আতাউর রহমান: দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তারিক আমিন ভূঁইয়া কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে একযোগে ৯৫ জনকে পদোন্নতি দিয়েছিলেন, যে কারণে পর্ষদ ও প্রতিষ্ঠানের ভেতরের কোন্দলে বাধ্য হয়ে পদত্যাগ করেন তিনি। পরে পদোন্নতির তালিকা থেকে ১৮ কর্মকর্তার নাম বাতিল করে ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদ, যা গত ৬ অক্টোবর কার্যকর হয়। প্রতিষ্ঠানটির এমন পরিস্থিতিতে ডিএসইর মানবসম্পদ নীতি (এইচআর পলিসি) সংক্রান্ত সভা ডেকেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। গতকাল ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে এ-সংক্রান্ত একটি চিঠি দেয়া হয়েছে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, আগামীকাল সকাল ১১টায় কমিশন প্রাঙ্গণে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের এইচআর নীতি-সংক্রান্ত সভায় নিজ নিজ প্রতিনিধিদের সঙ্গে উপস্থিত থাকার জন্য নির্দেশ করা হয়েছে। এ সভায় সভাপতিত্ব করবেন বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ।
এ বিষয়ে ডিএসইর প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) ও মুখপাত্র মো. সাইফুর রহমান মজুমদার শেয়ার বিজকে বলেন, এইচআর ম্যানুয়াল নিয়ে অনেক আগে থেকেই কাজ চলে আসছে। এ বিষয়ে আগে কয়েকবার বৈঠক করা হয়েছে। এইচআর ম্যানুয়ালটি আইনের আওতায় আনতে এর আগে বিএসইসি থেকে একটি এবং পরে ডিএসই থেকে একটি ড্রাফটও দেয়া হয়েছে। আগামীকালের বৈঠক তারই অংশ বলে জানান তিনি।
বিষয়টি এমডির পদত্যাগ ও কর্মকর্তাদের পদোন্নতি বাতিলের কারণে কি নাÑজানতে চাইলে তিনি বলেন, এরকম কিছুই নয়। কারণ এ বিষয় নিয়ে এ ঘটনার কয়েক মাস আগে থেকে কাজ শুরু হয়েছে। সেটার সঙ্গে এ বৈঠকের কোনো সম্পর্ক নেই।
এদিকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (বোর্ড অ্যান্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) রেগুলেশন, ২০১৩-এর রেগুলেশন অনুযায়ী, পরিচালনা পর্ষদ এমডির সব সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। যদি এমন কোনো হস্তক্ষেপ করে, তাহলে তা নীতিমালা পরিপন্থি বলে বিবেচিত হবে। এছাড়া রেগুলেশন অনুযায়ী, পরিচালকরা কোনোভাবেই এক্সচেঞ্জের ম্যানেজমেন্টের কার্যক্রমের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না। তবে এমডির কোনো সিদ্ধান্তে কিছু ভুল বা ডিএসইর ক্ষতি হতে পারে, এমন মনে হলে পরিচালনা পর্ষদ তা বিএসইসিকে তদন্ত করার জন্য অনুরোধ করতে পারে। অথবা অভ্যন্তরীণ অডিট দল দিয়ে তদন্ত করার সুযোগ রয়েছে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে ডিএসইর অনেক কর্মকর্তাদের অভিযোগ, বিএসইসির নীতিমালা লঙ্ঘন করে পদোন্নতি বাতিল করা হয়েছে।
এর আগে চলতি বছরের গত ২৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত পরিচালনা পর্ষদ সভায় তারিক আমিন ভূঁইয়ার নির্দেশে পদোন্নতি দেয়ার তালিকার মধ্যে ১৮ কর্মকর্তার নাম বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। গত রোববার থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হয়। একই সঙ্গে অন্য আট কর্মকর্তাকে ‘ডাবল’ প্রমোশন দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এমন সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে ডিএসইর কর্মকর্তাদের মাঝে অসন্তোষ বিরাজ করছে।
এদিকে চলতি বছরের গত ২৩ আগস্ট তারিক আমিন ভূঁইয়ার পদত্যাগের পরদিন বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবায়াত-উল-ইসলাম ডিএসইর চেয়ারম্যান মো. ইউনুসুর রহমানকে এ বিষয়ে আলোচনার জন্য ডেকেছিলেন। ২৫ আগস্টের মধ্যে তারেক আমিনের পদত্যাগ এবং তার দ্বারা ডিএসইর কর্মচারীকে পদোন্নতির বিষয়ে ডিএসইকে ব্যাখ্যা দিতে নির্দেশ দেয়া হয়। একইসঙ্গে ওইদিন বিএসইসির কাছে তারেক আমিন ভূঁইয়াকে স্বপদে পুনর্বহাল রাখার দাবি জানিয়ে পদত?্যাগের সঠিক কারণ তদন্তের দাবি জানায় বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক?্য পরিষদ। পরে তারিক আমিন ভূঁইয়া এক চিঠিতে বিএসইসিকে জানায়, ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন নীতিমালা মেনেই তিনি কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিয়েছিলেন। নীতিমালা মেনে কাজের সুযোগ পেলে তিনি আবার ফিরতে চান। তবে ২৫ আগস্ট অনেকটা তড়িঘড়ি করে তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদ।
তথ্যমতে, পদোন্নতি কেড়ে নেয়ার তালিকায় রয়েছেন উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) থেকে মহাব্যবস্থাপক (জিএম) পদে পদোন্নতি পাওয়া তিনজন। জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক (এসএম) থেকে সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) পদে সাতজন, ব্যবস্থাপক থেকে জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক পদে পাঁচজন এবং জ্যেষ্ঠ এক্সিকিউটিভ থেকে উপ-ব্যবস্থাপক পদে তিনজন। মহাব্যবস্থাপক পদ থেকে পদোন্নতি বাতিল করা কর্মকর্তারা হলেনÑমোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া, সাইদ মাহমুদ যোবায়ের ও সৈয়দ আল-আমিন রহমান। সহকারী মহাব্যবস্থাপক পদ থেকে পদোন্নতি বাতিল করা কর্মকর্তারা হলেনÑমো. বজলুর রহমান, কামরুন নাহার, মোহাম্মদ হারুন-অর-রশিদ পাঠান, মোহাম্মদ আহসান হাবিব, মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান, সৈয়দ ফয়সাল আব্দুল্লাহ ও মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন রেজা। জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক পদ থেকে পদোন্নতি বাতিল করা কর্মকর্তারা হলেনÑফারহানা শরিফা, সাদাত মারুফ হাসনায়েন, মামুন-উর-রশিদ, শরিফ গিয়াস উদ্দিন আলম ও মো. মশিউর রহমান চৌধুরী। উপ-ব্যবস্থাপক পদ থেকে পদোন্নতি বাতিল করা কর্মকর্তারা হলেনÑমো. আব্দুল লতিফ মিয়া, মো. সফিকুল আলম ও মো. দেলোয়ার হোসেন।