ডা. ফেরদৌস কোয়ারেন্টাইনে কেন জানতে চেয়ে আইনি নোটিস

নিজস্ব প্রতিবেদক: যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফেরা ডা. ফেরদৌস খন্দকারকে কোন আইনে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে, তা জানতে চেয়ে আইনি নোটিস পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী। গতকাল ই-মেইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবরে এ নোটিস পাঠানো হয়। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জামিউল হক ফয়সালের পক্ষে এ নোটিস পাঠান ব্যারিস্টার গাজী ফরহাদ রেজা।

নোটিসে বলা হয়, বাংলাদেশের মানুষকে সেবা দিতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের মাউন্ট সিনাই হাসপাতালের সুপরিচিত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. ফেরদৌস খন্দকার গত রোববার (৭ জুন) বিকাল ৪টা ৪৫ মিনিটে ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। পরে সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে কোয়ারেন্টাইনে নিয়ে যায়। বর্তমানে তাকে ঢাকার ব্র্যাক ট্রেনিং সেন্টারে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। তিনি সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন কারানাভাইরাসে সম্মুখ সারির যোদ্ধাদের জন্য স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রীও।

ম্যানহাটনের প্রাচীনতম মাউন্ট সিনাই হাসপাতালের এ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নিউইয়র্কে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের কাছে বড় আশা ও ভরসার প্রতীক। যেখানে কারোনাভাইরাসের ভয়ে যেখানে বিশ্বের অনেক বাঘা বাঘা ডাক্তার তাদের চেম্বার বন্ধ করে অন্দরে ঢুকে গেছেন, সেখানে নিউইয়র্কের মতো মৃত্যুপুরীতে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঘরে ঘরে গিয়ে করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দিয়েছেন ডা. ফেরদৌস। রোববার তিনি দেশে ফিরেছেন বাংলাদেশে করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা দিতে। তবে পত্রপত্রিকার মাধ্যমে জানা যায়, তাকে এয়ারপোর্ট থেকে বের হতে দেওয়া হয়নি। কারণ ডা. ফেরদৌস খন্দকার করোনা শনাক্তের অ্যান্টিবডি টেস্ট করা হয়। এর ফলাফল পজিটিভ এসেছিল।

যেহেতু যুক্তরাষ্ট্রে থাকতে ডা. ফেরদৌস খন্দকারের করোনা শনাক্তের অ্যান্টিবডি টেষ্ট করা হয় এবং এর ফলাফল পজিটিভ এসেছিল, তাই ডা. ফেরদৌস খন্দকার একজন করোনাযোদ্ধা। করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় বাংলাদেশে প্লাজমা থেরাপি কার্যকর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। প্রায়ই রোগীর পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট রক্তের গ্রুপের প্লাজমা খোঁজা হচ্ছে। দেশের এ ক্রান্তিকালে সরকার ডা. ফেরদৌস খন্দকারদের মতো মানুষকে খুঁজছে এবং তিনি শুধু প্লাজমা হিরো হিসেবেই নন একজন প্রথিতযশা চিকিৎসক হিসেবেও দেশের অনেক মানুষের উপকারে আসতে পারেন।

আইনজীবী গাজী ফরহাদ রেজা নোটিসে আরও বলেন, গত ৭ জুন রোববার বিকাল ৪টা ৪৫ মিনিটে কাতার এয়ারওয়েজের প্লেন দেশটির নিউইয়র্ক থেকে ১১২ বাংলাদেশিকে, যাদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ছাত্রছাত্রী, উচ্চ ডিগ্রি অর্জনে যাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, বিভিন্ন ট্রেনিংয়ে অংশগ্রহণকারী, দর্শনার্থী, পেশাজীবী ও ব্যবসায়ী নিয়ে দেশে ফিরে। এর আগেও গত ১৫ মে যুক্তরাষ্ট্রে আটকে থাকা ২৪২ জন বাংলাদেশিকে নিয়ে কাতার এয়ারওয়েজের আরেক বিশেষ ফ্লাইট ওয়াশিংটন থেকে দেশে ফিরে। এছাড়া গত ৮ জুন করোনা মোকাবিলায় চীন থেকে বিশেষজ্ঞ দল ঢাকায় এসেছে। প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সবার বিষয়ে সমান বিবেচনা প্রসূত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি, যেটি বাংলাদেশের সংবিধানে প্রদত্ত মৌলিক অধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

‘… ডা. ফেরদৌস খন্দকারকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখার কারণ দর্শিয়ে আগামী দু’দিনের মধ্যে আমাদের জানাবেন যে কোনো আইনের বলে এবং কিসের ভিত্তিতে একজন করোনাজয়ী যোদ্ধাকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে, যেখানে ওই একই সময়ে বিদেশ থেকে আসা অন্য যাত্রীদের এবং পরবর্তীতে চীন থেকে আসা ডাক্তারদের দেশের অভ্যন্তরীণে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়। আগামী দু’দিনের মধ্যে এ বিষয়ে আমরা কোনো জবাব না পেলে মক্কেলের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে যথাযথ আইনের আশ্রয় নিতে বাধ্য হব’, বলেও নোটিসে উল্লেখ করা হয়।