Print Date & Time : 16 August 2025 Saturday 1:05 pm

তথ্য গোপন করে ভ্যাট ফাঁকি ফেমাস গ্রুপের দুই প্রতিষ্ঠানের

নিজস্ব প্রতিবেদক: ফেমাস গ্রুপের দুটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রায় ৮০ কোটি টাকার বেশি বিক্রয় গোপন করার অভিযোগ উঠেছে। যার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি প্রায় সাড়ে ১৩ কোটি টাকা ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে। মূসক নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর (ভ্যাট গোয়েন্দা) এই বিক্রয় গোপন ও ভ্যাট ফাঁকি উদঘাটন করেছে। প্রতিষ্ঠান দুটি হলো ফেমাস প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেড ও ফেমাস আইবারকেম ফ্লেভারস অ্যান্ড ফ্র্যাগন্যান্সেস লিমিটেড। গতকাল দুটি প্রতিষ্ঠানের নামে ভ্যাট ফাঁকির মামলা করা হয়েছে। ভ্যাট গোয়েন্দার মহাপরিচালক ড. মইনুল খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

ড. মইনুল খান বলেন, প্রতিষ্ঠান দুটির করপোরেট অফিস রাজধানীর গুলশান-১ এলাকায়। প্রতিষ্ঠান দুটি মূলত খাদ্যসামগ্রীতে ব্যবহƒত কেমিকেল (ফ্লেভার) ও বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মোড়কের প্যাকেজিং সামগ্রী উৎপাদন ও সরবরাহ করে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানটি প্রকৃত সেবা বিক্রির তথ্য গোপন করে চালান ব্যতীত সেবা সরবরাহ করে দীর্ঘদিন ধরে সরকারের বিপুল পরিমাণ ভ্যাট ফাঁকি দিয়ে আসছে মর্মে ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তরে অভিযোগ দায়ের করেন। এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সংস্থার উপপরিচালক মোহাম্মদ সাজেদুল হক ও মুনাওয়ার মুরসালীনের নেতৃত্বে গত ২৩ নভেম্বর প্রতিষ্ঠানের প্রধান করপোরেট অফিসে অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে গোয়েন্দার দল দেখতে পান, প্রতিষ্ঠানটি প্রকৃত ঘোষিত বিক্রয় তথ্য গোপন করে মাসিক দাখিলপত্রে প্রকৃত বিক্রয় তথ্য গোপন করে ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে।

অভিযানের শুরুতে কর্মকর্তারা প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট-সংক্রান্ত ও বাণিজ্যিক দলিলাদি প্রদর্শনের জন্য অনুরোধ করা হয়। এরপর প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি চালিয়ে ও প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটারে ধারণকৃত তথ্যাদি যাচাই করে সেবা বিক্রি-সংক্রান্ত বাণিজ্যিক দলিলাদি লুকানো অবস্থায় আটক করা হয়। এসব তথ্য ভ্যাট দলিলাদির সঙ্গে ব্যাপক অসামঞ্জস্য পরিলক্ষিত হয়। তদন্ত অনুসারে, ফেমাস প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেড ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত ব্যাংকিং তথ্য অনুসারে ৮৬৯ কোটি ১০ লাখ ৮১ হাজার ৭২২ টাকার পণ্য বিক্রি করেছে। তবে প্রতিষ্ঠানটি স্থানীয় গাজীপুর ভ্যাট সার্কেল-৫-এ মাসিক রিটার্নে ৮২৭ কোটি ৯০ লাখ ৭১ হাজার ২৪৫ টাকা বিক্রির হিসাব প্রদর্শন করেছে। রিটার্ন ও প্রকৃত বিক্রয়ের পার্থক্য পাওয়া যায় ৫৩ কোটি ৪৮ লাখ ৩ হাজার ৫১২ টাকা। প্রকৃত বিক্রয় তথ্য গোপন করায় এক্ষেত্রে ৬ কোটি ৯৭ লাখ ৫৬ হাজার ৯৮০ টাকা ভ্যাট ফাঁকি হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এই ফাঁকির ওপর ভ্যাট আইন অনুসারে মাসভিত্তিক ২ শতাংশ হারে ২ কোটি ৪১ লাখ ৫৬ হাজার ৮৩৫ টাকা সুদ প্রযোজ্য। এছাড়া ফেমাস আইবারকেম ফ্লেভারস অ্যান্ড ফ্র্যাগন্যান্সেস লিমিটেড প্রতিষ্ঠানটি ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ৪৭ কোটি ৩৮ লাখ ৯২ হাজার ৬৫১ টাকার পণ্য বিক্রি করেছে। তবে প্রতিষ্ঠানটি স্থানীয় ভ্যাট টঙ্গী সার্কেল-৪-এ মাসিক রিটার্নে ২০ কোটি ৫৯ লাখ ৩৭ হাজার ২৩০ টাকা বিক্রির হিসাব প্রদর্শন করেছে। রিটার্ন ও প্রকৃত বিক্রয়ের পার্থক্য পাওয়া যায় ২৬ কোটি ৭৯ লাখ ৫৫ হাজার ৪২১ টাকা। প্রকৃত বিক্রয় তথ্য গোপন করায় এক্ষেত্রে ৩ কোটি ৪৯ লাখ ৫০ হাজার ৭০৭ টাকা ভ্যাট ফাঁকি হয়েছে। এই ফাঁকির ওপর ভ্যাট আইন অনুসারে মাসভিত্তিক ২ শতাংশ হারে ৪৫ লাখ ৭৮ হাজার ৮১৬ টাকা সুদ প্রযোজ্য। তদন্ত মেয়াদে প্রতিষ্ঠান দুটির সর্বমোট অপরিশোধিত ভ্যাটের পরিমাণ ১০ কোটি ৪৭ লাখ ৭ হাজার ৬৮৭ টাকা এবং সুদ বাবদ ২ কোটি ৮৭ লাখ ৩৫ হাজার ৬৫১ টাকাসহ সর্বমোট ১৩ কোটি ৩৪ লাখ ৪৩ হাজার ৩৩৮ টাকা রাজস্ব পরিহারের তথ্য উদঘাটিত হয়। ফেমাস গ্রুপের দুটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ভ্যাট আইনে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তদন্তে পরিহারকৃত ভ্যাট আদায়ে আইনানুগ পরবর্তী কার্যক্রম নেয়ার জন্য প্রতিবেদন ঢাকা উত্তর ভ্যাট কমিশনারেটে পাঠাতে বলা হয়েছে।