Print Date & Time : 25 July 2025 Friday 9:29 am

ট্যানারি মালিকদের কি বোধোদয় হবে না?

প্রত্যেক ঈদুল আজহায় পুরো বছরের প্রায় ৬০ শতাংশ চামড়া সংগ্রহ হয়ে থাকে। এ সময় সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় দামও কম থাকে। তবে কয়েক বছরে কাঁচা চামড়ার দাম ৪৫ শতাংশ কমলেও চামড়াজাত পণ্যের দাম বেড়েছে ৩৫ শতাংশ।
যতদূর জানা যায়, আন্তর্জাতিক বাজারে যে হারে চামড়ার দাম কমেছে, বাংলাদেশে কমেছে তার চেয়ে বেশি হারে। অন্যদিকে চামড়ার দাম কমার সুফল পাচ্ছেন না চামড়াজাত পণ্যের ক্রেতারা। এটি উদ্বেগজনক।
চামড়ার দাম বাড়লে এর প্রধান সুবিধাভোগী হয় সমাজের দুস্থ ও অসহায় মানুষ। চামড়া বিক্রির টাকা কোরবানিদাতারা দুস্থ-এতিমদের দান করেন। প্রতিবছরই কম দামে চামড়া কিনে বড় মুনাফা করছেন ট্যানারি মালিকরা। চামড়ার দাম কমলে সুফল পাওয়ার কথা চামড়াজাত পণ্যের ক্রেতারাও। কিন্তু এর দাম অব্যাহতভাবে কমলেও চামড়াজাত পণ্যের দাম কমছে না। ব্যবহারকারীদের বেশি দামেই কিনতে হচ্ছে জুতো, বেল্ট, ব্যাগ প্রভৃতি।
চামড়ার দাম কম হওয়ায় দুস্থরা বঞ্চিত হচ্ছেন, ফতুর হচ্ছেন মৌসুমি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। এদিকে সুফল পাচ্ছেন না ভোক্তারা। কয়েক বছর ধরে আড়তদার-ট্যানারি মালিকরা সংঘবদ্ধ হয়ে দামে কারসাজি করেন। এর জোর প্রতিবাদ করছেন না তারা।
আমাদের আয় বেড়েছে, রুচিও বদলেছে। দেশের ১৬ কোটির মধ্যে অন্তত ১০ কোটি মানুষই চামড়ার জুতো ব্যবহার করে এখন। অনেকেরই কয়েক জোড়া জুতো রয়েছে। চামড়াজাত পণ্যের স্থানীয় বাজার মোটেও ছোট নয়। বর্তমান সময় পাড়া-মহল্লায় অর্ডার দিয়ে ব্র্যান্ডের জুতোর ৭৫ শতাংশ কম দামে চামড়ার জুতো বানানো যায়। এগুলো টেকসইও।
কবছর ধরেই দেশে চামড়ার দাম কমছে। এবার তা ছিল সর্বনিম্ন পর্যায়ে। পণ্যটির দাম কমার সুফল ব্যবসায়ীরা কাজে লাগিয়েছেন তাও নয়। গত বছর রফতানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি চামড়াশিল্প। ব্যবসায়ীরা রফতানিতে ব্যর্থ হবেন, আবার স্থানীয় বিশাল বাজার উপেক্ষা করবেন এটা কাম্য নয়। চামড়া কেনার জন্য নেওয়া ব্যাংক ঋণও সময়মতো পরিশোধ করেন না তারা।
চামড়াশিল্পে দেশের এক বৃহৎ জনগোষ্ঠী জড়িত। গবাদিপশুর খামার, পশু মোটাতাজাকরণ, গো-খাদ্য ব্যবসা প্রভৃতির মাধ্যমে স্বাবলম্বী হচ্ছে প্রান্তিক আয়ের মানুষ। এবার হাট ছাড়াও সরাসরি খামার থেকে অনলাইনে অনেক গরু বিক্রি হয়েছে। ক্রেতার আগ্রহ ছিল দেশি গরুতে। স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে ওঠায় গরু পাচার নিয়ে প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার শঙ্কাও কমেছে। কিন্তু চামড়াজাত পণ্যের দামে এর সুফল পাচ্ছেন না ক্রেতারা।
চামড়াশিল্প স্থানান্তর প্রক্রিয়ার ধীরগতিতে এ শিল্প সংকটে আছে, সন্দেহ নেই। এখানে কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার চালু না করেই ট্যানারি চালু করায় বিদেশি ক্রেতারা অসন্তুষ্ট। এদিকে শিল্পমালিকরা দেশীয় ক্রেতাদেরও সন্তুষ্ট করতে পারছেন না। প্রতিবেশী দেশে যাওয়া বাংলাদেশিরা আর কিছু না কিনলেও জুতো-ব্যাগ প্রভৃতি কিনে আনেন, দাম কম বলেই। আমাদের সংবাদপত্রে সেসব প্রতিষ্ঠানের পণ্যের দাম উল্লেখসহ বিজ্ঞাপনও ছাপা হয়। তাতেও আগ্রহী হন অনেকে। দাম কমাতে পারলে দেশীয় চামড়াজাত পণ্য ব্যবহারেও ভোক্তার আগ্রহ বাড়ত। এতে ব্যবসায়ীরা লাভবানই হতেন।
চামড়াশিল্পকে টিকিয়ে রাখতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। চামড়াজাত পণ্যের দাম ঠিক রাখতে কাজ করতে পারে সংশ্লিষ্ট কমিশন; এ বাজারে নজরদারি করতে পারে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। চামড়ার দাম কমলেও বেশি দামে চামড়াজাত পণ্য বিক্রির কারণ খুঁঁজতে হবে। কোনো উৎপাদন, বাজারজাত খরচ বাড়লে সেটি স্পষ্ট করতে হবে চামড়াজাত পণ্য প্রস্তুতকারক ও বাজারজাতকারীদের। সে ধরনের কিছু হলে অবশ্যই সমাধানের ব্যবস্থা নিতে হবে। তবে কোনোভাবেই কাঁচা চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের দামে বড় ব্যবধান কাম্য নয়। ব্যবসায়ীরা আর কতভাবে মানুষকে ঠকাবেন! চামড়া কিনবেন না, কম দামে কিনবেন, ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করবেন না; চামড়া বিক্রেতাদের বকেয়া পাওনা বছরের পর বছর ঝুলিয়ে রাখবেন এ কেমন ব্যবসা! অর্থ উপার্জনের এমন উপায় নিশ্চয়ই বৈধ ও আইনসংগত নয়। এ বিষয়ে ট্যানারি মালিকদের কি বোধোদয় হবে না?

মেহেদী হাসান সোহেল
বাঘঘোনা, চট্টগ্রাম