ডুমসডে ভল্ট

পৃথিবী ধ্বংস নিয়ে প্রায়ই মাতামাতি চলে। পৃথিবীর শেষ দিন বা ডুমসডে নিয়ে জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই। হয়তো তাই উত্তর মেরুতে নির্মাণ করা হয়েছে এসভালবার্ড গ্লোবাল সিড ভল্ট। এটি ডুমসডে ভল্ট নামেও পরিচিত। প্রাকৃতিক কিংবা মানবসৃষ্ট কোনো বিপর্যয়ই সংরক্ষণাগারটি ধ্বংস করতে পারবে না। অর্থাৎ ভয়ংকর কোনো দুর্যোগ হলে কোনো একটি প্রজাতির খাদ্যশস্য যেন পৃথিবী থেকে হারিয়ে না যায় তা নিশ্চিত করা এর উদ্দেশ্য। মানবসভ্যতার ভবিষ্যৎ বিবেচনায় তৈরি হয়েছে এটি।

নর্থপোল থেকে ৮০০ মাইল দূরে নির্মাণ করা হয়েছে ভল্টটি। এখানে রয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় রেফ্রিজারেটর। নরওয়ের দ্বীপপুঞ্জ এসভালবার্ডের স্পিটসবারজেন দ্বীপের একটি বেলেপাথরের পাহাড় কেটে নির্মাণ করা হয়েছে সংরক্ষণাগারটি। পাহাড়টির ১২০ মিটার গভীরে এর অবস্থান। এখানে ভূমির অভ্যন্তরীণ গঠনমূলক ক্রিয়াকলাপ অনুপস্থিত। তা ছাড়া অঞ্চলটি বরফাচ্ছাদিত। এলাকাটি ১৩০ মিটার উঁচুতে অবস্থিত। বিজ্ঞানীদের ভাষায়, বরফের পৃষ্ঠভাগ গলে গেলেও ভল্টটি শুষ্ক থাকবে।

২০০৮ সালে এর উদ্বোধন করা হয়। নানা ধরনের খাদ্যশস্য বীজ সংরক্ষণ দিয়ে শুরু হয় এর কার্যক্রম। এরপর বনজ উদ্ভিদের বীজ সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ইতোমধ্যে বিশ্বের প্রায় সব ধরনের বীজ সংরক্ষণ করা হয়েছে নিজ নিজ সরকারের মাধ্যমে নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে। আন্তর্জাতিকভাবে আদর্শ মানের তাপমাত্রা -১৮ ডিগ্রি তাপমাত্রায় রাখা হয়েছে বীজগুলো। এগুলো অক্ষত থাকবে শতাব্দীর পর শতাব্দী। চার ভাঁজের একধরনের বিশেষ প্যাকেটে রাখা হয়েছে বীজ। ফলে প্যাকেটের ভেতরে আর্দ্রতা ঢুকতে পারে না। কয়েকটি কক্ষে রাখা হয়েছে বীজগুলো। এগুলোকে বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কক্ষ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এখানকার নিরাপত্তাব্যবস্থায় কোনো ঘাটতি নেই।

এখানে তিনটি সাব-ভল্ট রয়েছে। বর্তমানে এর একটি ব্যবহার করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে ব্যবহারের জন্য দুটি খালি রাখা আছে। অর্থাৎ নতুন প্রজাতি কিংবা বিলুপ্ত বীজের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ভল্ট দুটি। বর্তমানে এখানে নয় লাখ ৩০ হাজার বীজ সংরক্ষিত আছে।

এসভালবার্ড গ্লোবাল সিড ভল্টের দশম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপন উপলক্ষে এরই মধ্যে বিশ্বের অনেক দেশ বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। এ উপলক্ষে ভল্টের জন্য অস্ট্রেলিয়া সরকার প্রায় ৩০ হাজার ধরনের বীজ সরবরাহ করবে। বিশ্বের প্রায় সব অঞ্চল থেকেই বীজ সংগ্রহ করা হবে তখন।