Print Date & Time : 10 September 2025 Wednesday 8:18 pm

ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বাত্মক ব্যবস্থা নিন

এক দিনে ডেঙ্গুতে রেকর্ড ১৯ জনের মৃত্যুর খবর প্রকাশিত হয়েছে গতকালের শেয়ার বিজে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ খবর জানানো হয়েছে। সেটির তথ্য, একই সঙ্গে ওই সময়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে সারাদেশে আরও এক হাজার ৭৯২ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন। চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে সারাদেশে এখন পর্যন্ত ২৫ হাজার ৭৯২ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। এদিকে চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত ১৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশে কোনো বছরের প্রথম ছয় মাসে ডেঙ্গুর এমন ভয়াবহ রূপ আর কখনও দেখা যায়নি।

ডেঙ্গু নিয়ে আমাদের মধ্যে একধরনের আত্মতৃপ্তি রয়েছে। মন্ত্রীরা নানা কথা বলেন। যেমন বুধবার সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ‘ডেঙ্গু ও অন্যান্য মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে গৃহীত কার্যক্রম পর্যালোচনার লক্ষ্যে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা’ শেষে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেছেন, ব্যর্থতার তো কারণ নেই। ব্যর্থ হলে তো এখন দেশে ২০-৩০ লাখ রোগী হয়ে যেতেন। এখন পর্যন্ত মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড ও ভারতের চেয়েও আমরা ভালো অবস্থানে আছি। এখন পর্যন্ত আমাদের ২৪ হাজার সংক্রমণ হয়েছে। এ উপমহাদেশে মশা বেড়েছে চলতি জুলাইয়ে। জুন মাসে মালয়েশিয়ায় ছিল ৪৬ হাজার। আমি তাহলে কী করে আমাদের লোকজনকে ব্যর্থ বলব।

মন্ত্রীরা যতই বাগাড়ম্বর করেন না কেন ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে জনস্বাস্থ্যবিদ ও চিকিৎসকদের আশঙ্কা, এবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা অন্য সব বছরকে ছাড়িয়ে যেতে পারে। আর আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়লে বাড়তে পারে মৃত্যুর সংখ্যাও। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মহামারিতে যেমন তৎপরতা নেয়া হয়ে থাকে, তেমন করে প্রস্তুতির তাগিদ দিচ্ছেন জনস্বাস্থ্যবিদেরা।

ডেঙ্গু মোকাবিলায় সর্বাত্মক ব্যবস্থা নেয়া জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। মন্ত্রীরা অবশ্যই সাহস জোগাবেন, কিন্তু এটিকে হালকা করে দেখার সুযোগ নেই। যখন কারও আপনজনের প্রাণহানি ঘটবে, তখন এ ধরনের বক্তব্য তামাশা হিসেবে নেবে সাধারণ মানুষ। ডেঙ্গুর কার্যকারণ সবার জানা; কর্তৃপক্ষ, প্রশাসন, সাধারণ মানুষ কার কী করণীয়, এটিও এখন সবাই জানে। তবু ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যাওয়া সরকারের ব্যর্থতারই নামান্তর। ব্যর্থতা কি শুধু মানুষের মৃত্যুসংখ্যা দিয়েই নির্ধারিত হবে! অবশ্য মন্ত্রী একথাও বলেছেন, সফলতার দাবি তখনই করব, যখন একজন মানুষও আক্রান্ত হবে না, একজনেরও মৃত্যু হবে না।

আমরা কাজ করছি না, যোগ্যতা নেইÑসে বিতর্ক করার সময় এখন নয়; এখন কথা নয়, কাজের সময়। এডিস মশার বিস্তার রোধে সবাইকে শামিল হতে হবে। কারও ওপর দায় না চাপিয়ে সবাইকে নিজ অবস্থান থেকে ব্যবস্থা নিতে হবে। কোথায় এডিস মশার নিরাপদ আবাসস্থল, এটি এখন কারও অজানা নয়। ‘সমন্বিত মশক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা’ গড়ে তুলতে হবে। বিজ্ঞানভিত্তিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। প্রচারসর্বস্ব কার্যক্রম পরিচালনা করলে সুফল মিলবে না। বছরজুড়েই মশা নিধনের কাজ করতে হবে। মাঠপর্যায়ে মশা মারার কাজ নিয়মিত তদারকি করা দরকার। নিয়ম মেনে যথাস্থানে মানসম্পন্ন ওষুধ ছিটানো হচ্ছে কি না, সেটা তদারকি করতে হবে।