ইসমাইল আলী: পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বিবিএ)। সেতুটি থেকে টোল আদায় এবং রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার দায়িত্বও এ সংস্থাটির। তবে এ আয়ের বড় অংশই নিয়ে যাবে অর্থ মন্ত্রণালয়। ১৫ শতাংশ ভ্যাটের পাশাপাশি ২৫ শতাংশ আয়কর কেটে নেবে তারা। আবার সেতু নির্মাণে প্রদত্ত ঋণও সুদসহ আদায় করবে অর্থ মন্ত্রণালয়। সবমিলিয়ে ৩৫ বছরে সেতুটির আয়ের ৬২ দশমিক ৪২ শতাংশই যাবে তাদের পকেটে।
এদিকে সেতুটিতে প্রতি বছর বাড়বে গাড়ি চলাচল। এতে টোল আদায়ও বাড়বে। তাই প্রতি বছর আদায়কৃত টোলের সাড়ে সাত শতাংশ হারে সেতুটির রক্ষণাবেক্ষণে ব্যয় হবে। তবে ১০ বছর পরপর সেতুটির বড় ধরনের সংস্কার করতে হবে। এতে উদ্বোধনের পর ১১, ২১ ও ৩১তম বছরে সেতুর রক্ষণাবেক্ষণে বড় অঙ্কের ব্যয় হবে। পাশাপাশি প্রতি দুই শতাংশ হারে অবচয় ধরা হয়েছে।
সব খরচ বাদ দিয়ে ৩৫ বছর পর পদ্মা সেতুর থেকে বিবিএ’র মুনাফা থাকবে টোল আয়ের ছয় শতাংশেরও কম। সংস্থাটির প্রক্ষেপণে এমন তথ্য উঠে এসেছে। ৩৫ বছরে পদ্মা সেতুর ঋণ পরিশোধ ও আয়-ব্যয় বিশ্লেষণ করে এ তথ্য তুলে ধরেছে বিবিএ।
এতে দেখা যায়, উদ্বোধনের পর টোল বাবদ ৩৫ বছর (২০২২-২৩ থেকে ২০৫৬-৫৭ অর্থবছর) পদ্মা সেতু থেকে বিবিএ’র টোল আদায় হবে এক লাখ এক হাজার ৩২৪ কোটি ১২ লাখ টাকা। এর মধ্যে প্রথম বছর অর্থাৎ ২০২২-২৩ অর্থবছর পদ্মা সেতু থেকে টোল আদায় হবে মাত্র ৫৪৩ কোটি ২০ লাখ টাকা। ২০২৬-২৭ অর্থবছরে তা হাজার কোটি টাকা অতিক্রম করবে।
উদ্বোধনের ১২তম বছরে (২০৩৩-৩৪ অর্থবছর) সেতুটি থেকে টোল আদায় দুই হাজার কোটি টাকা অতিক্রম করবে। ১৯তম বছরে (২০৪০-৪১ অর্থবছর) তা তিন হাজার কোটি টাকা এবং ২৮তম বছরে (২০৪৮-৪৯ অর্থবছর) চার হাজার কোটি টাকা অতিক্রম করবে। আর উদ্বোধনের ৩৩তম বছরে তথা ২০৫৪-৫৫ অর্থবছরে সেতুটি থেকে টোল আদায় বছরে পাঁচ হাজার কোটি টাকা অতিক্রম করবে।
যদিও উদ্বোধনের ১৮ বছরে (২০৩৯-৪০ অর্থবছর) গিয়ে পদ্মা সেতু থেকে টোল আদায় দাঁড়াবে ৩২ হাজার ৬৯ কোটি ১৭ লাখ টাকা। অর্থাৎ নির্মাণব্যয় উঠে যাবে। তবে নানা খরচের চাপে বিবিএ’র মুনাফা থাকবে খুবই সামান্য।
তথ্যমতে, পদ্মা সেতু নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে ৩০০ কোটি টাকা অনুদান পেয়েছে বিবিএ। বাকি ২৯ হাজার ৮৯৩ কোটি ৯৮ লাখ টাকা ঋণ হিসেবে দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এক শতাংশ সুদসহ ৩৫ বছরে এ ঋণ পরিশোধ করতে হবে, যার পরিমাণ ৩৬ হাজার ৪৪০ কোটি ৬৩ লাখ টাকা।
তবে ঋণের সুদ পরিশোধের আগেই আদায়কৃত টোল থেকে ৩৫ বছরে ১৩ হাজার ২১৬ কোটি ১৯ লাখ টাকা ভ্যাট কেটে রাখবে অর্থ মন্ত্রণালয়। আর আয়কর হিসেবে নেবে আরও ১৩ হাজার ৫৮৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে পদ্মা সেতু থেকে ৩৫ বছরে অর্থ মন্ত্রণালয়ের পকেটে ঢুকবে ৬৩ হাজার ২৪৫ কোটি ৬৮ লাখ টাকা।

সেতুটির রক্ষণাবেক্ষণে ৩৫ বছরে বিবিএ’র সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ হাজার ৫৯৯ কোটি ৩১ লাখ টাকা। আর অবচয় ধরা হয়েছে ২১ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। সব খরচ বাদ দিয়ে ৩৫ বছর পর পদ্মা সেতু থেকে বিবিএ’র মুনাফা থাকবে মাত্র পাঁচ হাজার ৯৮৯ কোটি ১৩ লাখ টাকা।
প্রসঙ্গত, পদ্মা সেতুতে বাইক পারাপারে টোল দিতে হবে ১০০ টাকা। প্রাইভেট কার ও জিপে টোল দিতে হবে ৭৫০ টাকা, পিকআপে এক হাজার ২০০ টাকা এবং মাইক্রোবাসে এক হাজার ৩০০ টাকা। এছাড়া ছোট বাসে (৩১ আসনের কম) টোল এক হাজার ৪০০ টাকা, মাঝারি বাসে (৩২ আসন বা তার বেশি) দুই হাজার টাকা এবং বড় বাসে (তিন এক্সেল) দুই হাজার ৪০০ টাকা।
পণ্যবাহী যান চলাচলের জন্য ছোট ট্রাকে (পাঁচ টনের কম) টোল এক হাজার ৬০০ টাকা, মাঝারি ট্রাকে (পাঁচ থেকে আট টন) দুই হাজার ১০০ টাকা এবং বড় ট্রাকে (আট টনের বেশি) দুই হাজার ৮০০ টাকা। এছাড়া পদ্মা সেতুতে তিন এক্সেলের ট্রাকে টোল দিতে হবে পাঁচ হাজার ৫০০ টাকা। এর বাইরে পণ্যবাহী চার এক্সেলের ট্রেইলারে টোল ছয় হাজার টাকা। আর চার এক্সেলের বেশি হলে ছয় হাজার টাকার সঙ্গে পরবর্তী প্রতি এক্সেলের জন্য দেড় হাজার টাকা করে অতিরিক্ত টোল যোগ হবে। আর ১৫ বছর পরপর সেতুটির টোলহার বাড়ানো হবে বলে ধরা হয়েছে।