প্রতিনিধি, ঠাকুরগাঁও : বসন্ত এসেছে ধরায়।চারদিকে হু হু করে বইছে বসন্তের ফালগুনি হাওয়া। সেই সঙ্গে যোগ হয়েছে আমের মুকুলের স্বর্ণালী শোভা।অপরুপ সৌন্দর্য ও ঘ্রানে ঠাকুরগাওঁয়ের বিভিন্ন গ্রামে গঞ্জে এখন আম গাছে চোখ মেলে যেন উঁকি দিচ্ছে কচি আমের মুকুল ।পাতার ফাঁকে ফাঁকে শোনা যায় গুন গুন শব্দে ভ্রমরের গুঞ্জন। কৃষিকাজে পরিচিত জেলাগুলোর অন্যতম ঠাকুরগাঁও ।ঠাকুরগাঁয়ের প্রতিটি উপজেলা জুরে এখন শোভা পাচ্ছে আমের মুকুল ।জেলার প্রতিটি উপজেলায় ও প্রতিটি বসতবারি সহ বাগানে বাগানে এখন মৌসুমি ফল আমের মুকুলে ছেয়ে গেছে।এ জেলায় বড় ধরনের কোন শিলা বৃষ্টি বা অন্য প্রাকৃতিক দূর্যোগ দেখা না দিলে আমের ভালো ফলন আশা করেন আম চাষিরা।
ঠাকুরগাঁও এক সময়ের ধান,গম,আখ,ও পাটের জেলা হিসেবে পরিচিত হলেও বারবার কৃষক ধান ও গমে লোকসানের মুখে পড়ে এ জেলায় বর্তমানে অনেক উচুঁ , নিচু আবাদি জমিতে আম ও বিভিন্ন ফল বাগান গড়ে উঠেছে।এমন চিত্র দেখতে পাওয়া যায় ঠাকুরগাঁও- –পীরগঞ্জ মহা সড়কের রাস্তা দুপাশে ও ঠাকুরগাঁও সদরসহ বিভিন্ন বিভিন্ন উপজেলা গুলোতে।
জানা জায় যে,ঠাকুরগাঁওয়ের জেলায় ৫টি উপজেলায় এবার মোট আম বাগানের সংখ্যা ৪ হাজারটি এর বেশি ও জন্য জমি রয়েছে প্রায় দশ হাজার হেক্টর। গত ১০ বছরে বেড়েছে দ্বিগুন।সরে জমিনে গিয়ে দেখা যায় ,সদর উপজেলার বসতবাড়িসহ অনেকের বিভিন্ন জাতের বাগান রয়েছে।এসব বাগানের এবার প্রতিটি আম গাছে এবার প্রচুর আমের মুকুল এসেছে। তবে ঝরো হাওয়া,পর্যাপ্ত পরিচর্যা ও পোকার আক্রমনে আমের মুকুল নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ভেলাজান নয়াপাড়া গ্রামের আম বাগান মালিক মো ঃরুস্তম আলী মাস্টার জানান,শুধু ধান, গম, করে তেমন লাভ নেই। প্রায় দুই একরের বেশি জমিতে বারি-৪ জাতের আম গাছের বাগান করেছি। এই বাগানে কম বেশি ছয়শত এর বেশি আম গাছ রয়েছে। এই বারি -৪ জাতের আম গাছ এক টানা ২০-৩০ বছর ফল দিয়ে থাকে। এই বাগান করতে আমার খরচ হয়েছে প্রায় চার -থেকে পাঁচ লক্ষ টাকার মত।এই জাতের আম গাছ থেকে গাছ লাগানের পর দুই বছরের মধ্যে আম ধরে।গত কয়েক বছর আমার বাগানে আম ধরছে। গত বারের চেয়ে এবার বাগানে বেশি মুকুল এসেছে।এই জাতের আম দুই তিনটা আমের ওজন এক কেজি হয়।আম পাকে আশি^ন মাসের শেষ দিকে।তখন এই আম প্রতিকেজিতে বিক্রী হয় ২০০- ২৫০ টাকা।বিগত দরে বাগানের সাথে আলু ও শাক ,হলুদ,আদা সবজী আবাদ করছি।গত বছর সময়মত কীটনাশক ছিটিয়ে ও পরিচর্যা করে ভালো ফলন,দাম পেয়েছি এবারও তাই করব।
