টিকাটুলিতে কৃষকের বাজার

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কৃষির গুরুত্ব অপরিসীম। কৃষিপ্রধান দেশ হলেও কৃষকরাই এদেশে সবচেয়ে অবহেলিত। বর্তমান বাজার ব্যবস্থায় মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রভাবের কারণে কৃষকরা খুবই নি¤œমূল্যে পণ্য বিক্রি করেন। অথচ ভোক্তারা পণ্যটি কয়েকগুণ বেশি দামে খুচরা বাজার থেকে কেনেন। কয়েকটি হাত ঘোরার ফলে অনেকটা সময় ব্যয় হয়। এ সময় পণ্য তাজা রাখতে গিয়ে প্রচুর রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করা হয়, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। ভোক্তার জন্য নিরাপদ খাদ্য ও কৃষকের জন্য পণ্যের সঠিক মূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিতে কৃষকের বাজার একটি সময়োপযোগী উদ্যোগ।

নেদারল্যান্ডস সরকারের সহায়তায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্টের সম্মিলিত উদ্যোগে গতকাল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩৯নং ওয়ার্ডে টিকাটুলিতে কৃষকের বাজারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথা বলেন। এলাকাবাসীর জন্য স্বাস্থ্যকর ও নিরাপদ খাদ্যের জোগান দিতে প্রতি শুক্রবার সকাল ৭টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত সাভারের তেঁতুলঝোড়া থেকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কর্তৃক যাচাইকৃত ১০ নিরাপদ চাষি তাদের উৎপাদিত সবজি ও ফলমূল এ বাজারে বিক্রি করবেন।

কৃষকের বাজারটি উদ্বোধন করেন আয়োজনের প্রধান অতিথি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩৯নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রোকন উদ্দিন আহমেদ। ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের সিনিয়র প্রজেক্ট ম্যানেজার জিয়াউর রহমানের সঞ্চালনায় আয়োজনে বক্তব্য দেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অঞ্চল-৫-এর নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম জয়, সাভার উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন ভূইয়া, এফএও বাংলাদেশের ঢাকা ফুড সিস্টেম প্রজেক্টের ফুড সিস্টেম পলিসি ইকোনমিস্ট পেদ্রো আন্দ্রেস গার্জন ডেলভো, ডাব্লিউবিবি ট্রস্টের গাউস পিয়ারী প্রমুখ।

কাউন্সিলর রোকন উদ্দিন আহমেদ বলেন, গত ৫০ বছরে দেশে খাদ্য উৎপাদন বাড়লেও নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। উৎপাদন থেকে বাজারজাতকরণ পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে রাসায়নিক দ্রব্য মেশানো হয়। কৃষকের বাজারে সরাসরি কৃষক তার উৎপাদিত নিরাপদ খাদ্য ভোক্তার কাছে পৌঁছে দেবেন। কার্যক্রমটি আরও বিস্তৃত আকারে গ্রহণ করার মাধ্যমে এলাকাবাসীর নিরাপদ খাদ্যের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। বাজারটি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য সব সহযোগিতা কাউন্সিলর কার্যালয়ের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হবে।

নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম জয় বলেন, যেকোনো বাজার আয়োজিত হলে বর্জ্য তৈরি হয়। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিক না হলে এলাকাবাসী ও পথচারীরা অসুবিধার শিকার হবেন। কার্যক্রমটি টেকসই করার লক্ষ্যে কৃষকের বাজারগুলোকে সিটি করপোরেশনের বর্তমান বাজারের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা যেতে পারে।

সাভার উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বছরব্যাপী নিরাপদ সবজি উৎপাদন নিশ্চিতের লক্ষ্যে চাষিদের উত্তম কৃষি চর্চা, জৈব কৃষিতে প্রশিক্ষণ ও সহায়ক উপকরণ প্রদানের পাশাপাশি নিয়মিত মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের কার্যক্রম মনিটরিং করে থাকে। কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্যের লাভ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে এখনও পিছিয়ে আছে। কৃষকের বাজারের মতো কার্যক্রমের মাধ্যমে পণ্যের লাভ পেলে তারা নিরাপদ চাষে আরও আগ্রহী হবে। কার্যক্রমটি টেকসই করার লক্ষ্যে কৃষকের বাজারগুলোকে সিটি করপোরেশনের বর্তমান বাজারের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা যেতে পারে।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার ঢাকা ফুড সিস্টেম প্রজেক্টের ফুড সিস্টেম পলিসি ইকোনমিস্ট পেদ্রো আন্দ্রেস গার্জন ডেলভো বলেন, নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতের লক্ষ্যে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা বিশ্বব্যাপী কার্যক্রম পরিচালনা করছে। কৃষকের বাজার কার্যক্রমের উদ্দেশ্য হলো ভোক্তাদের জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা এবং কৃষকদের জীবনমান উন্নয়ন। ঢাকা মহানগরে ১৬টি কৃষকের বাজার স্থাপিত হচ্ছে। টিকাটুলির কৃষকের বাজারে ১০ কৃষক তাদের উৎপাদিত নিরাপদ সবজি বিক্রি করবেন। বাজারটি এলাকাবাসীর কাছে গ্রহণযোগ্য রাখতে হলে নিরাপদ খাদ্যের সহজপ্রাপ্যতা নিশ্চিত করা আবশ্যক।

ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের পরিচালক গাউস পিয়ারী বলেন, অনিরাপদ খাদ্য গ্রহণের কারণে আমাদের শরীরে বিভিন্ন রোগব্যাধি বাসা বাঁধে। নিরাপদ খাদ্য গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি জরুরি। বর্তমানে কৃষকদের প্রশিক্ষণ, বীজ, জৈবসারসহ বিভিন্ন সহায়ক উপকরণ প্রদান করা হচ্ছে। বিপণন ও ব্যবসার ক্ষেত্রে কৃষকদের দুর্বলতা রয়েছে। এক্ষেত্রে কৃষকের বাজারের মতো কার্যক্রম ও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদান করা হলে কৃষকরা উপকৃত হবেন।