ডিপো এলাকার জনগোষ্ঠীর সুরক্ষা নিশ্চিত করুন

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডে রাসায়নিক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত আশপাশের এলাকার বাসিন্দাদের দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যঝুঁকির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। গতকাল শেয়ার বিজের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণে নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছেন কয়েক লাখ মানুষ। খবরে জানা যায়, চট্টগ্রামের হালিশহর, পতেঙ্গা ও কাট্টলী এলাকায় ১৩টি বেসরকারি কনটেইনার ডিপো আছে। ত্রুটিপূর্ণ অনুমোদনবিহীন পেট্রলপাম্পও রয়েছে। কনটেইনার ডিপোগুলোর পাশে কমপক্ষে ১০ থেকে ১৫ লাখ লোকের বসবাস। গত ৪ জুন রাসায়নিক বিস্ফোরণের ঘটনার পর এসব ডিপোয় কর্মরতসহ স্থানীয় বাসিন্দারা নিরাপত্তা নিয়ে চরম উদ্বেগভাবে দিন পার করছেন।

দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বিএম কনটেইনার ডিপোয় আগুনের সঙ্গে রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ৪৯ জন নিহত ও দুই শতাধিক মানুষ আহত হন। এ দুর্ঘটনার পর বিভিন্ন মহলে আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্যের নিরাপত্তা নিয়ে বড় রকমের সংকট ও উদ্বেগ নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।

সরকারি কিংবা বেসরকারি হোক, কনটেইনার ডিপোয় এমন অনাকাক্সিক্ষত ও বেদনাদায়ক দুর্ঘটনা যেন আর  না ঘটে, সে জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্বশীল হতে হবে। শ্রমিক ও আশপাশের জনপদের বাসিন্দাদের ঝুঁকিমুক্ত রাখতে আহত শ্রমিকদের স্বাস্থ্যের দিক পর্যবেক্ষণে সর্বসাধারণের করণীয় নিয়ে ‘নির্দেশিকা’ প্রণয়ন করতে হবে। এটি করা গেলে সাধারণ মানুষও কিছু প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে পারবেন। পরবর্তী সময়ে দেশের কোথাও এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলে দ্রুত কীভাবে স্বাস্থ্যসেবা নেয়া যায় এবং ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে আনা যায়, সে বিষয়ে সবাই সচেতন হতে পারবেন।

আমাদের শিল্পমালিকদের বড় সীমাবদ্ধতা হলো, পরিবেশ দূষণ ও শ্রমিকদের সুরক্ষায় উদাসীনতা। এর মূল কারণ, তারা চান কম বিনিয়োগে বেশি মুনাফা। টাকার পাহাড় গড়লেও শ্রমিকদের জীবনের নিরাপত্তাসংক্রান্ত কোনো বিষয় তাদের কাছে কখনোই গুরুত্ব পায়নি। নিয়মনীতি মেনে ব্যবসা করেন না তারা। ঝুঁকিতে থাকা শ্রমিকদের ন্যূনতম ব্যক্তিগত আত্মরক্ষামূলক সরঞ্জাম সরবরাহ করতে হবে, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও সরঞ্জাম দিতে হবে। শ্রমিকরা নিজে বাঁচতে এবং পরিবারকে বাঁচাতে কাজ করেন। সেখানে মৃত্যুঝুঁকি থাকলে তা দুঃখজনক। কর্মজীবী শ্রমিক ও সংলগ্ন এলাকার জনসাধারণ যাতে কোনোরূপ ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সেজন্য আইসিডিগুলোকে পরিবেশবান্ধব করে গড়ে তুলতে হবে। মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ মজুত ও সংরক্ষণ করা হয়, এমন  প্রতিষ্ঠানে কর্মপরিবেশ নিশ্চিতে ঝটিকা অভিযান পরিচালনা করতে হবে। দুর্ঘটনায় ক্ষতি শতভাগ এড়ানো সম্ভব নয়, কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার শ্রমিক-জনগোষ্ঠীর সুরক্ষায় কর্তৃপক্ষ সর্বোচ্চ সতর্ক রয়েছে, সে লক্ষ্যে কার্যকর ব্যবস্থা তো নিতে হবে।