ঠাকুরগাঁও পীরগঞ্জ উপজেলার ভাবনাঞ্জ এলাকার আম বাগান মালিক জনাব মোঃ ফরহাদ হোসেন জানান ,আমার বাগানে আম ৩০০টির বেশি রয়েছে। আমার বাগানের বেশির আম গাছ সূর্যপুরি ও আ¤্ররূপালি।আম গাছে প্রচুর মুকুল এসেছে। ধান ও অন্যান্য ফসল থেকে আম ও লিচু বাগান করে লাভ বেশি এতে পরিশ্রম কম হয়।বাগানে আম একটু বড় হলে ব্যাবসায়ীদের কাছে বিক্রী করে দিই। গত বছর আমি এই বাগান থেকে পাঁচ লক্ষ টাকার মত লাভ করছি। তাছারা সূযপুরি ও আ¤্ররূপালি আম ও লিচু একটি জনপ্রিয় ও রসালো ফল।দেশে বিদেশে আমের খুবই চাহিদা রয়েছে। এতে আমার টেনশন কম থাকে।তাছারা আম বাগানের পাশাপাশি সাথী ফসল হিসেবে শাক সবজী আবাদ করা যায়।ঠাকুরগাঁয়ে বিভিন্ন জাতের আম যেমন বারি
৪,আ¤্ররুপালি,সূর্যপুরী,ল্যাংড়া,গোপালভোগ,আসিনিয়া,মোহনা,ফজলি,মিশ্রিভোগ সহ দেশি জাতের বিভিন্ন জাতের আমের মুকুলে ভরপুর বাগানগুলো।প্রতি মৌসুমে জেলায় আম বিক্রি করে লাভবান হয় অনেক চাষিও আম ব্যবসায়ীরা
ঠাকুরগাঁও পীরগঞ্জ উপজেলার চাষি জনাব সাইফুর রহমান বাদশাজানান ,শুধু ধান পাট আবাদ করে তেমন লাভ পাই না।তাই আম বাগান করছি। বাগানে কম বেশি তিনশর বেশি গাছ রয়েছে রয়েছে।অধিকাংশ গাছ আ¤্ররুপালি,সূর্যপুরী,ল্যাংড়া জাতের।আম গাছে এবার ভালো মুকল এসেছে।গত বছর সময়মত কীটনাশক ছিটিয়ে ও পরিচর্যা করে অনেক টাকা আয় করা সম্ভব হয়েছে। তিনি জানান, প্রতি বছরই তার বাগান থেকে সারাদেশে আম সরবরাহ করেন। তার মতো অনেক বেকার যুবক এখন বাণিজ্যিকভাবে আম্রপালি আমের বাগানের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। এসব বাগানে গাছ লাগানোর ২/৩ বছরের মধ্যেই আম পাওয়া যায়। লাগাতার ফল দেয় ১০/১২ বছর। ফলনও হয় ব্যাপক।
ঠাকুরগাঁওয়ের অনেক বাগান মালিক জানান , বিগত বছরের চেয়ে এবার আমের মুকুল ভালো এসেছে াআবহাওয়া ভালো থাকলে আমের সর্বোচ্চ ফলন হবে বলে তারা আশা করে ।
আমের ভালো ফলন এবং রং ভালো রাখার জন্য বাগানে গাছের গোড়ায় পানি দিচ্ছেন।মুকুল থেকে গুটি বের হলে নিয়ম মাফিক ভিটমিন ও কীটনাশক স্প্রে করা হবে।
ঠাকুরগাঁয়ে অনেক ব্যবসায়ী দুই তিন বছরের চুক্তিতে আম বাগান ক্রয় করে । তারাই তখন বাগান দেখভাল ও পরিচর্যা করে।এতে মালিকের কোন লোকশানের কোন টেনশন থাকেনা।তাছারা আমাদের ঠাকুরগাঁও জেলা আম চাষের জন্য বিখ্যাত । প্রতি বছর স্থানীয় চাহিদামিটিয়ে এ জেলা থেকে আম দেশ বিদেশে বিক্রী হয় ৪০-৫০ কোটি টাকার মত।
