ডার্ক ওয়েবসাইট থেকে আনা হয়েছিলো ভয়ংকর মাদক ‘ডিওবি’

নিজস্ব প্রতিবেদক: ‘ডার্ক ওয়েবসাইট থেকে ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে ২০০ ব্লট ডিওবি কিনেছিলেন খুলনার যুবক আসিফ আহমেদ শুভ। অর্ডার করার পর ইন্টারন্যাশনাল কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে মাদকের চালানটি সরাসরি তার বাসায় পৌঁছায়। বিমানবন্দরগুলোতে উন্নতমানের স্ক্যানার না থাকায় কুরিয়ারে আসা ডিওবি ধরা পড়েনি। ডার্ক ওয়েবের মাধ্যমে অর্ডার করার পর এক মাসের ব্যবধানে এই মাদক কুরিয়ারের মাধ্যমে শুভর বাসায় পৌঁছে যায়।’

দেশে প্রথমবারের মতো ‘ক’ শ্রেণির ভয়ংকর মাদক ডিওবি উদ্ধার করার পর সেটি দেশে আসার কাহিনী জানাতে গিয়ে এমনটা বলেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মো. ফজলুল রহমান।

মঙ্গলবার বিকেলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ঢাকা মেট্রো উত্তরের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান তিনি।

এর আগে আজ সকালে খুলনা থেকে ৯০ ব্লটার (পিস) ডিওবি (ডাইমেথ অক্সি ব্রোমোঅ্যামফোটামাইন) নামক নতুন এক মাদক উদ্ধার করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। এসময় মাদক কারবারির সঙ্গে জড়িত আসিফ আহমেদ শুভ ও তার বন্ধু অর্ণব কুমার শর্মা, এবং সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের খুলনা বয়রা বাজার শাখার ম্যানেজার মামুনুর রশীদকে গ্রেফতার করা হয়।

ফজলুল রহমান বলেন, গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য ছিল, খুলনায় একজনের কাছে এলএসডি রয়েছে। তাকে গ্রেফতারে সেখানে অভিযান চালায় অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। একজনের কাছে কিছু এলএসডি উদ্ধারের পর অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদে ডিওবির তথ্য মেলে। উদ্ধার করা হয় ৯০ ব্লটার ডিওবি।

অধিদপ্তর জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, মাদকসেবীদের কাছে প্রতি ব্লট (পিস) ডিওবি ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। এটা সেবনে তৃতীয় নয়ন খুলে যায় বলে দাবি মাদকসেবীদের।

তবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কেমিক্যাল বিশেষজ্ঞরা জানান, ডিওবি সেবন করার পর সেবনকারীকে যেকোনোভাবে প্রভাবিত করা যায়। ফলে সেবনকারী নির্দেশিত কাজ করতে উদ্যমী হয়ে ওঠে। এরজন্য নির্দিষ্ট মাত্রায় সেবন করতে হয়। বেশি পরিমাণে সেবন করতে মৃত্যু ঘটতে পারে।

মো. ফজলুর রহমান আরও বলেন, ডিওবি আমাদের ‘ক’ শ্রেণিভুক্ত নিষিদ্ধ মাদক। অনেকটা এলএসডির মতো দেখতে হলেও ডিওবি আরও বেশি ক্ষতিকর। অতিরিক্ত সেবনে মৃত্যুও হতে পারে।

অধিদপ্তরের ঢাকা মেট্রো উত্তরের সহকারী পরিচালক মেহেদী হাসান জানান, দেশে আসার পর স্ক্যানারে ধরা না পরলেও বিদেশ থেকে এলএসডির মতো মাদক আসতে পারে এই ব্যাপারে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের কাছে তথ্য ছিল। গত আগস্ট মাসে কি-ওয়ার্ড ‘syash’ শব্দটি পান গোয়েন্দারা। এরপর চলে অনুসন্ধান। তিন মাসের বেশি সময় অনুসন্ধানের পর এই মাদকের সন্ধান মেলে।

তিনি বলেন, বিমানবন্দরগুলোতে শক্তিশালী স্ক্যানার নেই, এটা সত্য। কিন্তু আমাদের নজরদারি ছিল। নজরদারির কারণেই এই মাদক আমরা উদ্ধার করতে পেরেছি।

ডিওবির ক্রেতা কারা জানতে চাইলে তিনি বলেন, গ্রেফতারের সময় শুভর বাসায় এলএসডি পাওয়া যায় আর অর্ণবের বাসায় পাওয়া যায় ডিওবি। তারা পোল্যান্ড থেকে কিনে ডিওবির ব্লটগুলো (প্রতিপিস) অর্ণবের বাসায় রাখেন। সে দুমাস আগে ২০০ ব্লট ডিওবি নিয়ে আসেন। যেগুলো তিনি নিজে সেবন করতেন এবং অন্যান্যদের কাছেও বিক্রি করতেন। নতুন ক্রেতা তৈরি করতে কিছু ব্লট বিনামূল্যেও দিয়েছিলেন শুভ।

অভিযানে থাকা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক হেলাল উদ্দিন বলেন, শুভ পোল্যান্ড থেকে দুই শতাধিক ডিওবি এনেছিলেন। আমরা অভিযানের সময় তার কাছে পেয়েছি ৯০টি। বাকিগুলো বিক্রি ও সেবন করেছে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিওবি বিক্রির জন্য ৫-৬ জন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শুভর একজন সেলার রয়েছে বলেও জানান তিনি।

সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস খুলনা বয়রা শাখার ম্যানেজার মামুনুর রশীদকে গ্রেফতারের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, মামুন মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগসাজশে দেশের বিভিন্নপ্রান্তে পার্সেল পাঠাতেন। তাকে ধরার জন্য ফাঁদ পাতেন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। গোপনে ক্রেতা সেজে পাঁচ ব্লট এলএসডির অর্ডার করে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা। তখন খুলনা থেকে কোনো বাধা ছাড়াই রাজধানী এলিফ্যান্ট রোড সুন্দরবন শাখায় পার্সেলটি পৌঁছায়। আর কুরিয়ারের নিয়ম অনুযায়ী প্রেরকের মোবাইল নম্বর ও জাতীয় পরিচয়পত্র রাখার নিয়ম থাকার পরও শুভর সাথে যোগাযোগ থাকার কারনে সেসবের কিছুই রাখেনি মামুন। কিন্তু তারপরও প্রযুক্তির সহায়তায় প্রেরক শুভর সন্ধান পান গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।