ডাবের বাজার নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নিন

ডাব নিত্যপণ্য নয়। মানুষের দৈনন্দিন কাজে এটির ব্যবহারও খুব বেশি হয় না। মানুষ সখের বসে ডাব খান অনেক সময়। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এটি রোগী পথ্য হিসেবেই বেশি ব্যবহƒত হয়ে থাকে। বিশেষ করে ডেঙ্গু রোগীদের শরীরের পটাশিয়াম ও আইরনের ঘাটতি কমাতে চিকিৎসক ডাব খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তবে ডাব না খেলে যে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা একেবারেই হবে না, তেমনটিও নয়। তা সত্ত্বেও রোগীকে কিছুটা চাঙ্গা রাখতে ডাব খাওয়ানো হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে দেশে ডেঙ্গুর বিস্তার বৃদ্ধি পাওয়ায় ডাবের চাহিদাও বেড়ে গেছে। তবে চাহিদা বেড়ে যাওয়ার ফলে যে সরবরাহ সংকট দেখা দিয়েছে তেমনটি নয়। তা সত্ত্বেও ডাব ব্যবসায়ীরা নিজেদের মনগড়া দামে বিক্রি করছেন ডাব। অনেকটা গলাকাটা দামে বিক্রি হচ্ছে পচনশীল এ পণ্যটি। আর কৃষিপণ্য হওয়ায় এটির বাজারদর মনিটরিংয়েও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার তেমন তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। এই সুযোগে ডাব ব্যবসায়ীরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। এমন পরিস্থিতিতে সরকারে কৃষ্টি মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। বিশেষ করে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর বা ড্যাম এ বিষয়ে উদ্যোগী ভূমিকা রাখতে পারে। কিন্তু তাদের কোনো কার্যক্রম চোখে পড়ছে না। এমনকি ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরও এ বিষয়ে নির্বিকার। এমন পরিস্থিতিতে দরিদ্র ও নি¤œআয়ের ডেঙ্গু রোগীদের ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে ডাব।

দৈনিক শেয়ার বিজে গতকাল এ বিষয়ে “ডেঙ্গু আতঙ্কে ক্রেতার ‘মাথায় বাড়ি’ ডাব ব্যবসায়ীর!” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনের তথ্য মতে, বর্তমানে ঢাকার বাজারে একটি ডাব বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ২৫০ টাকা পর্যন্ত। অথচ এই মানের একটি ডাবের দাম কোনোভাবেই ১০০ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। প্রতিবেদনের তথ্য মতে, প্রতিটি ডাবে সর্বোচ্চ ১৫০ টাকা পর্যন্ত মুনাফা করছেন ব্যবসায়ীরা। ডাব ব্যবসা মূলত একটি অনানুষ্ঠানিক খাত। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা নিজ উদ্যোগে ফুটপাতে বা বাজারের কোনো নির্দিষ্ট খালি জায়গায় ডাব বিক্রি করে থাকেন। আনুষ্ঠানিক কোনো দোকান না থাকায় ক্ষুদ্র ডাব ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া কঠিন। কিন্তু পাইকারি পর্যায়ে ডাব বিক্রি হয় আড়তে। আর আড়তগুলোর ট্রেড লাইসেন্সসহ অন্যান্য আনুষ্ঠানিক কাঠামো রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে রাজধানীর ডাবের আড়তগুলোয় অভিযান চালানো যেতে পারে।

দেশে কৃষিপণ্যের ক্ষেত্রে মধ্যস্বত্বভোগীদের যতটা দৌরাত্ম্য পরিলক্ষিত হয়, অন্য কোনো ক্ষেত্রে তা দেখা যায় না। পৃথিবীর নানা দেশে কৃষিপণ্যের দক্ষ বিপণনের নানা মডেল প্রচলিত আছে। আমাদের সরকার বিভিন্ন দেশের ভালো উদ্যোগগুলো নানা সময়ে অনুসরণ ও অনুকরণের পদক্ষেপ নিয়ে থাকে। ডিজিটাল বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় সেøাগানও প্রচলতি আছে। এখন আবার স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। কিন্তু স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে গেলে তো বাজার ব্যবস্থায়ও স্বয়ংক্রিয ব্যবস্থা এবং কঠোর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। যে ব্যবস্থায় বাজারে কোনো পণ্যের সংকট দেখা দিলেও সিন্ডিকেট করে ব্যবসায়ীরা পণ্যের বাড়তি দাম নিতে পারবেন না। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সেই ধরনের একটি স্মার্ট বাজার ব্যবস্থা গড়ে তোলার বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। সরকার এ বিষয়ে উদ্যোগী হবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।