Print Date & Time : 17 July 2025 Thursday 7:20 am

ডলারের বিপরীতে পাকিস্তানি রুপির মান বাড়ছেই

শেয়ার বিজ ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের ডলারের বিপরীতে খোলাবাজারে পাকিস্তানের মুদ্রার উত্থান ঘটেছে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের শুরুতে ডলারের বিপরীতে পাকিস্তানের মুদ্রা রুপির দাম দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে কম ছিল। কিন্তু সেখান থেকে দারুণভাবে ফিরে এসেছে পাকিস্তানি রুপি। এতটাই দারুণভাবে ফিরে এসেছে যে, সাম্প্রতিক সময়ে (চলতি মাসে) বৈশ্বিক মুদ্রাগুলোর মধ্যে পাকিস্তানি রুপির দামই সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম বিজনেস ইনসাইডারের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জ গ্রুপের (এলএসইজি) তথ্যের বরাত দিয়ে বিজনেস ইনসাইডার জানাচ্ছে, সেপ্টেম্বরের শুরুর পর থেকে বর্তমান পর্যন্ত পাকিস্তানি রুপির ডলারের বিপরীতে ৮ শতাংশ দাম বেড়েছে। সেপ্টেম্বরের শুরুতে ১ ডলারের বিপরীতে পরিশোধ করতে হতো ৩০৭ পাকিস্তানি রুপি। সেই জায়গা থেকে বর্তমানে পরিশোধ করতে হচ্ছে ২৭৫ পাকিস্তানি রুপি।

ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের মুম্বাইভিত্তিক বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান এইচডিএফসি সিকিউরিটিজের তথ্য বলছে, পাকিস্তানি রুপির এমন দারুণ প্রত্যাবর্তনের কারণ হলো অবৈধ ডলার লেনদেন শক্তভাবে দমন। দেশটির সরকার বিষয়টি সফলভাবে নিয়ন্ত্রণ করায় ডলারের বিপরীতে পাকিস্তানি রুপির দাম বেড়েছে।

এইচডিএফসি সিকিউরিটিজ বলেছে, ‘পাকিস্তান সরকার অবৈধ ডলার বাণিজ্যের বিষয়টি কঠোরভাবে দমন করায় পাকিস্তানি রুপির ভাগ্য ফিরেছে। পাশাপাশি চলতি মাসে ডলারের বিপরীতে পাকিস্তানি রুপিই সবচেয়ে শক্তিশালী মুদ্রা।’

প্রতিষ্ঠানটি আরও বলেছে, ‘কেবল সেপ্টেম্বর মাসেই রুপির দাম বেড়েছে ৬ শতাংশ। বৈশ্বিক লেনদেনে সবচেয়ে বেশি ব্যবহƒত মুদ্রা ডলারের নিয়ন্ত্রক যুক্তরাষ্ট্রে সুদ হার দীর্ঘ সময়ের জন্য উচ্চ থাকবে এমন অনুমানের পর থাই বাথ ও দক্ষিণ কোরিয়ার ওয়ানসহ বেশির ভাগ মুদ্রারই ডলারের বিপরীতে দাম পড়ে গেছে। কিন্তু পাকিস্তানি রুপি যা করেছে, তা একটি উল্লেখযোগ্য কীর্তি।’

পাকিস্তানের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর বরাত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যকেন্দ্রিক সংবাদমাধ্যম সিএনবিসি জানিয়েছে, পাকিস্তান সরকার ডলারের অবৈধ লেনদেন ঠেকানোর বিষয়ে খড়্গহস্ত হওয়ার আগে খোলাবাজারে অনিয়ন্ত্রিত হারে ডলার লেনদেন হওয়ায় ডলারের বিপরীতে মুদ্রাটির দাম হু হু করে পড়ে যাচ্ছিল।

পরে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা পাচার এবং অবৈধ মজুত প্রতিরোধে ব্যাপক প্রচেষ্টা চালায় দেশটির প্রশাসন। সারাদেশে অভিযান চালায় তারা। কোথাও কোনো অসঙ্গতি দেখলেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এরই মধ্যে ডজনখানেক মানি এক্সচেঞ্জার কোম্পানি বন্ধ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে কয়েক মিলিয়ন বৈদেশিক মুদ্রা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে ডলার, ইউরো, পাউন্ড, ইউয়ান, ইয়েনসহ অন্যান্য বিদেশি মুদ্রা। পাশাপাশি রেমিট্যান্স ও অভ্যন্তরীণভাবে বাড়তে থাকায় তা রুপির দাম বাড়ার পক্ষে সহায়ক হিসেবে কাজ করে।

এদিকে রুপির এই শক্তিশালী অবস্থা দীর্ঘস্থায়ী হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কারণ পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নড়বড়ে দেশটি বিপুল ঋণের ভারে ভারাক্রান্ত। বিশ্লেষকেরা আশঙ্কা করছেন, ২০২৩ সালে পাকিস্তানের জিডিপি আরও সংকুচিত হবে, পাশাপাশি দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হ্রাস হওয়ার কারণেও এই অবস্থা দীর্ঘায়িত না-ও হতে পারে।

এসবের বাইরেও পাকিস্তানের মূল্যস্ফীতি একটি বড় সমস্যা। বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, ২০২৩ সালে পাকিস্তানের মূল্যস্ফীতি বেড়ে ২৯ দশমিক ২ শতাংশ। সরকারি তথ্য অনুসারে, এককভাবে কেবল সেপ্টেম্বরেই মূল্যস্ফীতি ছিল ৩১ দশমিক ৪ শতাংশ।

উল্লেখ্য, ২০২২ সালের জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ে ২০৪ রুপিতে ১ ডলার পাওয়া যেত। এরপর থেকে ডলারের বিপরীতে মান হারাতে থাকে পাকিস্তানি রুপি। সবচেয়ে বেশি মান কমে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে। ওই মাসের ৫ তারিখে এক ডলার কিনতে খরচ হয়েছে ৩০৭ দশমিক ১ রুপি। এরপর থেকে আবার ডলারের বিপরীতে মান ফিরে পেতে শুরু করে পাকিস্তানি মুদ্রা।

এদিকে ইসরাইল হামাস সংকটের প্রভাবে ভারতীয় মুদ্রা রুপির ব্যাপক দরপতন হয়েছে। দরপতন ঠেকাতে ডলার বিক্রি করছে রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (আরবিআই)। এ সংকটে আশপাশের দেশগুলো জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। সে কারণে অপরিশোধিত তেলের দাম যেমন বাড়ছে, তেমনি মার্কিন মুদ্রা ডলারও শক্তিশালী হচ্ছে।