ড্যাপ বাস্তবায়নে রাজউকের সক্ষমতা বাড়ানো হোক

বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ), ২০১৬-২০৩৫ বাস্তবায়নের সক্ষমতা রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) নেই বলে মত দিয়েছে নগর পরিকল্পনাবিদদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি)। শনিবার রাজধানীতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ বক্তব্য উঠে আসে। বিআইপি নেতারা বলছেন, রাজধানীবাসীর একটি সমস্যার সমাধানও রাজউক দিতে পারেনি। তাদের প্রধান কাজ উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ। সেখানেও তারা ব্যর্থ হয়েছে। রাজধানীর কয়টি ভবন তারা নিয়ম মেনে করতে পেরেছে? তাদের প্রতিবেদনেই আছে তারা এ কাজে ব্যর্থ।

রাজউকের সক্ষমতা বাড়াতে পেশাজীবীদের দিয়ে রাজউক বোর্ড গঠনের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন পারিকল্পনাবিদরা; বলেছেন, সংশোধিত ড্যাপ ভালো হলেও তা বাস্তবায়ন করতে হলে স্থানীয় সরকার সংস্থাগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক ও সমন্বয় করতে হবে।

ঢাকা মহানগর উন্নয়ন পরিকল্পনা বা ডিএমডিপি রাজউক প্রণয়ন করে ড্যাপ। এর সাধারণ উদ্দেশ্য ছিল ডিএমডিপি’র কাঠামো পরিকল্পনা এবং নগর অঞ্চল পরিকল্পনার নীতি ও সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করা। উদ্দেশ্যসাধনে রাজউক কতটা সফল হয়েছে, সে বিষয়ে রাজধানীবাসীর অভিজ্ঞতা ইতিবাচক নয়। এখনও সামান্য বৃষ্টিতে রাজধানীর স্থলভাগের বিস্তীর্ণ এলাকা হাঁটুপানির নিচে চলে যায়। নগরবাসী সংস্থাটির কার্যক্রমে আস্থাশীল নয়। কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে বিরক্তি প্রকাশ করা ছাড়া সাধারণ মানুষ ভোগান্তি লাঘবে কিছু করতেও পারে না।

আমরা লক্ষ করেছি, সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ এবং বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ-সমালোচনা খুব একটা আমলে নেয় না রাজউক। কারও পরামর্শ নিলে ছোট হওয়ার কিছু নেই। বরং নগর ও নগরবাসীর উন্নয়নে পরিকল্পনাবিদের প্রতিবেদনকে গুরুত্ব দিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া উচিত বলেই আমরা মনে করি। বিভিন্ন সময়ে জলাবদ্ধতা এবং অগ্নিকাণ্ডের পর এলাকা-ভবনের নকশা নিয়ে রাজউকের সংশ্লিষ্ট শাখা ও কর্মকর্তাদের গাফিলতি সামনে এসেছে।

ড্যাপ অনুযায়ী রাজধানীতে অবকাঠামো ও স্থাপনা-ভবন নির্মিত হচ্ছে কি না, তা যাচাইয়ের করার সক্ষমতা রাজউকের নেই, এ সমস্যা দীর্ঘদিনের। এ সমস্যার কথা নীতিনির্ধারকেরা জানেন। রাজউকও অজ্ঞাত কারণে সমস্যার সমাধানে আন্তরিক নয় বলে অনেকের ধারণা। দেশে নীতিমালা ও আইনকানুনের কোনো ঘাটতি নেই।

মাঠপর্যায়ের পরিদর্শকেরা শুধু ভবন নির্মাণে কতটুকু খালি জায়গা রাখা হয়েছে, সেটি দেখেন। কিন্তু কাঠামোগত নকশা অনুযায়ী ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে কি না, পানি সরানোর ব্যবস্থা আছে কি না, এসব দেখা হচ্ছে না। বিদ্যমান বাস্তবতায় যেকোনো পরিকল্পনা করাই কঠিন। আমাদের মনে রাখতে হবে, বাস্তবায়নেই পরিকল্পনার সাফল্য। খুব ভালো পরিকল্পনা করা হলো, কিন্তু তা বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেই। পরিকল্পনা প্রণয়নের মাধ্যমে সবাইকে সন্তুষ্ট করা সম্ভব নয়। জলাভূমি ও কৃষিজমি সংরক্ষণ করা প্রয়োজন, কিন্তু জমির মালিকেরা চান না তাদের জমি কৃষি বা জলাধার হিসেবে চিহ্নিত হোক। ড্যাপে ভূমি ব্যবহারের শ্রেণিগুলো নির্ধারণ করা হয়েছে। কোন এলাকায় কতটুকু জলাশয় থাকবে, রাস্তা কত প্রশস্ত হবে, সেটি চিহ্নিত করে দেয়া আছে। নির্দিষ্ট সময় অন্তর কাজের অগ্রগতি মূল্যায়ন করা গেলে ড্যাপ বাস্তবায়ন কঠিন হবে না।