টার্নওভার কমলেও ব্যয় বেড়েছে ন্যাশনাল টি’র

নাজমুল ইসলাম ফারুক: ন্যাশনাল টি কোম্পানির সর্বশেষ প্রকাশিত প্রথম প্রান্তিকে টার্নওভার কমেছে। টার্নওভার কমলেও কোম্পানিটির প্রশাসনিক ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় দ্বিগুণের কাছাকাছি। এতে কোম্পানিটির কর-পূর্ববর্তী মুনাফা কমেছে, কিন্তু বিলম্বিত কর যোগ করার পর আগের বছরের চেয়ে কর-পরবর্তী মুনাফা সামান্য বেড়েছে। চায়ের বিক্রয়মূল্য আগের চেয়ে কমায় টার্নওভার কমেছে বলে জানিয়েছেন কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

এদিকে টার্নওভার কমার প্রভাব পড়েছে কোম্পানির শেয়ারদরে। চলতি মাসের শুরু থেকে কোম্পানিটির শেয়ারদর কমছে। গতকাল কোম্পানির শেয়ার সর্বশেষ ৬১২ টাকায় বেচাকেনা হয়েছে। গত ডিসেম্বরের শুরুতে কোম্পানির শেয়ার ৬৪৫ টাকা ১০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে। গত বছর জানুয়ারি মাসে কোম্পানির শেয়ার সর্বোচ্চ ৮৬৭ টাকা ৯০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে। এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানির শেয়ারদর কমেছে ২৫৫ টাকা বা প্রায় ৪২ শতাংশ।

কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, কোম্পানির চায়ের দাম আগের বছরের চেয়ে কমেছে। এর প্রভাব পড়েছে কোম্পানির টার্নওভারে। আর এতে কোম্পানির শেয়ারদরেও বেশ নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে মনে করছেন তারা।

ন্যাশনাল টি কোম্পানি লিমিটেডের উপ-মহাব্যবস্থাপক ও প্রধান অর্থ কর্মকর্তা মো. কেরামত আলী শেয়ার বিজকে বলেন, আমাদের চা নিলামে বিক্রি করা হয়। আর সে কাজটি নির্ধারিত ব্রোকারদের মাধ্যমে হয়ে থাকে। চায়ের দর কমে যাওয়ায় টার্নওভারে এর প্রভাব পড়েছে। তবে বর্তমান সময়ে চায়ের দাম সামান্য বেড়েছে, এতে ভবিষ্যতে টার্নওভারে কিছুটা ইতিবাচক প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যদিকে ব্যবস্থাপনা খরচ বাড়ায় প্রশাসনিক ব্যয় বেড়েছে বলে জানান তিনি।

কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আরও জানান, স্থানীয় বাজারে চা বেচাকেনার জন্য কোম্পানির কোনো নিজস্ব ডিলার নেই। এতেও চায়ের দর পাওয়া যাচ্ছে না। সেইসঙ্গে দেশের বাজারে টি ব্যাগের চায়ের চাহিদা অর্ধেকের বেশি। কিন্তু ন্যাশানাল টি কোম্পানির চায়ের বিপণন করা হয় খোলা, তাই চাহিদার বাজার ধরতে পারছে না প্রতিষ্ঠানটি। তবে কোম্পানির চা যাতে টি ব্যাগে করে বাজারে বিপণন করা যায়, সেজন্য একটি কমিটি করেছে টি বোর্ড। আর চা টি ব্যাগে বিপণন করতে পারলে আয় ইতিবাচক ধারায় ফিরবে বলে মনে করছেন তারা।

সর্বশেষ প্রকাশিত প্রথম প্রান্তিকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে কোম্পানির টার্নওভার হয়েছে ৩৬ কোটি ৪১ লাখ টাকা, এ সময় প্রশাসনিক ব্যয় দাঁড়িয়েছে ছয় কোটি ৬১ লাখ টাকায়। এছাড়া আলোচিত সময় কোম্পানির কর-পূর্ববর্তী মুনাফা হয়েছে ৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকা এবং কর-পরবর্তী মুনাফা দাঁড়িয়েছে ১০ কোটি ১০ লাখ টাকা। আগের বছর একই সময়ে কোম্পানিটির টার্নওভার দাঁড়িয়েছিল ৪১ কোটি দুই লাখ টাকা এবং প্রশাসনিক ব্যয় হয়েছিল তিন কোটি ২১ লাখ টাকা। আলোচিত সময়ে কোম্পানির কর-পূর্ববর্তী মুনাফা দাঁড়িয়েছে ১০ কোটি ১১ লাখ টাকা এবং কর-পরবর্তী মুনাফা হয়েছে ১০ কোটি এক লাখ টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে টার্নওভার কমছে চার কোটি টাকা, প্রশাসনিক ব্যয় বেড়েছে তিন কোটি টাকার বেশি এবং কর-পরবর্তী মুনাফা বেড়েছে মাত্র ৯ লাখ টাকা।

কোম্পানিটি ২০১৭ সালের জুনে সমাপ্ত হিসাববছরে শেয়ারহোল্ডারদের ১৮ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছে। এর প্রকৃত মুনাফার হার দাঁড়িয়েছে শূন্য দশমিক ৩১ শতাংশ।

পুঁজিবাজারে ১৯৭৯ সালে তালিকাভুক্ত হওয়া প্রতিষ্ঠানটির অনুমোদিত মূলধন ২৫ কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ছয় কোটি ৬০ লাখ টাকা। কোম্পানির শেয়ারসংখ্যা ৬৬ লাখ। এর মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে ৪৮ দশমিক ৪১ শতাংশ, সরকারের কাছে চার দশমিক ৩৩ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ৯ দশমিক ৩৭ শতাংশ, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ৩৭ দশমিক ৮৯ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।