হাসানুজ্জামান পিয়াস: সদ্যসমাপ্ত হিসাববছরের আর্থিক প্রতিবেদনে অসঙ্গতি রয়েছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত মুন্নু ফেব্রিকস লিমিটেডের। অসঙ্গতির ফলে কোম্পানির ব্যবসায়িক কর্মক্ষমতার প্রকৃত চিত্র প্রতিবেদনে ফুটে ওঠেনি। তাই এমন প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ফলে ঠকছেন বিনিয়োগকারীরা।
জানা গেছে, বস্ত্র খাতের এই কোম্পানিটি আন্তর্জাতিক হিসাবমান (আইএএস)-১২ এর ১৫ ও ২৪ অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন করে ২০২১ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাববছরের আর্থিক প্রতিবেদনে ডেফারড ট্যাক্স ইনকাম বা এক্সপেন্স (বিলম্বিত কর আয় বা ব্যয়) এর হিসাব দেখায়নি, এতে কোম্পানির প্রকৃত অবস্থা এবং কর্মক্ষমতা সঠিকভাবে প্রতিফলিত হয়নি। এমতাবস্থায় বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ, ঋণ এবং অন্যান্য অর্থনৈতিক বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না কিংবা এ প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নিলেও ঠকতে পারেন বিনিয়োগকারীরা।
আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণের সময় নিরীক্ষকের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, আন্তর্জাতিক হিসাবমান লঙ্ঘন করায় নিরীক্ষকও আপত্তি জানিয়েছে।
একইসঙ্গে দেখা গেছে, কোম্পানিটি তার আর্থিক প্রতিবেদনে প্রায় ১৬ লাখ টাকা ওয়ার্কার্স প্রফিট পার্টিসিপেন্ট ফান্ড এবং ওয়ার্কার্স ওয়েলফেয়ার ফান্ড হিসেবে দায় দেখানো হয়েছে। কিন্তু ১৬ লাখ টাকার দায়ের মধ্যে প্রায় ১১ লাখ টাকা আগের বছরের দায় হলেও তা আলোচিত ফান্ডের অ্যাকাউন্টে হস্তান্তর করা হয়নি, যা স্পষ্ট শ্রম আইন লঙ্ঘন।
শ্রম আইন-২০০৬-এর ২৩৪ (বি) ধারা অনুসারে নির্দিষ্ট হিসাববছরের মুনাফার একটা অংশ শ্রমিকদের কল্যাণ তহবিলে ওই সমাপ্ত হিসাববছর সমাপ্তির ৯ মাসের মধ্যে কল্যাণ তহবিলের অ্যাকাউন্টে হস্তান্তর করতে হয়। অর্থাৎ ২০২০ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাববছর সমাপ্তির ৯ মাসের মধ্যে ১১ লাখ টাকা ফান্ড অ্যাকাউন্টে হস্তান্তর করার কথা থাকলেও মুন্নু ফেব্রিকস সেটি করেনি। তার আগের হিসাববছরের অর্থও হস্তান্তর হয়নি। এভাবে বছরের পর বছর কোম্পানির মুনাফার অংশ শ্রমিকদের ফান্ডে দেয়া হচ্ছে না। এছাড়া কোম্পানিটি শ্রম আইনের ২৪০ (২) ধারা অনুযায়ী উক্ত তহবিলের অর্থ ব্যবহারের জন্য সুদ বাবদ কোনো প্রভিশনও রাখেনি। নিরীক্ষকের প্রতিবেদনে নিরীক্ষক আরও জানিয়েছে যে, এর আগের বছরেও নিরীক্ষক আপত্তি জানিয়েছিল কিন্তু কোম্পানিটি কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোম্পানি সচিব বিনয় পল এসিএস বলেন, ২০০৯ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত কারখানা কার্যক্রম পুরোপুরি চালু না থাকায় আয়ও তেমন হয়নি এজন্য ডেফারড ট্যাক্সও আর্থিক প্রতিবেদনে স্বীকৃতি দেয়া হয়নি। তবে এখন কারখানা চালু হয়েছে, আগামীতে এটি হিসাব করে স্বীকৃতি দেয়া হবে।
লভ্যাংশের অংশ শ্রমিকদের ফান্ড অ্যাকাউন্টে হস্তান্তর না হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, একদিকে কারখানা বন্ধ ছিল, এরপর কভিডের প্রভাব ছিল এবং শ্রমিকদের মুনাফার অংশের পরিমাণটা তুলনামূলক কম হওয়ায় এখনও হস্তান্তর হয়নি। যেহেতু এখন কারখানা চালু রয়েছে তাই আগামীতে এটি প্রদান করা হবে।
উল্লেখ্য, গত ১৩ জুন পুঁজিবাজারের ওটিসি (ওভার দ্য কাউন্টার) থেকে মূল মার্কেটে ফেরা মুন্নু ফেব্রিকস ১৯৯৬ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়ে বর্তমানে ‘জেড’ ক্যাটেগরিতে লেনদেন হচ্ছে। কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ৫০০ কোটি টাকা আর পরিশোধিত মূলধন ১১৫ কোটি টাকা। সম্প্রতি কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ ২০২১ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাববছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে বিনিয়োগকারীদের কোনো লভ্যাংশ না দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। আলোচিত সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ছয় পয়সা। আর ৩০ জুন ২০২১ তারিখে কোম্পানিটির নিট সম্পদমূল্য (এনএভি) দাঁড়িয়েছে ২৭ টাকা ৩৭ পয়সা।
এদিকে চলতি হিসাববছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর, ২০২১) কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে দুই পয়সা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল এক পয়সা। ২০২১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর তারিখে শেয়ারপ্রতি নেট সম্পদমূল্য (এনএভি) দাঁড়িয়েছে ২৭ টাকা ৩৮ পয়সা। আর প্রথম প্রান্তিকে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি নগদ অর্থপ্রবাহ (এনওসিএফপিএস) হয়েছে ২৮ পয়সা (লোকসান)।
সর্বশেষ কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ারদর শূন্য দশমিক ৫৫ শতাংশ বা ১০ পয়সা বেড়ে প্রতিটি শেয়ার সর্বশেষ ১৮ টাকা ৩০ পয়সায় হাতবদল হয়, যার সমাপনী দর ছিল ১৮ টাকা ২০ পয়সা। দিনজুড়ে ৬৯ হাজার ২৫৫টি শেয়ার ১১২ বার হাতবদল হয়, যার বাজারদর ১২ লাখ ৬০ হাজার টাকা। আর গত এক বছরের মধ্যে কোম্পানিটির শেয়ারদর ১১ টাকা থেকে ৩৭ টাকা ২০ পয়সার মধ্যে ওঠানামা করে।