ঠাকুরগাঁওয়ে এলজিইডির প্রথম দৃষ্টিনন্দন ইউনিব্লকের টেকসই রাস্তা

শামসুল আলম, ঠাকুরগাঁও : টেকসই উন্নয়ন এবং পরিবেশের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ঠাকুরগাঁওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে জেলার প্রথম ইউনিব্লকের রাস্তা। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রহিমনপুর ইউনিয়নে ৭৫ লাখ ৫ হাজার ২৪৫ টাকা ব্যয়ে এক কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে দৃষ্টিনন্দন ফাকদানপুর-পাহাড়ভাঙ্গা রাস্তাটি ইউনিব্লক দিয়ে নির্মাণ করেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)।

এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে ২০২১ সালের ২৩ মার্চ জেলা পর্যায়ে কর্মরত সব নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তরকে জানানো হয়, দেশের ভৌগোলিক পরিবেশ এবং ট্রাফিক চলাচলের দিক বিবেচনায় প্রচলিত পদ্ধতির সড়ক নির্মাণ বা মেরামতের পরিবর্তে পরিবেশবান্ধব ইউনিব্লক দ্বারা সড়ক নির্মাণ বা মেরামত অপেক্ষাকৃত বেশি উপযোগী ও কার্যকর। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ‘গ্রাম সড়ক পুনর্বাসন প্রকল্পের আওতায় ডিপিপিতে অন্তর্ভুক্ত ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামীণ জনপদের সড়কসমূহ ইউনিব্লক দ্বারা নির্মাণকাজ সম্পন্ন করার নির্দেশনা প্রদান করা হয়।

সদর দপ্তরের নির্দেশনায় আরও বলা হয়, দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধি, নগরায়ণ, শিল্পাঞ্চল বৃদ্ধির সাথে সাথে আবাদি জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। ইট তৈরিতে জমির উপরিভাগের মাটি ব্যবহার খাদ্য উৎপাদনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এছাড়াও ইট পোড়ানোর ফলে কালো ধোঁয়া পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। তাই গ্রাম ও নগর এলাকার সড়কসমূহে গতানুগতিক বিটুমিনাস কার্পেটিং ও আরসিসির বিকল্প হিসেবে পরিবেশবান্ধব ইউনিব্লক ব্যবহারের মাধ্যমে সড়ক নির্মাণ বা মেরামত করা প্রয়োজন। এই সড়ককে জলবায়ু সহিষ্ণু হিসেবেও উল্লেখ করা হয়।

অধিদপ্তরের উল্লিখিত নির্দেশনা অনুসরণ করে ঠাকুরগাঁও জেলার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ইউনিব্লক দিয়ে সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করে। তিন মিটার প্রস্থ রাস্তার উভয় পাশে আবার ৬ ইঞ্চি করে কংক্রিটের কার্ভস্টোন রাস্তাকে আরও টেকসই করেছে। সরেজমিনে ফাকদানপুর-পাহাড়ভাঙ্গা সড়কে গিয়ে দেখা যায়, দু’ধারে সবুজের বুক চিরে দৃষ্টিনন্দন রাস্তায় অসংখ্য মানুষ হাঁটছে। গ্রামের বধূসহ স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী রয়েছেন এ তালিকায়।

স্থানীয় জনগণ জানায়, আমাদের কাক্সিক্ষত এই রাস্তা নতুন প্রযুক্তিতে ইউনিব্লকে নির্মাণ করায় আমরা খুব খুশি। এখন শহর-বন্দরে যাওয়াও সহজ হয়ে গেল। সরকারকে ধন্যবাদ জানাই।’

কৃষক হাসান আলী বলেন, ফসল নিয়ে হাটে যেতে এখন আর কোনো চিন্তা নেই। শহর-বন্দরে যাওয়াও সহজ হয়ে গেল।
উপজেলা প্রকৌশলী ইসমাইল হোসেন বলেন, পরিবেশবান্ধব এই রাস্তার নির্মাণ প্রক্রিয়া খুবই সহজ। খুব অল্প সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা যায়। নির্মাণকাজ সহজ হওয়ার জন্য কাজের মান ভালো করা সম্ভব। তিনি আরও বলেন, সাধারণত রাস্তা তৈরির জন্য ব্যবহার করা হয় ইট-বিটুমিন। এর জন্য ভাটায় পুড়িয়ে বানানো হয় ইট। এসব ভাটা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। সরকারের নানা নিয়ম-নিষেধাজ্ঞার পরও ইটভাটা গড়ে উঠছে কৃষিজমির পাশে। ভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় ফসল উৎপাদনের ক্ষতি হচ্ছে। অপরদিকে, বালু, পাথর, সিমেন্ট দেশেই পাওয়া যায়। খরচ কিছুটা বেশি হলেও দেশীয় উপাদান দিয়েই এগুলো বানানো যায়। বিদেশি উপাদানের ওপর নির্ভর করতে হয় না। সাধারণ ইট-বিটুমিনের চেয়ে ইউনিব্লকের সড়ক বেশি টেকসই। নির্মাণ খরচ বেশি লাগলেও রক্ষণাবেক্ষণ খরচ একেবারেই কম।

এলজিইডির ঠাকুরগাঁও জেলা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহারুল আলম মণ্ডল বলেন, বর্ষাকালে ইট-বিটুমিনাসের রাস্তার খুবই ক্ষতি হয়, প্রতি বর্ষা মৌসুমে গ্রামের এসব সড়ক মেরামত করা লাগে। ট্রাক-বাসের চাপ এসব সড়ক বেশি নিতে পারে না। চার বছর পরপর বড় ধরনের সংস্কারের প্রয়োজন হয়। তবে ইউনিব্লকের রাস্তা রক্ষণাবেক্ষণে খরচ কম। চার বছর পরপর এই রাস্তা মেরামতে কিলোমিটারপ্রতি ১০ লাখ টাকা খরচ হয় বলে জানিয়েছেন এলজিইডির কর্মকর্তারা। অন্যদিকে সাধারণ রাস্তা চার বছর পর সংস্কারে খরচ হয় ৩৫ লাখ টাকার মতো।

ইউনিব্লকগুলোর সাইডে খাঁজকাটা থাকে। যখন পাশাপাশি ব্লকগুলো বসানো হয়, তখন খুব সহজেই ভাঁজে ভাঁজে পড়ে যায়। তাতে ইন্টারলকিং ভালো হয়। এর ফলে বাস-ট্রাকের ভার প্রতিটি ব্লকে সমানভাবে ছড়িয়ে পড়ে। একটি ব্লক আরেকটি ব্লকের সঙ্গে ভার ভাগাভাগি করে নেয়, যা ইটের ক্ষেত্রে হয় না। এ ছাড়া বৃষ্টির পানিতে ডুবে থাকলেও নিরাপদ থাকবে।