ডায়াবেটিস স্ট্রিপ নকল করে বাজারে ছেড়েছে ফার্মা সল্যুশনস

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিদেশ থেকে অনুমোদন ছাড়া ডায়াবেটিস স্ট্রিপ দেশে এনে বিদেশি বহুজাতিক কোম্পানির মোড়কে (নকল) বাজারে ছাড়ছে ফার্মা সল্যুশনস নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্যরা এমন কাজ করছে কি না, তার অনুসন্ধান চলছে। কোনো প্রতিষ্ঠান দেশের মধ্যে অনুমোদন ছাড়া প্রাণরক্ষাকারী এমন পণ্য উৎপাদন করছে কি না, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নকলের অভিযোগ পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

গতকাল রোববার জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে নকল ডায়াবেটিস স্ট্রিপ বিক্রি প্রতিরোধে এক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠান দেশের বাজারে কী পরিমাণ অননুমোদিত ডায়াবেটিস স্ট্রিপ বাজারজাত করছে, সেই তথ্য প্রতিষ্ঠানটির কাছে চেয়েছে ভোক্তা অধিদপ্তর। প্রতিষ্ঠানটি এখনও সেই তথ্য অধিদপ্তরকে জানায়নি বলে জানা গেছে।

মতবিনিময় সভায় ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘রাজধানীর নয়াপল্টনে বহুজাতিক এক প্রতিষ্ঠানের ডায়াবেটিস স্ট্রিপের মোড়ক ছাপা হয়। এটি আমাদের উদ্ভাবনী শক্তির বড় বহিঃপ্রকাশ, অবিশ্বাস্য, লজ্জারও বিষয়। লাজ ফার্মার কাছ থেকে তথ্য নিয়ে আমরা ফার্মা সল্যুশনস নামে একটি কোম্পানির বিরুদ্ধে অননুমোদিত ডায়াবেটিস স্ট্রিপ সরবরাহের অভিযোগ পাই। তাদের দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও বিষয়টি তারা অস্বীকার করে। এমনকি আমাদের অফিসে এসে উদ্ধত আচরণ করে। ফার্মা সল্যুশনস অস্বীকার করলেও আমরা তাদের সার্ভারে প্রবেশ করে দেখি, এটা তারাই করেছে। লাজ ফার্মার মতো অনেক ফার্মেসিতে তারা এটি সরবরাহ করেছে।’

ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আরও বলেন, ‘পণ্যটি যে কোম্পানির নামে বাজারজাত করা হচ্ছে, অর্থাৎ সেই রোশ ইন্টারন্যাশনালের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করি। তারা ব্যাচ নম্বর দেখে জানায়, এই ব্যাচের স্ট্রিপ তারা উৎপাদন করেনি, বাজারেও ছাড়েনি। এরপর সেই নয়াপল্টনের প্রিন্ট ওয়ান

নামের একটি প্রিন্টিং প্রেসে অভিযান চালানো হয়। প্রতিষ্ঠানটি ফার্মা সল্যুশনসকে মোড়ক সরবরাহ করার পাশাপাশি বাজারজাত করতে সহায়তা করে। বিষয়টি নকল জেনেও তারা ছাপে। অথচ তারা আমাদের কাছে এটা স্বীকারও করেনি। আমরা তাদের ইনভয়েস পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রমাণ পাওয়ার পর তারা বিস্তারিত জানায়।’

মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠান ফার্মা সল্যুশনসের প্রধান নির্বাহী পল্লব চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘কোম্পানির কিছু বিক্রয়কর্মীর মাধ্যমে এটি ঘটেছে। বিক্রয়কর্মীদের নানা ধরনের চাপ থাকে, চাপে পড়ে তারা এটা করেছে। তবে দায় আমাদের নিতে হবে; বাড়তি বলার কিছু নেই। এটা আমাদের জন্য লজ্জাজনক বিষয়।’

বক্তব্য দেয়ার সময় পল্লব চক্রবর্তী ডায়াবেটিস-বিষয়ক সচেতনতা তৈরিতে তার কোম্পানির অবদানের কথা তুলে ধরেন। এ ছাড়া তিনি ঘটনাটি ছোট ভুল আখ্যা দিয়ে আংশিকভাবে দায় এড়ানোর চেষ্টা করলে উপস্থিত অনেকে তার প্রতিবাদ করেন।

মোড়ক তৈরি করা প্রতিষ্ঠান ওয়ান প্রিন্টের মালিক লুৎফর রহমান বলেন, ‘ফার্মা সল্যুশনসের সঙ্গে আমাদের বিশ্বাসের সম্পর্ক ছিল। তাদের লেনদেন এত ভালো যে মোড়ক ছাপাতে আমাদের দ্বিতীয়বার ভাবতে হয়নি। আমরা দুটি ধাপে প্যাকেট ছেপেছি ১০ থেকে ১১ হাজার টাকার প্রিন্টিং। তবে আমি দুই লাখ টাকা জরিমানা দিয়েছি। এরপরও যদি আমার বা আমার পরিবারের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়, আমি তা মাথা পেতে নেব। কারণ দেশের অনেক মানুষের প্রাণহানি ঘটতে পারে, এমন ঘটনায় সহায়তা করেছি।’

ভোক্তা অধিদপ্তর বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান করছে। বিষয়টি উল্লেখ করে সফিকুজ্জামান বলেন, ‘অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রতিবেশী একটি দেশ থেকে লাগেজ পার্টির মাধ্যমে এই স্ট্রিপ আসছে। বিশেষ করে কাপড়ের লটের মধ্যে এসব দেশে আসছে। কাস্টমস পয়েন্টে তার কোনো তদারকি হচ্ছে না। তাদের উচিত হবে, এগুলো ভালোভাবে দেখভাল করা। ওষুধ প্রশাসনেরও বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত অনুসন্ধান করা উচিত; আইনে তাদের ক্ষমতা দেয়া আছে। আমরা তাদের সহায়তা করব। আমরা যেসব তথ্য পেয়েছি, তা সরকারি-বেসরকারি সংশ্লিষ্ট সবাইকে লিখিত আকারে জানাব। মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার সুযোগ কাউকে দেয়া হবে না। এ ছাড়া নকল ব্যাচের যেসব ওষুধ বাজারে আছে, তা জব্দ ও প্রত্যাহারের জন্য ব্যবস্থা নেয়া হবে।’