ডিপিডিসির বকেয়া আদায়ের সময় ও সিস্টেম লস কমছে

হামিদুর রহমান: ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ডিপিডিসি) বকেয়া আদায়ের সময়কাল কমছে। একই সঙ্গে কমছে সিস্টেম লস। গত পাঁচ বছরে প্রতিষ্ঠানটির সিস্টেম লস হ্রাস পেয়েছে দুই দশমিক ৩১ শতাংশ।

বিপিডিসির বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্যমতে, সংস্থাটির বিল গ্রাহকদের থেকে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা আছে দুই মাস। তবে এর চেয়ে কম সময়েই প্রতিষ্ঠানটি বিল আদায় করতে পারছে। এর মধ্যে গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ডিপিডিসি’র বিল আদায় হয়েছিল এক দশমিক ৯৭ মাস সময়কালে। পরের অর্থবছরে অর্থাৎ ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ডিপিডিসি’র বিল আদায় হয়েছিল এক দশমিক ৬৮ মাস সময়কালে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বিল আদায় হয়েছিল এক দশমিক ৫৫ মাস সময়কালে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে বিল আদায় হয়েছিল এক দশমিক ৭৯ মাস সময়কালে। ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে কভিড-১৯ সংক্রমনের জন্য বিল আদায়ে ছাড় দেয়া হয়। এতে বিল আদায়ের গতি কিছুটা কমে যায়। ফলে ২০২০-২১ অর্থবছরে বিল আদায় হয় এক দশমিক ৪৮ মাস সময়কালে।  

বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ডিপিডিসি’র সিস্টেম লসের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯ শতাংশ। এর বিপরীতে অর্জন হয়েছে আট দশমিক ৪০ শতাংশ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সিস্টেম লসের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮ দশমিক ২৫ শতাংশ। এর বিপরীতে অর্জন হয়েছে ৭ দশমিক ৪৯ শতাংশ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা ৮ দশমিক ১০ শতাংশ, যার বিপরীতে অর্জন হয়েছে ৭ দশমিক ২৯ শতাংশ। পরবর্তী অর্থবছরে অর্থাৎ ২০১৯-২০ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল সাত দশমিক ৪৮ শতাংশ। এর বিপরীতে অর্জন করে ছয় দশমিক ৫৮ শতাংশ। আর ২০২০-২১ অর্থবছরে এসে ডিপিডিসি’র সিস্টেম লসের লক্ষ্যমাত্রা ছিল সাত দশমিক ২০ শতাংশ, যার বিপরীতে অর্জন করে ছয় দশমিক ৬৯ শতাংশ।

এদিকে, মানসম্মত বিদ্যুৎ সরবরাহ ও সিস্টেম লস হ্রাসে বিলিং পয়েন্ট পাওয়ার ফ্যাক্টর নির্দিষ্ট মানে উন্নয়ন করতে ডিপিডিসি বিভিন্ন বিলিং পয়েন্টে ক্যাপাসিটর ব্যাংক স্থাপন করে। ফলে বার্ষিক কর্মসম্পাদন সূচকের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সক্ষম হয়েছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বিলিং পয়েন্টে পাওয়ার ফ্যাক্টরে অর্জন হয়েছে ৮৮ দশমিক ১৪ শতাংশ, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে অর্জন হয়েছে ৮৮ দশমিক ৭১ শতাংশ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে অর্জন হয়েছে ৯০ শতাংশ। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৯০ দশমিক ৫ শতাংশ বিলিং পয়েন্টে পাওয়ার ফ্যাক্টর অর্জন করে। এদিকে ২০২০-২১ অর্থবছরে অর্জন হয়েছে ৯১ দশমিক ৫৯ শতাংশ।

বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ২০১৬-১৭ অথ বছরে ডিপিডিসি বিদ্যুৎ কেনে আট হাজার ৪২৪ মিলিয়ন কিলোওয়াট ঘণ্টা। আর বিক্রি করে ৭ হাজার ৭১৬ মিয়িলন কিলোওয়াট ঘণ্টা। ওই অর্থবছরে গ্রাহক ছিল ১১ লাখ সাড়ে ১৬ হাজার। আর ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বিদ্যুৎ কেনা হয়েছে আট হাজার ৮১৮ মিলিয়ন কিলোওয়াট ঘণ্টা। আর বিক্রি করেছে আট হাজার ১৬৫ মিলিয়ন কিলোওয়াট ঘণ্টা। ওই অর্থবছরে গ্রাহক বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ১১ লাখ ৯৬ হাজার। 

২০১৮-১৯ অর্থবছরে বিদ্যুৎ কেনা হয়েছে ৯ হাজার ৪০৪ মিলিয়ন কিলোওয়াট ঘণ্টা। আর বিক্রি হয়েছে আট হাজার ৭১৯ মিলিয়ন কিলোওয়াট ঘণ্টা। ওই অর্থবছরেও গ্রাহক সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ১৩ লাখ। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ডিপিডিসি বিদ্যুৎ কেনে ৯ হাজার ৮৫ মিলিয়ন কিলোওয়াট ঘণ্টা। আর বিদ্যুৎ বিক্রি করে আট হাজার ৪৮৭ মিলিয়ন কিলোওয়াট ঘণ্টা। ওই অর্থবছরে গ্রাহক দাঁড়ায় প্রায় ১৩ লাখ ৬৭ হাজার। আর ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে বিদ্যুৎ ক্রয় করা হয়েছে ৯ হাজার ৭৪৬ মিলয়ন কিলোওয়াট ঘণ্টা। এর বিপরীতে বিদ্যুৎ বিক্রি হয়েছে ৯ হাজার ৯৪ মিলিয়ন কিলোওয়াট ঘণ্টা। এই অর্থবছরেও গ্রাহক সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ১৪ লাখ ৮৬ হাজার।   

অন্যদিকে বিদ্যুতের বৈধ ব্যবহার নিশ্চিতে বিগত সময়ের তুলনায় বর্তমান সময়ে মাঠপর্যায়ে অভিযান পরিচালনা বেড়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১৮২টি অভিযান পরিচালনা করা হয়। আর ৩০২টি অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। ২০১৯-২০ অর্থবছের ১২২টি অভিযান পরিচালনা করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১২টি অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। আর ২০২০-২১ অর্থবছরে অবৈধ অভিযান পরিচালনা করা হয় ১৪২টি। আর ১১৭টি অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়।

জানতে চাইলে ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান শেয়ার বিজকে বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রত্যেকটা কাজের টার্গেট দেয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে জবাবদিহিতাও বাড়ানো হয়েছে। ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমও এখন আগের চেয়ে অনেক স্বচ্ছ ও শক্তিশালী। সবার পরিশ্রমের কারণেই আমরা এই সফলতায় পৌঁছাতে পেরেছি। অন্যদিকে বিলিংয়ের ব্যাপারে গ্রাহকদের সচেতন করা হচ্ছে। ফলে গ্রাহকরাও এখন আগের চেয়ে অনেক সচেতন। গ্রাহকরাই এই অর্জনের অংশীদার।’