ডেঙ্গু প্রতিরোধে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানকে সম্পৃক্ত করুন

দেশের অন্তত ৬০ জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা। রোগীর ভিড় সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতালগুলো। দম ফেলার ফুরসত নেই স্বাস্থ্যকর্মীদের। কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, পরিস্থিতির ধারাবাহিক অবনতি হওয়ায় ডেঙ্গুতে বিপুলসংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে সিটি করপোরেশন এলাকায় ডেঙ্গু প্রতিরোধে কিছু পদক্ষেপ নেয়া হলেও তৃণমূল পর্যায়ে মশক নিধন কার্যক্রম নেই। এ অবস্থায় দেশজুড়ে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

ডেঙ্গুর ভয়াবহতা সারাদেশে ছড়ালেও কিট সংকটে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ব্যাহত হওয়ার  উপক্রম। এ অবস্থায় জরুরি ভিত্তিতে সব হাসপাতালে পর্যাপ্ত কিট সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে।

ডেঙ্গু প্রতিরোধে সবাইকে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি মানুষের ঘরবাড়ি ও আশপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং জমানো পানি পরিষ্কার রাখতে হবে। হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্তদের জন্য মশারি টানিয়ে আলাদা ব্যবস্থা করা হয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে সচেতন হলে হয়তো নাগরিকের নিজ বাসগৃহ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা সম্ভব। কিন্তু বড় পরিসরে সুফল পেতে মশার বংশবৃদ্ধি ও বিস্তার রোধ কার্যক্রমে ইউনিয়ন, পৌরসভাসহ সব স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানকে সম্পৃক্ত করতে হবে।

কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, দেশে ১২৩ প্রজাতির মশা রয়েছে। মশা সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে মশার প্রজাতি ও আচরণভেদে নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা আলাদা হতে হবে। মশাকে সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে প্রয়োজন সমন্বিত ব্যবস্থাপনার। সমন্বিত ব্যবস্থাপনার চারটি অংশ রয়েছে। প্রথমত, মশার প্রজননস্থল কমানো এবং ধ্বংস করে পরিবেশগত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সহজভাবে মশা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। দ্বিতীয়ত, জীব নিয়ন্ত্রণ, অর্থাৎ উপকারী প্রাণীর মাধ্যমে মশাকে নিয়ন্ত্রণ করার বিভিন্ন পদ্ধতি উন্নত বিশ্বে প্রচলিত আছে। তৃতীয়ত, মশা নিয়ন্ত্রণে লার্ভিসাইড এবং অ্যাডাল্টিসাইড কীটনাশক ব্যবহার করা। আর জনগণের সম্পৃক্ততা ছাড়া মশা নিয়ন্ত্রণে সফল হওয়া অসম্ভব। তাই এ প্রক্রিয়ায় জনগণকে সম্পৃক্ত করার জন্য উদ্যোগ নেয়া দরকার।

সমন্বিত মশক ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে বাস্তবায়নে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি পাড়া-মহল্লাকে তদারকির আওতায় এনে কার্যক্রম চালাতে হবে। প্রতি ইউনিটে থাকবেন এন্টোমলজি টেকনিশিয়ান, স্প্রেম্যান ও ক্লিনার থাকবেন।  প্রতিটি ওয়ার্ডে থাকবেন সুপারভাইজার থাকবেন। এসব কাজ বাস্তবায়নে অভিজ্ঞ কীটতত্ত্ববিদ দিয়ে আধুনিক এবং সময়োপযোগী  নির্দেশিকা তৈরি করে নিতে হবে। দেশের সব জেলায় জেলা কীটতত্ত্ববিদের পদ রয়েছে। সব জেলায় পদে যোগ্য কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়ে মশা নিয়ন্ত্রণের কাজ জোরদার করতে হবে। 

ডেঙ্গুর সংক্রমণের দায়ী এডিস মশার জš§ হয় জমে থাকা পানিতে। তাই কোথায় পানি জমে আছে কি না, সপ্তাতে অন্তত দুবার ক্রাশ প্রোগ্রাম পরিচালনা করতে হবে। পানি জমে থাকা পাত্র যদি এমন হয় যে, পানি ফেলে দেয়া যাচ্ছে না, তাহলে সেখানে ব্লিচিং পাউডার বা লবণ দিতে হবে। কারও বাড়ির পাশে কোনো নির্মাণাধীন ভবন থাকলে, সেটির মালিককে সামাজিকভাবে চাপ প্রয়োগ করতে হবে যেন বাড়িতে মশা জš§ানোর স্থান তৈরি সৃষ্টি না হয়।

বিশ্বের কোনো দেশই জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া কোনো রোগ নিয়ন্ত্রণে সাফল্য পায়নি। সেটি বিবেচনায় রেখে এডিশ মশা নিয়ন্ত্রণে নাগরিকদের সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ নিতে হবে।