শেয়ার বিজ ডেস্ক: দুটি রাজ্যের নির্বাচনে ধাক্কা খেয়ে জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসের দল এসপিডি ও তাদের জোটসঙ্গীরা চিন্তিত। অভিবাসন ও রাজনৈতিক আশ্রয় বিষয়ে কড়াকড়ি বাড়াতে পারে তারা। রবিবার জার্মানির দুটি রাজ্য—হেসে ও বাভারিয়ার নির্বাচনে হারের মুখোমুখি দেশের ক্ষমতাসীন দল এসপিডি বা সোশাল ডেমোক্র্যাট পার্টি ও তার জোটসঙ্গীরা। এটাই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে সবচেয়ে খারাপ নির্বাচনী ফলাফল এই দলের। খবর: ডয়চে ভেলে।
অন্যদিকে ডানপন্থী দল এএফডি (অল্টারনেটিভ ফর ডয়েচল্যান্ড), যাকে জার্মান গোয়েন্দা সংস্থা সংবিধানবিরোধী বলে থাকে, সেই দলটি এই দুই রাজ্যে তাদের প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা বাড়িয়েছে। বাভারিয়াতে ১৪.৬ শতাংশ ভোট পেয়ে তারা তৃতীয় স্থানে, হেসেতে ১৮.৪ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে।
হেসেতে জয়ী হয়েছে সিডিইউ বা ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়ন, বাভারিয়াতে সিএসইউ বা ক্রিশ্চিয়ান সোশালিস্ট ইউনিয়ন। এই দুটি দলই এই রাজ্যে এৱ আগে থেকেই ক্ষমতায় রয়েছে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিশেষজ্ঞ কার্ল-রুডল্ফ কোর্টে জার্মান সংবাদমাধ্যম জেডডিএফকে বলেন, ‘জার্মান রাজনীতিতে মধ্যপন্থী দলগুলো চিরকালই দাপিয়ে বেড়িয়েছে। কিন্তু এখন ডান দিকে ঝোঁকার চল শুধু মানুষের মননে নয়, ভোটের হিসাবেও ধরা পড়ছে।’
অভিবাসন ইস্যুতে বিভক্ত জার্মানি
এএফডি তার নির্বাচনী প্রচারের কেন্দ্রে রাখে অভিবাসন ও রাজনৈতিক আশ্রয় নীতির কথা। যাদের আশ্রয়ের আবেদন খারিজ হয়েছে, এমন লাখ লাখ মানুষকে জার্মানি থেকে ফেরত পাঠাতে চায় তারা।
তারা বছরের পর বছর ধরে ইসলাম ধর্মাবলম্বী ও অভিবাসীদের বিরুদ্ধে মত তৈরি করতে কাজ করে আসছে, বিশেষ করে যারা আফ্রিকা বা মধ্যপ্রাচ্য থেকে জার্মানিতে আসছে। দেশে দক্ষ কর্মীর অভাব থাকলেও অভিবাসনের ইস্যুতে এএফডি শক্ত অবস্থান নিয়েছে।
এই অবস্থানেই তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন বহু ভোটার, জানাচ্ছে নির্বাচনী পরিসংখ্যান সংস্থা ইনফ্রাটেস্ট ডিম্যাপ। তরুণ ভোটাররাও এই শর্তেই তাদের ভোট দিচ্ছেন বলে জানাচ্ছেন তারা।
বর্তমান পরিস্থিতি ও অন্য দলের ভূমিকা
গত কয়েক মাসে জার্মান রাজনীতিতে নতুন করে চাঙ্গা হচ্ছে অভিবাসনের বিষয়টি।
ইতিমধ্যে যাদের আশ্রয়ের আবেদন খারিজ হয়েছে, তাদের ফেরত পাঠানোর জন্য চাপ বাড়ছে। একই সঙ্গে, তাল মিলিয়ে বাড়ছে দেশে আসা মানুষের সংখ্যা। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর মাসে প্রায় আড়াই লাখ মানুষ আশ্রয় আবেদন করেছেন, যা গত বছরের তুলনায় অনেকটাই বেশি।
একাধিক দল থেকে উঠছে আশ্রয় দেওয়ার সর্বোচ্চ সংখ্যা নির্ধারণের কথা। নির্বাচনের পরের দিনই সিডিইউ ও সিএসইউর পক্ষ থেকে শলৎস সরকারকে তৎপর হতে বলা হয়। সংবাদমাধ্যম এআরডিকে এ বিষয়ে সিডিইউ সচিব কারস্টেন লিনেমান বলেন, স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় ব্যাপক চাপ পড়ছে। বেশি সংখ্যায় শরণার্থী ও অভিবাসী থাকার ফলে বেশ কিছু স্কুলেও চাপ পড়ছে শিক্ষকদের ওপর, কারণ তারাও সংখ্যায় অপর্যাপ্ত।
এসপিডির পক্ষে সাসকিয়া এসকেন কথা দিয়েছেন, এসব তারা খতিয়ে দেখছেন। সোমবার তিনি বলেন, ‘ইতিমধ্যে চ্যান্সেলর শলৎস বিভিন্ন রাজ্যের সঙ্গে কথা বলেছেন, তিনি সিডিইউ ও সিএসইউর সঙ্গে মিলে কাজ করতে চান।’
সমাজকর্মীদের মতে, অভিবাসী ও শরণার্থী বিষয়ে ভীতি না ছড়িয়ে বদলে ‘তথ্যসমৃদ্ধ ও গঠনমূলক’ আলোচনার মাধ্যমে সমাধান আসুক জার্মানিতে।