নিজস্ব প্রতিবেদক: ডলারের দামের সীমা বেঁধে দেয়ার ৩ দিনের মাথায় তা পিছু হটল বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকগুলো বাজারে ডলারের চাহিদা ও জোগান বিবেচনা করে দাম নির্ধারণ করার পুরো স্বাধীনতা পেল। গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে ব্যাংকগুলো নিজেরা ডলারের দাম নির্ধারণ করে লেনদেন করছে। তবে কেউ যাতে অবাধ স্বাধীনতার অপব্যবহারের মাধ্যমে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য ডলারের বাজার তদারকি করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর রিজার্ভ সংকট মোকাবিলার লক্ষ্যে ডলারের সীমা তুলে দেয়া হয়েছে বলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘গত রোববার ডলারের দাম নির্ধারণ করে দেয়ায় প্রবাসী আয় সংগ্রহ কমেছে বলে অনুমোদিত ডিলার ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়। এতে দেশে রিজার্ভ সংকট বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছিল। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের রেমিট্যান্স নিয়ে হালনাগাদ প্রতিবেদনে এর সত্যতাও পাওয়া গেছে। তাই রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে ডলারের দাম বেঁধে দেয়ার মাত্র তিন দিনের মাথায় সিদ্ধান্ত থেকে আমরা সরে এসেছি। আর ডলারের সীমা তুলে দেয়ার বিষয়টি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে আজ (বৃহস্পতিবার) ব্যাংকগুলোকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) এবং অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ (এবিবি) ডলারের একটা রেট প্রস্তাব করেছিল। সেটা ধরেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক দাম বেঁধে দিয়েছিল। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, ব্যাংকগুলো বেঁধে দেয়া রেটের কারণে বিদেশ থেকে তেমন একটা রেমিট্যান্স সংগ্রহ করতে পারছে না। এসব বিষয় আমলে নিয়ে আমরা ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছি, তোমরা যত রেট দিয়ে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করবে, তা তোমরাই নির্ধারণ কর। অর্থাৎ ব্যাংকগুলো প্রতিযোগিতামূলক দর নির্ধারণ করবে ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিষয়টি তদারকি করবে। আজ (বৃহস্পতিবার) থেকেই এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হয়েছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও এবিবির চেয়ারম্যান সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের বেঁধে দেয়া রেটে রেমিট্যান্স সংগ্রহ ও আন্তঃব্যাংক লেনদেন প্রায় অচল হয়ে পড়ে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে আমদানি-রপ্তানি বাজারে। আর রিজার্ভে নেতিবাচক প্রভাবের আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে। এ অবস্থা পর্যালোচনা করে বুধবার সন্ধ্যায় আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে সার্বিক পরিস্থিত তুলে ধরেছি। আমাদের পর্যালোচনার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দামের সীমা তুলে দিয়েছে। এখন মুক্তবাজার অর্থনীতির স্বাভাবিক নিয়মে ডলারের দাম নির্ধারণ করে লেনদেন চলবে। আর আগামী ৭ থেকে ১০ দিন বাজার ওঠানামা করবে। এরপর ডলারের বাজার নির্ধারিত কাঠামোর মধ্যে চলে আসবে। তখন ডলারের কেনাবেচার মার্জিন নির্ধারণ করা যাবে। তবে চাহিদা ও জোগানের ওপর নির্ভর করে বাজার ওঠানামা করতে পারে। আর আগামী ১৬ তারিখে আমরা ব্যাংকার্স সভায় সার্বিক বিষয় বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে তুলে ধরব।’
মানি চেঞ্জার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট একেএম ইসমাইল হক বলেন, ‘ডলারের দাম নির্ধারণ করার সঙ্গে আমাদের খোলাবাজারের দামে তেমন একটা প্রভাব পড়ে না। কারণ আমরা ব্যাংক থেকে ডলার ক্রয়-বিক্রয় করি না। আমরা অল্প পরিমাণ সংগ্রহ করি ও বিক্রয় করি। আমার সাধারণত ৫০ পয়সার মতো লাভে ডলার বিক্রি করি। আমাদের কেনাবেচার একটা হিসাব প্রতিদিন বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দিই।’
জানা গেছে, গত ২৯ মে বাফেদা ও এবিবির দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলার ৮৯ টাকা বেঁধে দেয়। আর আমদানিকারকদের কাছে বিক্রির রেট নির্ধারণ করা হয় ৮৯ টাকা ১৫ পয়সা। তবে ব্যাংকগুলো আন্তঃব্যাংক লেনদেনে প্রতি ডলারের বিনিময় মূল্য ৮৯ টাকা ৮০ পয়সার প্রস্তাব করেছিল। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেঁধে দেয়া রেট মানেনি বেশিরভাগ ব্যাংক। ইচ্ছেমতো আমদানিকারকদের কাছ থেকে ডলা?রের মূল্য নি?য়েছে ব্যাংকগুলো। এমন পরিস্থিতিতে ডলারের বাজার ঠিক করতে এবং রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে দাম নির্ধারণের বিষয়টি ব্যাংকগু?লোর কা?ছে ছে?ড়ে দিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
ডলারের দরের সীমা তুলে দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) বিজিএমইএর সহসভাপতি শহীদুল্লা আজিম বলেন, ‘ডলারের একটি নির্দিষ্ট দর থাকা উচিত। এ দর সরকার বা কেন্দ্রীয় ব্যাংক বেঁধে দিতে পারে। তা না হলে বাজার সামলানো কঠিন হয়ে পড়বে। কারণ যে যার মতো করে ডলারের রেট দেবে। ব্যাংক কম রেট দিলে তো রেমিট্যান্স সংগ্রহ কমে যাবে। আবার বেশি রেট দিলে ব্যাংকের মুনাফা কমে যাবে। সবমিলে ব্যাংকগুলো লাভবান হতে সব চেষ্টা করবে। এতে প্রবাসী ও ব্যবসায়ীর তুলনায় ব্যাংকের লাভ বেশি হবে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের মে মাসে ১৮৮ কো?টি ৫৩ লাখ ইউএস ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে, যা আগের মাসের চেয়ে প্রায় ১২ কোটি ৫৫ লাখ ডলার কম। এপ্রিলে রেমিট্যান্স এসেছিল ২০১ কোটি ৮ লাখ ডলার। এছাড়া আগের বছরের মে মাসের তুলনায়ও এই মে মাসে ২৮ কোটি ৫৭ লাখ ডলার কম এসেছে। গত বছর মে মাসে প্রবাসীরা পাঠিয়েছিলেন ২১৭ কোটি ১০ লাখ ডলার।