নিজস্ব প্রতিবেদক : লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার যকৃতে ‘ট্র্যান্সজাগুলার ইন্ট্রাহেপেটিক পোরটোসিসটেমিক শান্ট (টিপস)’ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দুই রক্তনালির মধ্যে একটি নতুন সংযোগ তৈরি করে দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা তিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের নেতৃত্বে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে আড়াই ঘণ্টা সময় লাগে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সফলভাবে কাজটি শেষ হওয়ার কথা জানিয়ে বলেন, ‘এখন তাকে আইসিইউতে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।’
ওই চিকিৎসক বলেন, ‘টিপস’ করার ফলে খালেদা জিয়ার লিভারে রক্তক্ষরণ এবং পেটে পানি জমার উপশম হবে। বিএনপি চেয়ারপারসনের লিভার প্রতিস্থাপন প্রয়োজন, এটা তার আগের ধাপ।
মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে শুক্রবার খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরিস্থিতি আনুষ্ঠানিকভাবে গণমাধ্যমকে জানানো হতে পারে বলে জানান এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।
বিএনপি চেয়ারপারসন বসুন্ধরার ওই হাসপাতালে ভর্তি আছেন গত ৯ আগস্ট থেকে। গত আড়াই মাসে তাকে কয়েক দফা তাকে সিসিইউতে নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে ১৯ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ডের তত্ত্বাবধায়নে তার চিকিৎসা চলছে।
মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে গত ৯ অক্টোবর এক সংবাদ সম্মেলনে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এফএম সিদ্দিকী বলেছিলেন, ‘দেশে উনার চিকিৎসার সব অপশন শেষ হয়ে এসেছে। জরুরিভাবে তার টিপস দরকার। কিন্তু এই টিপস বাংলাদেশে হয় না।’
টিপস করার পর খালেদা জিয়ার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে কোনো উন্নত মেডিকেল সেন্টারে নেয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা।
কিন্তু দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া এখন সরকারের নির্বাহী আদেশে সাময়িক মুক্ত আছেন। তাকে বিদেশে নেয়ার জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে একাধিকবার আবেদন করা হলেও সরকারের সায় মেলেনি। সে কারণে পরে বিদেশ থেকে চিকিৎসক আনার সিদ্ধান্ত হয়।
সেই ধারাবাহিকতায় যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস ইউনিভার্সিটির স্কুল অব মেডিসিনের লিভার ও কিডনি প্রতিস্থাপন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক হামিদ আহমাদ আবদুর রব, ইন্টারভেনশনাল অনকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ক্রিসটোস স্যাভাস জর্জিয়াডেস এবং হেপাটোলজির অধ্যাপক জেমস পিটার হ্যামিলটন বুধবার রাতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ঢাকায় পৌঁছান। তাদের আগে যুক্তরাজ্য থেকে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত হƒদরোগ বিশেষজ্ঞ রফিকুল আলম গত বুধবার রাতে ঢাকায় আসেন।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা তিন চিকিৎসক বৃহস্পতিবার সকালে এভারকেয়ার হাসপাতালে গিয়ে খালেদা জিয়াকে দেখেন এবং মেডিকেল বোর্ডের সঙ্গে বৈঠক করেন। তখনই জরুরি ভিত্তিতে ‘টিপস’ করার সিদ্ধান্ত হয়।
শুক্রবার দুপুরে খালেদা জিয়াকে দেখতে হাসপাতালে যান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বিদেশি চিকিৎসকদের সঙ্গে কথাও বলেন।
৭৮ বয়সী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস ও হৃদরোগেও ভুগছেন।




