Print Date & Time : 7 July 2025 Monday 12:46 pm

ডিমের বাজারে কারসাজি বন্ধে কঠোর হতে হবে

দেশে বেশ কিছুদিন থেকে ডিমের বাজারে চলছে অস্থিরতা। কারসাজি করে বাড়ানো হচ্ছে দাম। যখন অভিযান চলে, তখন কিছুটা দাম কমলেও পরে সেই আগের অবস্থা। জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের (ডিএনসিআরপি) মহাপরিচালক  বলেছেন, ডিমের বাজারের সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারলে দাম নিয়ন্ত্রণে থাকবে না। বুধবার বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা ও আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি। এর আগে গত ১৪ অক্টোবর বিশ্ব ডিম দিবসে আলোচনা সভায়ও এমন কথা বলেছেন তিনি।

বুধবারের সভায় সংঘবদ্ধ চক্রের কারসাজির বিষয়ে ডিএনসিআরপি মহাপরিচালক বলেন, আগস্টে জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে একটি ডিমের দাম পাঁচ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হলো। সে সময় আমরা মাঠে নামলাম। নিলামের নামে একটি সাজানো ঘটনার মধ্য দিয়ে ডিমের দাম বাড়ানোর প্রমাণ মিলল। যে কোম্পানি দাম বাড়াল তার সংবাদ সারাদেশে ছড়িয়ে গেল। এরপর অভিযান শুরুর পর ডিম আমদানি করার ঘোষণা হলো। আবার তিনদিনের মধ্যে স্বাভাবিক হলো বাজার। কিন্তু এর মধ্যে একটি টাকাও বাড়তি দাম পেলেন না প্রান্তিক খামারিরা। ভোক্তার প্রায় ৫০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে গেল সংঘবদ্ধ চক্রটি।

আমরা মনে করি, বর্তমানে ডিমের বাজারে অস্থিরতা কাটিয়ে উঠতে এবং ভোক্তা পর্যায়ে ডিমের মূল্য সহনীয় রাখতে পোলট্রি খাদ্যে ভর্তুকি দেয়া প্রয়োজন। পোলট্রি  বোর্ড গঠনের মাধ্যমে এই শিল্পকে সুসংহত করা সম্ভব। ডিম কেনাবেচার জন্য দেশের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ডিম বিপণন কেন্দ্রে অকশন হাউস স্থাপন করে ন্যায্যমূল্যে ডিম বিপণন করা যেতে পারে।

দ্রব্যমূল্যর ঊর্ধ্বগতির কঠিন সময়ে সাধারণ মানুষ মাছ-মাংস কেনার সামর্থ্য রাখে না। বেশিরভাগ অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমজীবী মানুষ কায়িক শ্রম করেন। কর্মক্ষম থাকতে তাদের নির্দিষ্ট পরিমাণ আমিষ গ্রহণ প্রয়োজন। মাছ-মাংস তাদের জন্য দুর্লভ হওয়ায় ডিম দিয়েই আমিষের চাহিদা পূরণ করেন তারা। এখন সেই ডিমই যদি ক্রয়মতার বাইরে চলে গেলে তাদের এবং পরিবারের সদস্যদের প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাওয়া অসম্ভব।

নবীন-প্রবীণ সব বয়সীদের জন্যই ডিম আমিষের জরুরি উৎস হিসেবে বিবেচিত। পরিবারের ছোট ও বয়স্ক সদস্যদের  রোজই ডিম খাওয়া উচিত। কর্মজীবী-শ্রমজীবী সবার প্রয়োজনীয় পুষ্টি জোগাতে ডিমের জুড়ি নেই। দেহের ক্ষয়পূরণ, নতুন কোষ গঠন, দুর্বল শরীরে শক্তির সঞ্চার প্রভৃতি সব ধরনের ক্ষতিপূরণ করতে ডিম খাওয়া খুবই প্রয়োজন। আমাদের বড় ব্যবসায়ীরা নানাভাবে প্রচার করেন করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) কার্যক্রম পরিচালনা করছেন তারা। ভাবতে অবাক লাগে, এরাই হতদরিদ্র মানুষের আমিষের উৎস ডিমের বাজারে কারসাজি করছেন। এটি স্বীকার করতে হবে, স্বার্থ হাসিলে সংঘবদ্ধ চক্র কারসাজি করে। ছোট খামারিরা ৮০ শতাংশ ডিম উৎপাদন করে থাকেন। অথচ ২০ শতাংশ বড় খামারিরা বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য ডিম সুলভ করতে ডিমের বাজারে অসাধু চক্রের কারসাজি কঠোরভাবে দমন করতে হবে। ব্যয়ের কারণে ডিম যেন মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে না যায়।