বাংলাদেশের স্বুসাধু ফল গুলোর মধ্যে আম একটি।আমে যেমন আছে ঘ্রান, তেমনি স্বাদে মজাদার, ও ভিটামিন সমৃদ্ধ ত্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্ইা আমকে ফলের রাজা বলা হয়। ব্যাবসায়ী শাহাজান মিয়া বলেন কেউ যদি প্রথমে আম বাগান করে । তাহলে প্রথম দুই বছর গাছ বড় হওয়ার অপেক্ষা করতে হবে । তারপর থেকে ফল আস্ শুরু করলে একটা আম গাছ পনের – বিশ বছর যাবৎ ফল দেয়।
চিকিৎসকদের মতে, আমে অনেক পুষ্টি গুন আছে,আমে উচ্চ মাত্রায় ভিটামিন ,চিনি ,ভিটামিন সি, ক্ষনিজ লবন রয়েছে এই ফলে। এই ফল আমাদের শরীর সুস্ত ও সতেজ রাখে।বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করে। তাছারা ভিটামিন ও খনিজ লবন আমাদের দাত,নখ,চুল মজবুত রাখে।
ঠাকুরগাঁয়ে সূর্যপুরি,শুধু আম্রপালি ছাড়াও এ এলাকায় হাড়িভাংগা,গোপাল ভোগ, ল্যাংড়া, ফজলি ও হিমসাগর আমের আবাদ হচ্ছে। বাগানগুলোতে আম গাছের পাশাপাশি সাথী ফসল হিসেবে গমসহ অন্যান্য ফসলেরও আবাদ করছেন চাষিরা। ইতোমধ্যে বাগানগুলোতে ব্যাপক মুকুল এসেছে। অনেকে বাগান করে আগাম বিক্রি করে দিচ্ছেন ফল ব্যবসায়ীদের কাছে। বড় বড় অনেক আম বাগান দুই-তিন বছর কিংবা তার অধিক সময়ের জন্য অগ্রিম বিক্রি হয়ে যায়। কিছু বাগান বিক্রি হয় মুকুল দেখে। আবার কিছু বাগান বিক্রি হয় ফল মাঝারি আকারের হলে। বাগানের পাশ দিয়ে হাঁটলেই মুকুলের ঘ্রাণে মন প্রাণ ভরে ওঠে। বাগান ব্যবসায়ী তোতা মিয়া আলী জানান,গত বছরের মতো এ বছর আবহাওয়া ভালও থাকায় এবার ব্যাপক মুকুল দেখা যাচ্ছে। ব্যবসায়ী ও বাগান মালিকরা বলছেন, মুকুল দেখে আশা করা যায় এবার আমের ব্যাপক ফলন হবে। শিলাবৃষ্টি বা ঝড় না হলে ব্যাপক আমের ফলন পাওয়া যাবে বলে জানান তারা। যা ২০০ কোটি টাকার বেশি আম বাণিজ্য হবে।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা জানান, ছত্রাকে যাতে মুকুল নষ্ট না হয় সেজন্য কীটনাশক হিসেবে ইমিডাক্লোপ্রিড গ্রুপের দানাদার প্রতি লিটার পানিতে দুই গ্রাম ও সাইপারম্যাথ্রিন গ্রুপের কীটনাশক প্রতি লিটার পানিতে এক মিলিলিটার মিশিয়ে স্প্রেকরার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। মুকুল গুটিতে পরিণত হওয়ার সময় একই মাত্রায় দ্বিতীয়বার স্প্রে করতে হবে।
ঠাকুরগাঁও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোঃ সিরাজুল ইসলাম জানান, ঠাকুরগাঁও জেলার সূর্যপূরী আম সারাদেশে সুনাম কুড়িয়েছে। এখানকার আমে পোকা থাকে না। এটা এখানকার বিশেষ বৈশিষ্ট্য। আমের আকার দেখতে ছোট হলেও স্বাদে গন্ধে অতুলনীয়। আবহাওয়া ভালো থাকলে এবং কালবৈশাখী বা ঝড় না হলে ব্যাপক ফলন আশা করা যাচ্ছে।