ঠাকুরগাঁওয়ে মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার দাবি

শামসুল আলম, ঠাকুরগাঁও: দিনাজপুর সীমান্ত থেকে ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড় মহাসড়কে বিভিন্ন পয়েন্টে ছয় কিলোমিটার রাস্তা প্রশস্ত করার কাজ চলছে পুরোদমে। মহাসড়কটি প্রায় ১১ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫ দশমিক ৫ মিটার থেকে ৮ দশমিক ৫ মিটারে উন্নীতকরণের জন্য কাজ করছে ঠাকুরগাঁও সড়ক ও জনপদ বিভাগ। মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীত করার দাবি ঠাকুরগাঁওবাসীর দীর্ঘদিন ধরে করে আসছে।

উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁওকে ব্রিটিশ আমলে উন্নয়নের হাতিয়ার মনে করা হলেও এখন তা অনেকটা অবহেলিত। তবে বর্তমান সরকারের আমলে জেলাটি ধীরে ধীরে বদলানো শুরু করছে। রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ এগিয়ে চলছে। রাজধানী ঢাকা থেকে বগুড়া, রংপুর ও দিনাজপুর হয়ে সবচেয়ে উত্তরের জেলা পঞ্চগড় যাওয়ার একমাত্র সড়কপথ ‘ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড় মহাসড়ক’। কিন্তু মহাসড়কটি সরু হওয়ায় ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড় মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। পথচারী বা রিকশা-ভ্যানেরও নিরাপদ চলাচলে ঝুঁকি রয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন দুর্ঘটনার বিষয় চিন্তা করে ঠাকুরগাঁও সড়ক ও জনপদ বিভাগ বিষয়টি আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে রাস্তা প্রশস্ত করার জন্য প্রস্তাবনা পাঠায়। অনুমোদনের পর এরই মধ্যে ঠাকুরগাঁও-দিনাজপুর সীমান্ত থেকে ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড় মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে ছয় কিলোমিটার রাস্তা ঠাকুরগাঁও সড়ক ও জনপদ বিভাগের তত্ত্বাবধানে ১১ কোটি ৮৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ৫ দশমিক ৫ মিটার থেকে ৮ দশমিক ৫ মিটারে উন্নীতকরণের কাজ চলছে।

মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে রাস্তা প্রশস্ত করার বিষয়ে ঠাকুরগাঁও বনবারি এলাকার পথচারী সাদ্দাম হেসেন জানান, এ সড়কে কোচ-মিনিবাস ও ট্রাক-মোটরসাইকেল প্রায়ই বড় ধরনের দুর্ঘটনায় পড়ে। আশা করি রাস্তাটি প্রশস্ত করার কাজ শেষ হলে দুর্ঘটনা কমে আসবে এবং চলাচলে সুবিধা হবে। আমি মনে করি ঠাকুরগাঁও-দিনাজপুর সীমান্ত থেকে ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড় পর্যন্ত প্রশস্তকরণ কাজ ৪ লেনে উন্নীত করলে দুর্ঘটনা আরও কমবে এবং চলাচলে সুবিধা হবে।

আব্দুর রহমান নামে এক বাসচালক বলেন, এ রাস্তটি ছোট হওয়ার বিগত বছরগুলোয় বড় ধরনের সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছিল। আশা করি এখন দুর্ঘটনা কমবে এবং চলাচলের সুবিধা হবে। এছাড়া ঠাকুরগাঁও-দিনাজপুর সীমান্ত থেকে পঞ্চগড় সড়ক ৪ লেনে উন্নীত করা প্রায়োজন।

জেলার প্রায় ১৮ লাখ মানুষের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষের কর্মব্যস্ততার পথ ঠাকুরগাঁওয়ের এ মহাসড়কটি। শহরের বিপরীতে অবস্থিত আরও চারটি উপজেলা রয়েছে। শহরে যাতায়াতের একটিমাত্র পথেই যোগাযোগের ভরসা জেলাবাসীর। এছাড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে ঠাকুরগাঁও রোড প্রশস্ত করার জন্য জেলাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১০-১১ অর্থবছরে আঞ্চলিক মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততা উন্নীতকরণ প্রকল্পের আওতায় শহরের পুরোনো বাসস্ট্যান্ড থেকে চৌরাস্তা পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার চার লেন কাজ শেষ হয় ২০১২-১৩ অর্থবছরে। পরে তা বাড়িয়ে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে শহরের চৌরাস্তা থেকে বালিয়াডাঙ্গী মোড় পর্যন্ত আরও সাড়ে চার কিলোমিটার চার লেন পথের কাজ শেষ করা হয়।

এছাড়া সৌন্দর্যবর্ধনে সড়কের ডিভাইডারের অংশে ২৬০ স্ট্রিটলাইট-সংবলিত পিলার স্থাপন করা হয়। প্রতিটি পিলারে লাল-সবুজের বাতি স্থাপনের পাশাপাশি বৃক্ষ রোপণে বাড়তি সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলা হয়। সড়কটি প্রশস্ত হওয়ায় দিনের আলোর মতো রাতেও আলোকিত শহরে জেলার পাঁচটি উপজেলার মানুষ নির্বিঘেœ যানজটবিহীনভাবে চলাচল করছে।

স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিনের আশা পূরণ হয়েছে। সড়কটি উন্নত হওয়ায় যেমন সুবিধা হচ্ছে, তেমনি কমেছে দুর্ঘটনা ও যানজট। ঠাকুরগাঁও-দিনাজপুর সীমান্ত থেকে ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড় পর্যন্ত চার লেনে উন্নীত করা হলে আরও ভালো হবে। এ ধরনের কাজ পুরো জেলায় অব্যাহত রাখার দাবি করছেন তারা।

এ বিষয়ে সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাফিউল ইসলাম জানান, ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড় মহাসড়কে বিভিন্ন পয়েন্টে ছয় কিলোমিটার রাস্তা প্রশস্ত করার কাজ চলছে। এছাড়া ঠাকুরগাঁও-দিনাজপুর সীমান্ত থেকে ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড় সীমান্ত পর্যন্ত যানজট ও দুর্ঘটনা রোধে ৩০ কিলোমিটার রাস্তা প্রশস্ত করার জন্য প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন হয়ে গেলে কাজ শুরু করা হবে।