ঢাকাকে নিরাপদ নগরী বানাতে উদ্যোগ নিন

গতবারের চেয়ে নিরাপদ শহরের তালিকায় তলানি থেকে দুই ধাপ এগিয়েছে ঢাকা শহর। ডিজিটাল, স্বাস্থ্য ও অবকাঠামো নিরাপত্তার সূচকে যৎসামান্য স্বস্তি দিলেও ব্যক্তিগত উন্নয়ন সূচকে এসেছে ভয়াবহ শঙ্কা। দুনিয়াজুড়ে নগরায়ণ বাড়ছে তুমুল গতিতে। কিন্তু তার সমূহ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় খুবই নাজুক দশা সৃষ্টি হয়েছে। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় এখনই উদ্যোগ না নিলে নগরায়ণের ধাক্কায় নগরবাসী, ব্যবসায়ী ও ভ্রমণকারীরা সারা বিশ্বে এক শোচনীয় পরিস্থিতিতে পর্যদস্তু হবে। ঢাকার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা পরিস্থিতির ১২ ধাপ অধঃগতিকে বিপদ সংকেত হিসেবে মেনে নিয়ে পরিস্থিতি মিটমাট করতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বাণিজ্যবিষয়ক সাময়িকী দি ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের তৃতীয়বারের তালিকায় ৬০টি শহরের মধ্যে এবার ঢাকা শহর মাত্র দুই ধাপ এগিয়ে ৫৬তম অবস্থানে তলানিতেই রয়ে গেল। চারটি সূচকে নির্ণিত এই নিরাপত্তা স্তরে ঢাকার ডিজিটাল নিরাপত্তা এক ধাপ, স্বাস্থ্য নিরাপত্তা দুই ধাপ, সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় থাকা অবকাঠামো নিরাপত্তা একেবারে তলানি থেকে এক ধাপ এগিয়েছে; এবারের জরিপে ব্যক্তিগত নিরাপত্তার সূচকটি ১২ ধাপ অধঃপতিত হওয়ায় ভয়াবহ আশঙ্কা তৈরি করেছে। এই লাগামহীন ব্যক্তিগত অনিরাপত্তা ঠেকানো না গেলে ঢাকাবাসী এবং এখানকার ব্যবসায়ী ও ভ্রমণকারীদের জন্য এক অশনি সংকেত সৃষ্টি হবে। এক্ষেত্রে ঢাকার জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার গুরুত্ববহ হয়ে ওঠে। কেননা, গবেষণাটিতে দেখানো হয়েছে বর্তমান বিশ্বে মোট জনসংখ্যার ৫৬ শতাংশ মানুষ শহরে বাস করছে এবং ২০৫০ সালের মধ্যে হারটি বেড়ে দাঁড়াবে ৬৮ শতাংশে। তবে গড়পড়তায় বিশ্ব প্রেক্ষাপটে নগর জনসংখ্যার হার বৃদ্ধিতে নগর বিস্তৃতিকেই প্রধান কারণ হিসেবে লক্ষ্য করা গেলেও ঢাকার চিত্র ভিন্ন। এখানে যে হারে নগর বিস্তৃতি পাচ্ছে তার চেয়ে অনেক বেশি হারে একটি নির্দিষ্ট এলাকার মধ্যে গত ১০ বছরের প্রতিবছরই সাড়ে চার লাখ জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। বাণিজ্য, প্রশাসন ও অন্যান্য খাতে ঢাকাকেন্দ্রিক সন্নিবেশন হ্রাস করতে না পারলে নিশ্চয় এই ঝুঁকি সামনের দিনে আরও বাড়বে। জান ও মালের নিরাপত্তার সূচকটিও এ গবেষণায় এসেছে তলানিতে। আইনশৃঙ্খলা, রাষ্ট্রীয় ও প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিশ্রুতি প্রতিপালনের চেয়ে দুর্নীতি, প্রতারণা, অব্যবস্থাপনা বেড়েই চলেছে। ফলে সুশাসন প্রায় শূন্যের কোটায়। সর্বোপরি, ব্যক্তিগত নিরাপত্তার অধঃগতি লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়লেও স্বাস্থ্য, ডিজিটাল ও অবকাঠামো পরিস্থিতি দীর্ঘকাল ধরেই যে অব্যবস্থাপনার মধ্যে রয়েছে, তার উন্নয়ন ঘটাতে না পারলে এই শহর একসময় বসবাস অযোগ্য বলে গণ্য হতে পারে।
বিপুল উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের পরেও এই আশঙ্কা যেন সত্যি না হয় তার জন্য রাষ্ট্রজনকে যথাযথ আশু উদ্যোগ নিতে হবে।