ক্রীড়া প্রতিবেদক: দুই ওপেনারের ব্যাটে দুর্দান্ত শুরু করেছিল বাংলাদেশ। তবে মিডল অর্ডার ব্যাটাররা সেই ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে ভারতীয়দের শাসন করতে পারেননি। উল্টো দ্রুত আউট হয়ে দলের চাপ বাড়িয়েছেন। শেষ দিকে মুশফিক-মাহমুদউল্লাহর ব্যাটে লড়াই করার পুঁজি পেয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ২৫৭ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ভারত উড়ন্ত সূচনা পায়। বিরাট কোহলির সেঞ্চুরিতে এতে গতকাল পুনেতে তারা ৪১.৩ ওভারে সাত উইকেটে জয় পায় ভারত।
উইকেটে কোনো মুভমেন্ট নেই। ফলে বাড়তি কোনো সুবিধা পাচ্ছেন না পেসাররা। এই উইকেটে ব্যাটারদের চেপে ধরতে হলে লাইন-লেন্থের দিকে মনোযোগী হতে হবে বোলারদের। সেখানে শুরুর ৫ ওভারে ব্যর্থ বাংলাদেশ। ৫ ওভার শেষে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৩৩ রান তুলেছে স্বাগতিকরা। ১৩তম ওভারের চতুর্থ বলটি খাটো লেন্থে করেছিলেন হাসান। সেখানে ঘুরে দাঁড়িয়ে পুল করেন রোহিত। তবে টাইমিং হয়নি। তাতে ডিপ স্কয়ার লেগে হƒদয়ের হাতে ধরা পড়েন তিনি। ৪৮ রান করা এই ওপেনারকে ফিরিয়ে ৮৮ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন হাসান। উইকেটে নেমেই বাংলাদেশি বোলারদের থেকে বেশ কিছু উপহার পেয়েছেন কোহলি! যা তাকে উড়ন্ত শুরু করতে সাহায্য করেছে। কোহলির বিপক্ষে ১৩তম ওভারে পরপর দুটি নো বল দিয়েছেন হাসান। প্রথম ফ্রি হিটে চার। পরেরটিতে ছক্কা। পরপর দুটি নো বলই কাজে লাগিয়েছেন কোহলি। এমন শুরুর পর ফিফটিতে পৌঁছাতে কোহলি খেলেছেন ৪৮ বল। অন্যদিকে ডেঙ্গু থেকে ফিরে প্রথম ম্যাচে সুবিধা করতে পারেননি শুবমান গিল। পাকিস্তানের বিপক্ষে থিতু হয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি। কিন্তু আজ (বৃহস্পতিবার) বাংলাদেশের বিপক্ষে ঠিকই ফিফটি তুলে নিয়েছেন। তবে এরপর আর বেশি দূর এগোতে পারেননি। ২০তম ওভারে এই ওপেনারকে ফিরিয়েছেন মেহেদি হাসান মিরাজ। যেখানে বড় কৃতিত্ব আছে মাহমুদউল্লাহর। ডিপ মিড উইকেটে দুর্দান্ত ক্যাচ নিয়েছেন তিনি। সাজঘরে ফেরার আগে গিলের ব্যাট থেকে এসেছে ৫৫ বলে ৫৩ রান।
পুনেতে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন দুই ওপেনার লিটন দাস এবং তানজিদ হাসান তামিম। প্রথম ১০ ওভারে কোনো উইকেট না হারিয়েই ৬৩ রান তুলে ফেলেন ছোট তামিম এবং লিটন দাস। ১০ম ওভারে শার্দুল ঠাকুরকে টানা দুটি ছক্কা এবং একটি বাউন্ডারি মারেন তানজিদ তামিম।
অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়ে অন্যতম অবদান রেখেছিলেন তানজিদ তামিম। দারুণ সম্ভাবনাময়ী ব্যাটার। কিন্তু জাতীয় দলে জায়গায় পাওয়ার পর কেন যেন নিজেকে মেলেই ধরতে পারছিলেন না। এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অভিষেকেই শূন্য রানে আউট হয়েছিলেন তিনি। এরপর আরও ৭ ম্যাচে সুযোগ দেয়া হয়েছিল তাকে; কিন্তু খোলস ছেড়ে বের হতেই পারছিলেন না তিনি। সর্বোচ্চ রান ১৬। এমন পরিস্থিতিতে তানজিদ তামিমকে বাদ দিয়ে বিশ্বকাপে মেহেদী হাসান মিরাজকে মেকশিফট ওপেনার হিসেবে খেলানোর দাবিও উঠেছিল জোরালোভাবে।
কিন্তু টিম ম্যানেজমেন্ট তার ওপরই আস্থা রাখছিল। শেষ পর্যন্ত সেই আস্থার প্রতিদান দিলেন তানজিদ হাসান তামিম। ভারতের বিপক্ষে পুনের মহারাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে রীতিমতো ঝড় তোলেন তানজিদ হাসান তামিম।
ভারতীয় বোলারদের পিটিয়ে ৪১ বলেই হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন এই তরুণ ওপেনার। ৫টি বাউন্ডারির সঙ্গে ৩টি ছক্কার মারও মারেন তিনি। তবে ঝোড়ো ফিফটি করার পর কুলদিপ যাদবের এলবিডব্লিউর শিকার হয়ে ফিরতে হয়েছে তাকে। ৪৩ বলে তামিমের ব্যাট থেকে আসে ৫১ রান।
এরপর অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করতে পারেননি শান্ত। ১৭ বলে ৮ রান করে রবীন্দ্র জাদেজার ঘূর্ণিতে পরাস্ত হয়ে এলবিডব্লিউ আউটে ফেরেন তিনি।
প্রমোশন পেয়ে চার নম্বরে আসা মেহেদী হাসান মিরাজও ব্যর্থ। ১৩ বলে ৩ রান করে তিনি মোহাম্মদ সিরাজের লেগ সাইডে বেরিয়ে যাওয়া বলে খোঁচা মেরে বসেন। ঝাঁপিয়ে পড়ে দুর্দান্ত এক ক্যাচ নেন উইকেটরক্ষক লোকেশ রাহুল। ১২৯ রানে ৩ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
এরপর লিটন দাস ফিফটি করে সাজঘরে ফেরেন। জাদেজাকে লংঅফে তুলে মারতে গিয়ে ক্যাচ দেন লিটন। ৮২ বলে ৭ বাউন্ডারিতে করেন ৬৬ রান। ১৩৭ রান তুলতে হারায় ৪ উইকেট। সেখান থেকে তাওহিদ হƒদয়কে নিয়ে ৫৮ বলে ৪২ রানের জুটি গড়েন মুশফিকুর রহিম। যদিও এই জুটিতে মূল অবদান মুশফিকেরই। হƒদয় ভীষণ ধীরগতিতে ব্যাটিং করেছেন।
মন্থর ব্যাটিং করে যখন সেট হলেন, তখনই উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসলেন হƒদয়। ৩৫ বলে ১৬ রান করে শার্দুল ঠাকুরের শিকার হয়েছেন ডানহাতি এই ব্যাটার। মুশফিকুর রহিম ফিরেছেন জাদেজার দুর্দান্ত ক্যাচ হয়ে। বুমরাহর বলে ঝাঁপিয়ে পড়ে বাজপাখির মতো এক ক্যাচ নেন জাদেজা। ৪৬ বলে মুশফিকের ৩৮ রানের ইনিংসটিতে ছিল একটি করে চার-ছক্কার মার। নাসুম আহমেদ ১৮ বলে ১৪ করে শেষের দিকে মাহমুদউল্লাহকে ভালো সঙ্গ দেন। আর ইনিংসের শেষ বলে ছক্কা হাঁকান শরিফুল ইসলাম (৩ বলে ৭)। ভারতের জাসপ্রিত বুমরাহ, মোহাম্মদ সিরাজ আর রবীন্দ্র জাদেজা নেন দুটি করে উইকেট।