Print Date & Time : 10 September 2025 Wednesday 7:05 pm

ডিমে কারসাজির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে: ভোক্তা অধিকার

নিজস্ব প্রতিবেদক: জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ার অজুহাতে ডিম ও পোলট্রি খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি মহল ‘কারসাজি করে’ অস্বাভাবিক মূল্য বাড়িয়েছে জানিয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেছেন, অপরাধীদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে সরকারের ওপর মহলে প্রতিবেদন দেবেন তারা। ভবিষ্যতে এ ধরনের অপরাধ যেন না হয়, সে জন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক। গতকাল বুধবার ঢাকার কারওয়ান বাজারে অধিদপ্তরের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পোলট্রি খাতের ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন পর্যায়ের খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি।

বড় উৎপাদক করপোরেট খামারি ও তাদের এজেন্ট, ক্ষুদ্র খামারি ও আড়তদারদের সঙ্গে বৈঠক করেন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। কয়েকদিনের মধ্যে দ্বিতীয় দফায় এ খাতসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বসলেন তারা। এর আগে সোমবার ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইও হঠাৎ ডিমের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে এ খাতের ব্যবসায়ীদের নিয়ে বৈঠক করে।

ভোক্তা অধিকারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সম্প্রতি ডিজেলের মূল্য বাড়ার কারণে ময়মনসিংহের মতো দূরের জেলাগুলো থেকে ঢাকায় ডিম পরিবহনে ডিমপ্রতি খরচ বেড়েছে ৩ থেকে ৪ পয়সা। অথচ এই সুযোগে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়েছেন অন্তত ২ টাকা ৭০ পয়সা।

মহাপরিচালক বলেন, শতকরা হিসাবে এক রাতেই ডিমের দাম ৩০ শতাংশ বেড়ে গেছে। গত ১০ দিন ধরে টপ অব দ্য কান্ট্রি ছিল ডিমের দাম। জনগণের ধারণা অত্যন্ত পরিষ্কার। বিভিন্ন পর্যায় থেকে বলা হচ্ছেÑসবকিছু খুঁজে বের করার পর ডিমের মূল উৎসে গিয়ে কেন ব্যবস্থা নিচ্ছি না। সে কারণে আমরা আপনাদের ডেকেছি। আমি সত্যিটা উদঘাটন করতে চাই। জনগণের কাছে সরকার প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। সে কারণে একটা ব্যবস্থা নিতেই হবে।

এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কালো হাত যেগুলো ছিল, সেগুলো যাতে আর না বাড়তে পারে সে জন্য আমরা অ্যাকশন নেব। আপনারা বলতে পারেন আমরা ভয় পাচ্ছি। আমি মনে করি, যারা এর সঙ্গে জড়িত তারাই ভয় পায়। পরিবহনের কথা বলে যারা বাজার মেনিপুলেট করেছে, তাদের চিহ্নিত করেছি। সার্বিক প্রতিবেদন আমরা সরকারের ওপরের মহলে দেব। যেসব তথ্য পেয়েছি সেগুলো আমরাও বুঝে গেছি, আপনারাও বুঝে গেছেন। এখন সরকারের কাছে রিপোর্ট যাবে।’

অনুষ্ঠানে প্যারাগন, আফতাব বহুমুখী ফার্ম, কাজী ফার্মসহ বেশ কয়েকটি বড় উৎপাদনকারী ও করপোরেট পর্যায়ের ডিম খামারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

এদিনের আলোচনায় ডিমের দৈনিক দর নির্ধারণে সাভারে কাজী ফার্মের একজন ডিস্ট্রিবিউটরের দৈনন্দিন নিলাম পদ্ধতিতে হস্তক্ষেপ করার বিষয়টি বারবার উঠে আসে, যেটিকে ‘অনৈতিক’ বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।

কাজী ফার্মের পরিচালক ও ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জাহিন হাসান অনুষ্ঠানের শুরুতে বলেন, ‘বাজারে কয়েকদিনের সরবরাহ সংকটের কারণে মূল্য বেড়ে যাওয়ায় এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। তার দাবি, কাজী ফার্মসের যে নিলাম পদ্ধতি হয় সেটা অত্যান্ত স্বচ্ছ এবং নিলামে যে দাম উঠে তার চেয়ে কম দামেই তারা ডিম বিক্রি করে থাকেন বা মূল্য নির্ধারণ করে থাকেন।’

সভায় ব্যবসায়ী ফয়সাল অনুষ্ঠানে উপস্থিত না হওয়া প্রসঙ্গে কাজী ফার্মের একজন প্রতিনিধি বলেন, ওই ব্যবসায়ী অসুস্থতার কারণে অসতে পারেননি।

বৈঠকে অন্যান্য ১০-১২ জন এজেন্ট বা ডিলারকে হাজির করার কথা থাকলেও কেন তাদের হাজির করা হয়নিÑসে বিষয়ে কোনো বক্তব্য আসেনি কাজী গ্রুপের পক্ষ থেকে। অনুষ্ঠানে আসা অভিযোগগুলো খণ্ডন বা ব্যাখ্যা দেয়ার বিষয়েও তেমন তৎপরতা দেখা যায়নি তাদের। আলোচনায় ভোক্তা অধিদপ্তরের ঢাকা জেলা কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল জব্বার বলেন, ‘১ আগস্ট কাজী ফার্মের অফার মূল্য ছিল ৮ টাকা ৭৫ পয়সা, যা ১৩ আগস্টে এসে ১০ টাকা ৯০ পয়সা হয়েছে। ২ টাকা ১৫ পয়সা অফার প্রাইস বেশি হয়েছে। কাজী গ্রুপের রিজিওনাল সেলস ম্যানেজার নিশ্চিত করেছেন এই কয়দিনে উৎপাদন খরচ এক পয়সাও বাড়েনি।’