জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি

ডিপোতে বার্ষিক পণ্য ব্যবস্থাপনায় ব্যয় বাড়বে শতকোটি টাকা

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: চলতি মাসে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর কারণে আবারও রপ্তানি পণ্য পরিবহন বেড়েছে। প্রতি কনটেইনার রপ্তানি পণ্য ব্যবস্থাপনার জন্য এখন ২৫ শতাংশ বাড়তি মাশুল দিতে হবে। এতে রপ্তানি খাতে বছরে কমপক্ষে ৭০ কোটি টাকা বাড়তি খরচ হবে। অন্যদিকে আমদানিকৃত পণ্য ব্যবস্থাপনায় আরও প্রায় ৩০ কোটি টাকা ব্যয় বাড়বে। ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার অ্যাসোসিয়েশনের (বাফা) নেতাদের সঙ্গে কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশন শেষে মাশুল বাড়ানোর এ ঘোষণা দেন কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা।

জানা যায়, চট্টগ্রামে ২০টি অনুমোদিত বেসরকারি কনটেইনার ডিপো রয়েছে। এসব ডিপোতে দেশের কারখানাগুলো থেকে রপ্তানি পণ্য এনে কনটেইনারে বোঝাই করে বন্দর দিয়ে রপ্তানি হয়। আবার বন্দর দিয়ে আমদানি হওয়া ৩৮ ধরনের কনটেইনার ভর্তি পণ্য এসব ডিপোতে এনে খালাস করা বাধ্যতামূলক। এ ছাড়া ডিপোগুলো খালি কনটেইনারও সংরক্ষণ করে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে রপ্তানি হওয়া কনটেইনার পণ্যের ৯০ শতাংশ বেসরকারি ২০টি কনটেইনার ডিপোর মাধ্যমে ব্যবস্থাপনা হয়। এ হিসাবে বাড়তি মাশুল দিতে হবে ৯০ শতাংশ রপ্তানি পণ্যে। মূলত বিদেশি ক্রেতারাই এই মাশুল দেন। আবার অনেক ক্ষেত্রে চুক্তি অনুযায়ী, রপ্তানিকারকরাও এই মাশুল পরিশোধ করেন। আর চলতি মাসে জ্বালানি তেলের দাম প্রায় ৫০ শতাংশ বাড়ানোর কারণে আবারও রপ্তানি পণ্য ব্যবস্থাপনা বেড়েছে। প্রতি কনটেইনার রপ্তানি পণ্য ব্যবস্থাপনার জন্য এখন ২৫ শতাংশ বাড়তি মাশুল দিতে হবে। এতে রপ্তানি খাতে বছরে কমপক্ষে ৭০ কোটি টাকা বাড়তি খরচ হবে। অন্যদিকে বন্দর দিয়ে আমদানি হওয়া ৩৮ ধরনের পণ্য যেগুলো ডিপোতে নিয়ে খালাস হয়, সেগুলোর ক্ষেত্রে এই বাড়তি মাশুল গুনতে হবে। এর মাশুল দিতে আমদানিকারকরা। এতে আমদানি খাতে প্রায় ৩০ কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় বাড়বে। এ খাতে সবমিলিয়ে বছরের প্রায় ১০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় বাড়বে। যদিও গত বছরের ১০ আগস্ট আমদানি পণ্য ব্যবস্থাপনার মাশুল প্রায় ৩৪ শতাংশ বাড়ানো হয়। তখনও জ্বালানির দাম বাড়ানোর কারণে আমদানি পণ্যবাহী কনটেইনার এবং খালি কনটেইনারের মাশুল বাড়িয়েছে কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশন। বন্দর দিয়ে আমদানি হওয়া ৩৮ ধরনের পণ্য যেগুলো ডিপোতে নিয়ে খালাস হয়, সেগুলোর ক্ষেত্রে এই বাড়তি মাশুল গুনতে হবে। এ ছাড়া ১৭ আগস্ট খালি কনটেইনার সংরক্ষণের মাশুল ২৪ শতাংশ বাড়ানো হয়। খালি কনটেইনারের মাশুল পরিশোধ করবে বিদেশি শিপিং কোম্পানিগুলো।

