নিজস্ব প্রতিবেদক: ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তর পারটেক্স গ্রুপের প্রতিষ্ঠানের ড্যানিশ ফুডস লিমিটেডের বিরুদ্ধে তদন্ত করে প্রায় তিন কোটি ৪৬ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকি উদ্ঘাটন করেছে। ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ পাওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ভ্যাট আইনে মামলা করা হয়েছে।
ড্যানিশ ফুডস লিমিটেডের অফিস রাজধানীর তেজগাঁওয়ের শান্তা ওয়েস্টার্ন টাওয়ারে। এর কারখানা নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইলে অবস্থিত। ভ্যাট গোয়েন্দার সহকারী পরিচালক আলমগীর হুসেনের নেতৃত্বে একটি দল প্রতিষ্ঠানটির ২০১৭ সালের জুলাই হতে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত সময়কালের কার্যক্রম তদন্ত করে।
তদন্তকালে প্রতিষ্ঠান কর্তৃক দাখিলকৃত দলিলাদি, প্রতিষ্ঠানটির মূসক পরিশোধ-সংক্রান্ত ট্রেজারি চালান, দাখিলপত্র যাচাই করে মূসক আইনের বিদ্যমান বিধান, সংশ্লিষ্ট প্রজ্ঞাপন ও সাধারণ আদেশ অনুসরণ করে তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়।
ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি তদন্ত মেয়াদে বিভিন্ন সেবা খাতের বিপরীতে উৎসে মূসক বাবদ ১২ লাখ ছয় হাজার টাকা ভ্যাট পরিশোধ করেছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির প্রদেয় ভ্যাটের পরিমাণ ছিল ৩১ লাখ ৭৯ হাজার ২৭২ টাকা। এতে অপরিশোধিত ভ্যাট বাবদ ১৯ লাখ ৭৩ হাজার ২৭২ টাকার ফাঁকি উদ্ঘাটন করা হয়। এই ফাঁকির ওপর ভ্যাট আইন অনুসারে মাসভিত্তিক দুই শতাংশ হারে দুই লাখ ৩২ হাজার ৮৪৬ টাকা বিলম্বজনিত সুদ প্রযোজ্য হবে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, তদন্ত মেয়াদে বিজ্ঞাপনের বর্ধিত মূল্যের ওপর নেয়া অতিরিক্ত রেয়াতও ধরা পরে, যার ওপর ৬৪ লাখ ২১ হাজার ৮০৬ টাকা ভ্যাট প্রযোজ্য ছিল। কিন্তু প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ তদন্ত মেয়াদে উল্লিখিত খ্যাতসমূহে এ ভ্যাট পরিশোধ না করায় ওই অর্থও প্রতিষ্ঠানের নিকট আদায়যোগ্য। এছাড়া সাড়ে সাত শতাংশ উপকরণ মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় সংশোধিত মূল্য ঘোষণা না দেয়ায় বর্ধিত মূল্যের ওপর গৃহীত রেয়াত কর্তন বাবদ তিন কোটি ৭০ লাখ ৮১ হাজার ১৩৮ টাকা ভ্যাট প্রযোজ্য ছিল। কিন্তু প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ এক কোটি ১১ লাখ ১৮ হাজার ৬৫৪ টাকা সমন্বয় করায় অপরিশোধিত ভ্যাট বাবদ দুই কোটি ৫৯ লাখ ৬২ হাজার ৪৮৪ টাকা আদায়যোগ্য।
সব মিলিয়ে ২০১৭ সালের জুলাই হতে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত সময়কালের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির মোট অপরিশোধিত ভ্যাটের পরিমাণ তিন কোটি ৪৩ লাখ ৫৭ হাজার ৫৬২ টাকা এবং সুদ বাবদ প্রাপ্য দুই লাখ ৩২ হাজার ৮৪৬ টাকা। সব মিলিয়ে তিন কোটি ৪৫ লাখ ৯০ হাজার ৪০৮ টাকা পরিহারের তথ্য উদ্ঘাটিত হয়। এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠান অপরিশোধিত ভ্যাটের অভিযোগ মেনে নিয়ে স্বেচ্ছায় ও স্বপ্রণোদিত হয়ে দুই কোটি ৪৫ লাখ ৯০ হাজার ৪০৮ টাকা জমা প্রদান করে ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তরকে জানিয়েছে।
তদন্তকালে প্রতিষ্ঠানের বক্তব্য ও দলিলাদির ভিত্তিতে আইনানুগ প্রক্রিয়া অনুসরণে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। তদন্তে উদ্ঘাটিত পরিহারকৃত বাকি রাজস্ব আদায় ও আইনানুগ পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণের লক্ষ্যে মামলাটি সংশ্লিষ্ট ভ্যাট কমিশনারেট ঢাকা পূর্বে প্রেরণ করা হয়েছে।
একইসঙ্গে, প্রতিষ্ঠাটির ভ্যাট ফাঁকি দেয়ার প্রবণতা থাকায় এর সার্বিক কার্যক্রমের ওপর বিশেষ নজরদারি রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট কমিশনারেটকে মনিটরিং করার জন্যও অনুরোধ করা হয়েছে।