‘আগাম কর মওকুফের নামে ফাঁকি: ডিজেলে এখনও ১৮.৮০ টাকা শুল্ক-কর নিচ্ছে এনবিআর’ শীর্ষক যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, তাতে এ ক্ষেত্রে সিদ্ধান্তহীনতাই স্পষ্ট হয়েছে। প্রতিবেদনের তথ্য, আমদানিতে আগাম কর অব্যাহতি দিলেও বিক্রয় পর্যায়ে তা আদায় করা হচ্ছে। ডিজেল আমদানিতে সম্প্রতি আগাম কর অব্যাহতি দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। পাশাপাশি আমদানি শুল্ক অর্ধেকে নামানো হয়েছে।
২৯ আগস্ট ডিজেলসহ সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম লিটারে পাঁচ টাকা কমিয়েছে সরকার। যদিও আগাম কর অব্যাহতির ঘোষণায় রয়েছে শুভঙ্করের ফাঁকি। ডিজেল বিক্রিতে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনকে (বিপিসি) লোকসান গুনতে হচ্ছে প্রতি লিটারে ১৯ টাকা ৬১ পয়সা। আর ডিজেলের ওপর এখনও উচ্চ হারে শুল্ক-কর আদায় করছে এনবিআর। বিপিসির ডিজেলের ডিউটি-শুল্ক-কর সংক্রান্ত প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। গত ২৮ আগস্ট ডিজেলের আগাম কর অব্যাহতি ও আমদানি শুল্ক কমানো সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, কাস্টমস আইন, ১৯৬৯ অনুযায়ী ডিজেল আমদানিতে আগাম কর অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ সুবিধা অব্যাহত থাকবে।
আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম পরিবর্তিত হলেও ট্যারিফ ভ্যালু অপরিবর্তিত থাকায় এ খাতে ব্যয় অপরিবর্তিত রয়েছে বিপিসির। তবে ডলারের বিনিময় হার বাড়ায় এ খাতে ব্যয় কিছুটা বেড়েছে। তাই আমদানি পর্যায়ে তা মওকুফ হলেও বিক্রয় পর্যায়ে এখন পরিশোধ করতে হচ্ছে। এতে বিপিসিকে বিক্রয় পর্যায়ে ১০ টাকা ১৫ পয়সা শুল্ক-কর দিতে হচ্ছে। আর সব মিলিয়ে মোট (আমদানি ও বিক্রি) শুল্ক-কর দাঁড়িয়েছে ১৮ টাকা ৮০ পয়সা।
এ হিসাবে আমদানি শুল্ক কমানোর পর এক টাকা ৯০ পয়সা ছাড় পেয়েছে বিপিসি। আর এনবিআর প্রতি লিটার ডিজেলে ১৮ টাকা ৮০ পয়সা শুল্ক-কর আদায় করছে। শুল্ক-কর কমানোর আগে এর পরিমাণ ছিল ২০ টাকা ৭০ পয়সা। আগাম কর অব্যাহতি দেয়া হয়েছে মূলত আমদানি পর্যায়ে। অথচ তা প্রত্যাহার করা হয়নি। তাই বিক্রয় পর্যায়ে আগাম কর দিতে হচ্ছে। এতে বিপিসির লোকসান বেড়ে গেছে।
শুল্ক কমানোর প্রভাব বাজারে কতটা পড়বে, তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে আসছেন অর্থনীতিবিদরা। শুল্ক সমন্বয় করার পর দাম কতটা কমল, তা নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা আসে। কিন্তু এনবিআর কোন যুক্তিতে ডিজেলে এখনও ১৮ টাকা ৮০ পয়সা শুল্ক-কর নিচ্ছে, তা কারও বোধগম্য নয়। মওকুফের ঘোষণা সত্ত্বেও এনবিআর কেন শুল্ক-কর নেবে আর রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানই বা কেন লোকসান দেবে? এর পেছনে কোনো অভিসন্ধি বা যোগসাজশ আছে কি না, তাও খতিয়ে দেখতে হবে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি মানে রাষ্ট্রেরই ক্ষতি। আমরা আশা করি, ডিজেলের শুল্ক-কর নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা ও অসামঞ্জস্য দূরীকরণে সরকার শিগগিরই ব্যবস্থা নেবে।