একজন সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ী বলেন, বেসরকারি কনটেইনার ডিপোগুলো খালি কনটেইনার শেডের সামনে এনে রপ্তানি পণ্য বোঝাই করা এবং গাড়িতে করে ডিপো থেকে বন্দর দিয়ে জাহাজে তুলে দেয়া পর্যন্ত কার্যক্রম বেশি হয়ে থাকে। যাকে স্টাফিং বলে। এসব ডিপোগুলো থেকে বছরে প্রায় সাত লাখ একক কনটেইনার পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে রপ্তানি হওয়া কনটেইনারের ৮৫ শতাংশই ছিল ৪০ ফুট লম্বা। বর্তমানে রপ্তানি পণ্যবাহী ২০ ফুট লম্বা কনটেইনারের ‘স্টাফিং চার্জ’ ৫ হাজার ৯২ টাকা। এই মাশুল কনটেইনারপ্রতি ১ হাজার ২৭৩ টাকা বেড়ে হবে ৬ হাজার ৩৬৫ টাকা। অন্যদিকে কনটেইনার ৪০ ফুট লম্বা হলে মাশুল ১ হাজার ৬৯৭ টাকা বেড়ে দাঁড়াবে ৮ হাজার ৪৮৭ টাকা। অর্থাৎ  বছরে ‘স্টাফিং চার্জ’ বাবদ বছরে বাড়তি ব্যয় হবে ৬৫ কোটি টাকা। এ টাকা দিনেশেষে দেশের সাধারণ জনগণকে বহন করতে হবে।

কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা বলেন, চলতি মাসের ৬ আগস্ট শুক্রবার সরকার জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি করে। এর মধ্যে ডিজেলের দাম লিটারপ্রতি ৩৪ টাকা বাড়ানো হয়। আর বেসরকারি ডিপোগুলোতে কনটেইনার মুভমেন্ট এবং পরিবহনের কাজে ডিজেলচালিত যন্ত্রপাতির ব্যবহার হয়। তাই জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর কারণে তাদের মাশুলও বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়; যা গত রোববার ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার অ্যাসোসিয়েশনের (বাফা) নেতাদের সঙ্গে আলোচনা শেষে ২৫ শতাংশ হারে মাশুল বাড়ানোর ঘোষণা করা হয়। এটা মূলত জ্বালানি তেলের কারণে বাড়ানো হয়ছে। যদিও তেলের দাম কমে, তখন সমন্বয় করা হতে পারে।

কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নুরুল কাইয়ূম খান শেয়ার বিজকে বলেন, আমরা জ্বালানি তেল ডিজেলের সঙ্গে সম্পর্কিত ব্যয় সমন্বয় করার জন্য গত ১৭ আগস্ট শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে মিটিং করি, সেখানে ২৪ শতাংশ ব্যয় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। আর গত রোবরার বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার অ্যাসোসিয়েশনের (বাফা) সঙ্গে মিটিং করি। সেই মিটিংয়ে খরচের সঙ্গে সমন্বয় করে ৪২ দশমিক ৫০ শতাংশ মাশুল বাড়ানোর প্রস্তাব করি। অপরদিকে বাফার পক্ষে ১০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর জন্য মতামত দেয়। পরে দুই পক্ষের আলোচনা শেষে ২৫ শতাংশ মাশুল বাড়ানোর বিষয়ে সমঝোতা হয়; যা বর্ধিত মাশুল জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর দিন থেকে কার্যকর হবে। তেলের দাম বাড়ায় ডিপো পরিচালনার খরচ অনেক বেড়েছে। সে তুলনায় মাশুলের হার বাড়ানো হয়নি। ভবিষ্যতে জ্বালানি তেলের দাম কমলে মাশুলও কমানো হবে।

মাশুল বাড়ানোর বিষয়ে জানতে চাইলে তৈরি পোশাক খাতের ব্যবসায়ী নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রপ্তানিকারকদের একজন শীর্ষ ব্যবসায়ী বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর কারণে মাশুল বাড়বে, এটা ঠিক। তবে তা ডিপোর নীতিমালা অনুযায়ী কমিটি নির্ধারণ করার কথা ছিল। নিয়ম না মেনে অযৌক্তিকভাবে নিজেরাই এই মাশুল বাড়িয়ে দিয়েছে। আর কারা অনুমোদন দিল? সবকিছু গায়ের জোরে করছে ওরা। এতে রপ্তানি খাতের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।