কয়েকদিন ধরে ডিম-মুরগির উচ্চমূল্যে ভোক্তাদের ভোগান্তি বেড়েছে। প্রতিটি নিত্যপণ্যের দামই সাধারণ ভোক্তাদের ক্ষয়ক্ষমতার বাইরে। কিন্তু নিত্যপণ্য তো খরচের তালিকা থেকে ছেঁটে ফেলা সম্ভব নয়। তাই ব্যবহার বা ভোগ কমিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে সীমিত আয়ের মানুষ। প্রাণিজ আমিষের সহজলভ্য উৎস ডিম ও মুরগি। এখন সেটিও যদি সাধারণ মানুষের জন্য দুষ্প্রাপ্য হয়ে যায়; তাহলে জনগোষ্ঠী ও প্রজš§ ন্যূনতম প্রয়োজনীয় আমিষ না পেয়ে পুষ্টিহীনতার শিকার হবে। ডিম-মুরগি দুষ্প্রাপ্য হয়ে ওঠা বড় সমস্যা ডেকে আনতে পারে, তা নিয়ে সরকারের নীতিনির্ধারকরাও ভাবছেন বলে ধারণা। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে তার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলেই আমরা মনে করি।
বুধবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ) নেতারা বলেছেন, ‘ডিম-মুরগির বাজারে অস্থিরতার জন্য প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর দায়ী। তারা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরকে করপোরেটদের করপোরেট অফিস বলে আখ্যা দিয়েছেন। তাদের অভিযোগ, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের অসাধু কিছু কর্মকর্তা যোগসাজশে সব নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে করপোরেট ব্যবসায়ীরা। বিপিএ নেতাদের অভিমত, সরকার একদিন বয়সী মুরগির বাচ্চা আমদানি নিষিদ্ধ করায় করপোরেট ব্যবসায়ীরা কনট্রাক্ট ফার্মিংয়ে ঝুঁকছে। এরপর তারা আর প্রান্তিক খামারিদের কাছে মুরগির বাচ্চা বিক্রি করবে না। কনট্রাক্ট ফার্মিংয়ের মাধ্যমে তারা শুধু উৎপাদন করবে। এতে বাজারে ডিম ও মুরগির সংকট দেখা দেবে।
খামারিদের অভিযোগ ফেলনা নয়। সরকার কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারে না বলে আত্মকর্মসংস্থানে উৎসাহিত করেছে কর্মহীন তরুণদের। তাদের অনেকেই মুরগির খামার করে স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করছেন। এখন অনুকূল নীতিসহায়তা না পেলে হতাশ হবেন তারা। ক্ষুদ্র খামারিদের অনুযোগ, ‘সরকার শুধু করপোরেট ব্যবসায়ীদের নিয়ে বৈঠক করে ডিমের উৎপাদন খরচ সাড়ে ১০ টাকা নির্ধারণ করেছে। কারণ করপোরেটদের উৎপাদন খরচ খুব কম। অথচ প্রান্তিক খামারিদের প্রতিটি ডিম উৎপাদন খরচ ১০ টাকা ৭৯ পয়সা। সরকারের উচিত প্রান্তিক খামারিরা কত টাকায় বিক্রি করবেন, কত শতাংশ লাভ করবেন, তা নির্ধারণ করে দেয়া।
ডিম উৎপাদন খরচ কমিয়ে আনা গেলে, দামও কমানো সম্ভব। সেক্ষেত্রে পোলট্রি ফিডের দাম কমাতে হবে। জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চাইলে যেভাবে ডিমের দাম কমে যায়, তারা দায়িত্ব পেলে সেভাবে পোলট্রি ফিডের দাম কমানো সম্ভব।
বাজারে মাছ-মাংসের দাম চড়া, তার মধ্যে ডিমের দাম এভাবে বাড়ায় নি¤œআয়ের পরিবারগুলোয় আমিষের ঘাটতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ডিমের উপকারিতা অনেক। শিশুর দৈহিক ও মানসিক বিকাশ এবং হাড় শক্ত করতে ডিম কার্যকর ভূমিকা পালন করে। ডিম দৃষ্টিশক্তি বাড়াতেও সাহায্য করে। কারণ এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ। সে কারণে অনেক পুষ্টিবিদ প্রতিদিন সকালে একটি ডিম খাওয়ার পরামর্শ দেন। এখন সেই ডিমই দুর্লভ হয়ে উঠছে সাধারণ মানুষের জন্য, এটি দুঃখজনক। প্রজš§কে কর্মক্ষম ও সবল রাখতে ডিমের বাজার স্থিতিশীল করতে হবে। মুরগির খাদ্যের কাঁচামাল ও ওষুধ আমদানিতে শুল্ক ছাড় দিলে মুরগি ও ডিমের দাম অবশ্যই কমানো সম্ভব। বাজার প্রতিযোগিতামূলক হওয়া ভালো, কিন্তু কারও সংঘবদ্ধ অবস্থান যেন বাজার অস্থিতিশীল এবং ক্ষুদ্র খামারিদের টিকে থাকার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করেÑসেদিকেও লক্ষ রাখতে হবে।