবে। সেই লক্ষ্যে কাজও চলছে।
এ নদীর উপর দিয়ে ১০০ মিটারের বেশি দৈর্ঘ্যের একটি সেতু নির্মাণ এবং নদীর পশ্চিম পাশে চার কিলোমিটারের একটি আরসিসি সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান টঙ্গিবাড়ী উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী মো.শাহ মোয়াজ্জেম।
এই কর্মকর্তা বলেন, সেতু নির্মাণের প্রাথমিক কাজ হিসেবে মাটি পরীক্ষা ও অন্যান্য সার্ভে কাজ সম্পন্ন করেছে বুয়েটের একটি বিশেষজ্ঞ দল। এখন নকশা করে বরাদ্দ চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হবে। বরাদ্দ হলে দরপত্র আহব্বান করা হবে। বরাদ্দ পেলে আগামী বছরের মধ্যে কাজ শুরু করা যাবে।