সরকারি সংস্থা রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়ের (জš§ ও মৃত্যুনিবন্ধন) ওয়েবসাইট থেকে সম্প্রতি দেশের নাগরিকদের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ফাঁস হয়ে যায়। এ তথ্য ফাঁস হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট দপ্তর তদন্ত কমিটি গঠন করে। কিন্তু সেই কমিটি তথ্য ফাঁসের আদ্যোপান্ত কোনো কিছুই উদ্ঘাটন করতে পারেনি। এমনকি তথ্য ফাঁস হওয়ার পেছনে কী ধরনের দুর্বলতা কাজ করেছে, তাও উদ্ঘাটিত হয়নি। অথচ নাগরিকদের তথ্য এভাবে ফাঁস হওয়াটা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং সরকারি ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিদের শপথ ভঙ্গের শামিল। কেননা সরকারের মন্ত্রীরা শপথ নেয়ার সময় জনগণের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে সচেষ্ট থাকার কথা সশ্রদ্ধ চিত্তে উচ্চারণ করে থাকেন। এত বড় একটি ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরও সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা এ বিষয়ে একেক সময় একেক ধরনের মনগড়া বক্তব্য দিয়ে চলেছেন। এখন পর্যন্ত নাগরিকদের তথ্য ফাঁসের বিষয়ে সামগ্রিক কোনো ধারণা পাওয়া যায়নি।
দৈনিক শেয়ার বিজে গতকাল এ বিষয়ে ‘কী পরিমাণ তথ্য ফাঁস, তা তদন্ত প্রতিবেদনে আসেনি’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনের তথ্যমতে, যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক অনলাইন গণমাধ্যম টেকক্রাঞ্চের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনমতে দেশের একটি সরকারি সংস্থার ওয়েবসাইটের মাধ্যমে লাখ লাখ মানুষের তথ্য ফাঁস হয়েছে। ৫০ লাখ মানুষের তথ্য ফাঁস হয়েছে বলে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছিল। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কত মানুষের তথ্য ফাঁস হয়েছে, সে বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনো তথ্য তুলে ধরতে পারেনি এ-সংক্রান্ত তদন্ত কমিটি। তবে তথ্য যে ফাঁস হয়েছে, সে বিষয়টি স্বীকার করেছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। বিষয়টি স্বীকার করলেও ফাঁস হওয়ার ঘটনায় কারা দায়ী, তাদের চিহ্নিত করা যায়নি। ইচ্ছাকৃতভাবে তথ্য ফাঁসের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের রক্ষা করার চেষ্টা করা হচ্ছে কি না, সে বিষয়টিও নিশ্চিত নয়। এ বিষয়ে একটি কথা উল্লেখ করা প্রয়োজন। সম্প্রতি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ থেকে দেশের বিদ্যুৎ খাতের ওপর একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। ওই প্রতিবেদনে দেশের বিদ্যুৎ খাতে বর্তমানে চলমান ক্যাপাসিটি চার্জের ব্যবস্থাকে একটি লুটেরা মডেল হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল। এতে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হয় বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। এর জেরে প্রতিবেদনটি তৈরির সঙ্গে যুক্ত দুই সরকারি কর্মকর্তাকে প্রথমে ওএসডি এবং পরে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করার কাজে জড়িত থাকার অপরাধে যদি কোনো কর্মকর্তা চাকরিচ্যুত হন, তাহলে যে নাগরিকদের সেবা দেয়ার জন্যই সরকার এবং যে নাগরিকদের কেন্দ্র করেই রাষ্ট্রের অস্তিত্ব বিদ্যমান, সেই নাগরিকদের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের নিরাপত্তা দিতে যারা ব্যর্থ হয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে কেন কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে না? আমরা মনে করি, নাগরিকদের তথ্য ফাঁস হওয়া সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরের চরম ব্যর্থতার বহিঃপ্রকাশ। কাজেই এর সঙ্গে যদি কারও দায়িত্বে অবহেলার বিষয়টি জড়িত থাকে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া অত্যাবশ্যক বলে মনে করি। এ বিষয়ে সরকার যথাযথ পদক্ষেপ নেবে বলেই আমাদের প্রত্যাশা। পাশাপাশি নাগরিকদের তথ্যের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতেও সরকার সচেষ্ট হবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।