Print Date & Time : 27 July 2025 Sunday 12:27 pm

ডিজেল আমদানি থেকে সর্বোচ্চ রাজস্ব আহরণ

সাইদ সবুজ, চট্টগ্রাম: দেশের অর্থনীতি সচল রাখতে বিভিন্ন পণ্য আমদানির বিপরীতে রাজস্ব আদায় করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। আর এ কাজে এনবিআরকে সাহায্য করে দেশের বিভিন্ন পয়েন্টে ১৬টি শুল্ক স্টেশন। আবার এসব শুল্ক স্টেশনের মধ্যে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস মোট রাজস্ব আহরণের পাঁচ ভাগের এক ভাগ আদায় করে। তার ধারাবাহিকতা গত অর্থবছরেও অব্যাহত ছিল। আর ওই অর্থবছরে হাইস্প্রিড ডিজেল আমদানির বিপরীতে সর্বোচ্চ রাজস্ব আহরণ করে এনবিআর।

তথ্যমতে, জ্বালানি তেল আমদানির শতভাগ হয়ে থাকে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। এর মধ্যে গত অর্থবছর চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে ডিজেল খালাস হয় ৩৮ লাখ আট হাজার ৬৬৭ টন, যার আমদানি মূল্য ১৫ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা। একই সঙ্গে এটিই ছিল দেশের সর্বোচ্চ মূল্যের আমদানিকৃত পণ্য, যা থেকে সরকার রাজস্ব আহরণ করে চার হাজার ৭০ কোটি টাকা।

যদিও ২০১৭-১৮ অর্থবছর থেকে তিন লাখ ৫০ হাজার ৪৪১ টন ডিজেল আমদানি কমেছে। এতে সরকার রাজস্ব হারিয়েছে ৩১০ কোটি টাকা। এর পরও দেশের শীর্ষ রাজস্ব আহরণকৃত পণ্যের মধ্যে ডিজেলই প্রথম স্থানে।

এরপর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রাজস্ব আহরণ হয়েছে সিমেন্ট তৈরির কাঁচামাল ক্লিংকার থেকে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সিমেন্ট ক্লিংকার আমদানি হয়েছে এক কোটি ৬১ লাখ ২৮ হাজার ৪২৭ টন, যার আমদানি মূল্য ছিল সাত হাজার ৯৮ কোটি টাকা। আর এই আমদানির বিপরীতে এনবিআর রাজস্ব আহরণ করে এক হাজার ৯৯২ কোটি টাকা।

২০১৭-১৮ অর্থবছরের চেয়ে গত অর্থবছর ২৬ লাখ ৭০ হাজার ৬৩৮ টন ক্লিংকার আমদানি বেশি হয়েছে। অর্থাৎ ২০ শতাংশ আমদানি বেড়েছে।

এরপর রাজস্ব আয় হয়েছে মোটরসাইকেল আমদানি থেকে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে এক হাজার ৮৭৭ কোটি টাকার মোটরসাইকেল আমদানি হয়েছে, যার বিপরীতে রাজস্ব আহরণ হয়েছে এক হাজার ৪০০ কোটি টাকা। এ খাতে ২০১৭-১৮ অর্থবছর থেকে ১৬ শতাংশ আমদানি কমেছে। আর ৩৩৪ কোটি টাকা রাজস্ব হারিয়েছে সরকার।

এরপর যথাক্রমে পাম অয়েল ও অপরিশোধিত সয়াবিন তেল থেকে রাজস্ব আয় করেছে এনবিআর। পাম অয়েল থেকে রাজস্ব আহরণ করেছে ৯১৫ কোটি টাকা এবং অপরিশোধিত সয়াবিন তেল থেকে রাজস্ব আয় করেছে ৮৯৮ কোটি টাকা। বিদায়ী অর্থবছর ৩৫ শতাংশ অপরিশোধিত সয়াবিন তেল আমদানি বাড়লেও ১৬ শতাংশ পাম অয়েল আমদানি কমেছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে পাম অয়েল আমদানি হয়েছে ১২ লাখ ৭১ হাজার ৪৭ টন আর অপরিশোধিত সয়াবিন তেল আমদানি হয়েছে ১০ লাখ ১৩ হাজার ১১৪ টন।

রাজস্ব আহরণে ষষ্ঠ অবস্থানে আছে পেট্রোলিয়াম অয়েল। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে পেট্রোলিয়াম অয়েল আমদানি হয়েছে ১৩ লাখ ৮৫ হাজার ৩৩ টন, যার আমদানি মূল্য তিন হাজার ৪৮৮ কোটি টাকা। এর বিপরীতে রাজস্ব বোর্ড শুল্ক আদায় করে ৭২৪ কোটি টাকা। তবে পেট্রোলিয়াম অয়েল আগের অর্থবছর থেকে ১৫ শতাংশ আমদানি বেড়েছে। সপ্তম অবস্থানে আছে মোটরকার। মোটরকার আমদানি থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানটি আয় করে ৬৪৫ কোটি টাকা। তবে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে গাড়ি আমদানি অনেকটা কমেছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছর থেকে গত অর্থবছর ৩৬ শতাংশ মোটরকার কম আমদানি হয়েছে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে। এতে ২৫৯ কোটি টাকা রাজস্ব হারিয়েছে চট্টগ্রামে অবস্থিত শুল্ক স্টেশনটি।

এদিকে রড তৈরির কাঁচামাল হট রোল আমদানি থেকে ৬৪১ কোটি টাকা, আপেল আমদানি থেকে ৫৮৫ কোটি, পাথর আমদানি থেকে ৫২৬ কোটি টাকা ও শিপ ব্রেকিং অর্থাৎ স্ক্রেপ জাহাজ আমদানি থেকে ৪৭৩ কোটি টাকা শুল্ক আদায় করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। একই সঙ্গে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড শীর্ষ ২০ আমদানিকৃত পণ্য থেকে ১৬ হাজার ৩৫৪ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করে, যা চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের রাজস্ব আয়ের সাড়ে ৩৭ শতাংশ।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার ফকরুল আলম শেয়ার বিজকে বলেন, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস এনবিআরের সর্ববৃহৎ শুল্ক স্টেশন। এই স্টেশন দিয়ে ৯০ শতাংশের ওপরে পণ্য আমদানি-রফতানি হয়। এতে সরকারের পক্ষে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড প্রচুর রাজস্ব আয় করে, যা দেশের মোট রাজস্ব আয়ের পাঁচ ভাগের এক ভাগ। তবে লোকবল বাড়ালে এই শুল্ক স্টেশন থেকে আরও রাজস্ব আদায় বাড়ানো যাবে।