গতকালের পর
অনেকে মনে করেন, করোনার টিকা নিলে এর উপসর্গ খুব মারাত্মক হতে পারে। বিষয়টা আসলে তেমন নয়। বুঝতে হবে টিকায় কী থাকে?
কভিড ভ্যাকসিনে থাকে মৃত করোনাভাইরাস, জীবিত কিন্তু দুর্বল করা করোনাভাইরাস, করোনাভাইরাসের স্পাইক প্রোটিন, নিউক্লিউক্যাপসিড প্রোটিনের অংশ অথবা ভাইরাসের জেনেটিক উপাদান। এদের কোনো একটি শরীরে ঢোকার পর রোগ সৃষ্টি করার ক্ষমতা নেই।
টিকা নিয়ে ভ্রান্তি নয়: কোন দেশের টিকা ভালো আর কোন দেশেরটা খারাপ, এ ধরনের কথা বলা ঠিক নয়। টিকা উৎপাদন থেকে শুরু করে বাজারে আসার অনুমতি সবই সংশ্লিষ্ট দেশের সরকার দিয়ে থাকে। ওই টিকা অন্য দেশে ব্যবহার করার আগে ওই দেশের সরকার দেখে এটার কার্যকারিতা, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, উন্নত বিশ্ব তথা ইইউ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রভৃতির অনুমোদন আছে কি না।
সবচেয়ে বড় কথা হলো, রাষ্ট্রীয় নিশ্চয়তা ছাড়া কোনো বড় কোম্পানির পক্ষেও টিকা উৎপাদনে যাওয়ার মতো জটিল ও সময়সাপেক্ষ এমন প্রকল্পের চিন্তা করা সম্ভব নয়।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: সব টিকারই কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে। এর কারণে হয়তো মানুষের অনীহা কাজ করে। কিন্তু টিকা না দিলে কভিডে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এর চেয়ে কি টিকা নেয়া উত্তম নয়? তবে টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে মৃত্যুর আশঙ্কা কিন্তু নেই।
কেন টিকা নেবেন? টিকা হলো এই গ্রহে সংক্রামক রোগ প্রতিহত করার সহজতম, সাশ্রয়ী ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি। জনসংখ্যার বড় অংশ টিকা নিলে রোগের বিস্তার প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়। ফলে যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, অতিশয় দুর্বল তারাও রোগের কবল থেকে রক্ষা পায়। এছাড়া
ক. টিকা গ্রহণ মানুষকে কোনো না কোনো পর্যায়ের সুরক্ষা দেবেই; খ. টিকা নিয়ে কেবল গ্রহীতাই সুরক্ষিত হচ্ছেন না, বরং অন্যকেও সুরক্ষা দিচ্ছেন; গ. কভিড-১৯ একটি ছোঁয়াচে সংক্রামক রোগ। ৮০ শতাংশ লোকের টিকা দিয়েই হার্ড ইমিউনিটি তৈরি করা সম্ভব। তখন সমাজের যারা দুর্বল, সংগত কারণেই টিকা নিতে পারেনি; তারাও টিকা ছাড়াই সুরক্ষা পাবে; ঘ. যত দ্রুত গণটিকা, তত দ্রুত স্বাভাবিক জীবনের নিশ্চয়তা; ঙ. টিকা গ্রহণে যত দেরি করবেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণের হুমকিতে তত বেশি পড়বেন; চ. টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অল্প ও সাময়িক। কিন্তু টিকা না দিলে মৃত্যুঝুঁকি অধিক; ছ. সামান্য অ্যালার্জি বা সর্দি হলে টিকা গ্রহণে নেই কোনো বিপত্তি; জ. সন্তানসম্ভবা, দুগ্ধপোষ্য শিশুসহ মা ও আবালবৃদ্ধবনিতা চিকিৎসকের পরামর্শে টিকা নিতে পারেন।
ডা. মো. তৌহিদ হোসাইন
সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান
হিস্টোপ্যাথলজি বিভাগ, এনআইকেডিইউ, ঢাকা