নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক, ব্যাংকারদের দুই সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) ও বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) মধ্যস্থতায় ডলার কেনার দর ঠিক করেছে ব্যাংকগুলো। রেমিট্যান্স কেনায় সর্বোচ্চ ১০৮ টাকা ৫০ পয়সা এবং রপ্তানি বিল নগদায়নে ১০৭ টাকা ৫০ পয়সার বেশি না দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে এ দরে ডলার কিনছে না অনেক ব্যাংক। ১৩টি ব্যাংকের বিরুদ্ধে বেশি দামে ডলার কেনার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে তদন্তে নেমেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে গতকালের শেয়ার বিজে। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। ১৩টি ব্যাংকের বিরুদ্ধে তদন্তে নামা হয়েছে। এর মধ্যে একটি সরকারি ব্যাংক, বাকি ১২টি বেসরকারি ও বিদেশি খাতের ব্যাংক।
এর আগেও ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণে নানা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেছেন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধি ও জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) সদস্যরা। ডলারের বাজারের দাম নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও এখন নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে। অবৈধভাবে ডলার মজুতকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের নেতারাও ডলারের বাজার তদারকিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে আরও সতর্ক ও সচেতন হওয়ার দাবি জানিয়েছেন। এত তৎপরতা চললে ডলারের দাম নিয়ে কারসাজি থাকার কথা নয়। ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, নির্দেশ দিয়ে ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে ডলারের বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। কেননা ডলার দেশীয় পণ্য নয়, আন্তর্জাতিক মুদ্রা। বিদেশ থেকে ডলার আসা না বাড়লে দাম বাড়তেই থাকবে। তারা ভুল বলেননি। শুধু যে ডলারের বিনিময় হার যাচাই করা হচ্ছে, তাও নয়। ডলার মজুত, ডলার তৈরির মেশিন বা সরঞ্জাম ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এমন নয় যে, সরকার প্রথমেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কাজে লাগায়নি। সরকার ডলারের ওপর চাপ কমাতে সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর বন্ধ করেছে এবং বাংলাদেশ ব্যাংক কয়েকটি পণ্য আমদানিতে ব্যাংকঋণ বন্ধ করে দিয়েছে।
ব্যাংকগুলোর খরচ কমাতে গাড়ি কেনা বন্ধসহ নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ব্যাংকগুলো নিজেদের দায়িত্ব যথানিয়মে পালন করুক। এ ক্রান্তিকালে অতি মুনাফালোভী প্রবণতা পরিহার করতে হবে।
ডলারের বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয় বললেও ব্যাংক কর্মকর্তারা কোনো পরামর্শ দেননি। মানি চেঞ্জার ও খোলাবাজারে ডলার নিয়ে যে কারসাজি চলছে, সংঘবদ্ধ চক্র এত সুবোধ ও দেশপ্রেমিক নয় যে, স্বতঃস্ফূর্ত হয়ে নিবৃত্ত হবে। ডলার বাজারের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ না থাকায় যে যার মতো দামে বিক্রি করছেন। এখন দেখা যাচ্ছে, সর্ষেতেই ভূত রয়েছে। খোদ ব্যাংকগুলোই বেশি দামে ডলার কিনছে! তাহলে কারসাজি কীভাবে থামবে? যেহেতু বিনিময় হার ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পরোক্ষভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকেরই হাতে আছে। ঘোষিত দর ব্যাংকগুলো তা অনুসরণ করছে কি না, নিয়ন্ত্রক সংস্থার উচিত শূন্য সহনশীলতায় নিয়মিত তা পর্যবেক্ষণ করা। সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ দায়িত্বশীল হলে স্থিতিশীল বৈদেশিক মুদ্রা বাজার তৈরি করা সম্ভব।