বিমার আইআইএমএস নিয়ে বির্তক

তদন্ত চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে বীউনিক

রাহমান আরিফ: বিমা খাতের জাল-জালিয়াতি বন্ধ ও স্বচ্ছতা আনতে ভূমিকা রাখছে ইন্স্যুরেন্স ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (আইআইএমএস)। তথ্য ও প্রযুক্তিনির্ভর ১০ ধরনের সেবার কল্যাণে বিমা বিষয়ে জনসচেতনতাও বাড়ছে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে ডিজিটাল এ সেবা নিয়ে সুযোগ পেলেই প্রশ্ন তুলছে খাতসংশ্লিষ্টরা। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর কিছু জীবন বিমা ও সাধারণ বিমা কোম্পানি নির্দেশনা মেনে তথ্য ও নির্ধারিত ফি দিচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে বিতর্ক এড়িয়ে গুরুত্বপূর্ণ এ সেবা চালু রাখতে চায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (বীউনিক)। আইআইএমএস চালুর সময় দুয়ার সার্ভিসেসের সঙ্গে চুক্তিসহ পুরো প্রক্রিয়ায় আইন লঙ্ঘন হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে চিঠি দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।

বিমা খাতের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে ২০১৯ সালে চালু করা আইআইএমএসকে আরও কার্যকর করতে চায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা। সেজন্য নতুন করে এই ব্যবস্থার বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে বীউনিকের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, বিমা খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার পাশাপাশি বিমা বিষয়ে জনসচেনতা বাড়াতে বিমা কোম্পানির পলিসির তথ্য খুদেবার্তা ও ই-মেইলে সংশ্লিষ্ট গ্রাহককে পাঠাতে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (বীউনিক) ২০১৯ সালের ১৭ জানুয়ারি বেসরকারি কোম্পানি দুয়ার সার্ভিসেসের সঙ্গে চুক্তি করে। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে চুক্তির কিছু শর্ত সংশোধন, সংযোজন ও পরিমার্জন করে খুদেবার্তার খরচ কমিয়ে আনে। সেইসঙ্গে খুদেবার্তা ও ই-মেইলের পাশাপাশি ডিজিটাল পলিসি রেপোজিটরি, ই-কেওয়াইসি, ই-রিসিপ্ট, পেমেন্ট গেটওয়ে ও বিজনেস ইন্টেলিজেন্স টুলস সেবা যুক্ত করে। এরপর বিমা তথ্য অ্যাপ ও এজেন্ট লাইসেন্স অনলাইন মডিউলও (এএলও) যুক্ত করা হয়। সব মিলিয়ে প্রায় ১০টি রেগুলেটরি সেবা দিচ্ছে বীউনিক।

নিয়ন্ত্রক সংস্থার দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানিয়েছে, বিমা খাতে ডিজিটাইজেশনের মাধ্যমে বিমা কোম্পানিগুলোর কার্যক্রম তত্ত্বাবধান ও তদারকি আরও সহজ হয়েছে। বিমা গ্রাহকরাও এখন নিয়মিত বিমা-বিষয়ক তথ্য পাচ্ছেন। সেইসঙ্গে বিমা-বিষয়ক অন্যান্য তথ্য পাওয়ার পথও সুগম হয়েছে। আধুনিকায়নের কারণে বিশৃঙ্খল বিমা খাতে শৃঙ্খলা ফিরছে। পাশাপাশি বিমা পলিসি তামাদি হয়ে যাওয়া ও কাগজপত্রের অভাবে সময়মতো বিমা দাবি না পাওয়ার মতো জটিলতাও কমছে। নিয়ম ভঙ্গ করা কোম্পানি চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার পথও সুগম হয়েছে। তাই সময়ের সঙ্গে ইন্স্যুরেন্স ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমকে আরও কার্যকর করার পথে যাচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

বিমা খাতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলেও শুরু থেকেই ইন্স্যুরেন্স ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম নিয়ে বিমা কোম্পানিগুলোর মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) পক্ষ থেকে বিরোধিতা করা হয়েছে। ২০২৪ সালের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর এ সিস্টেম নিয়ে জটিলতা আরও বেড়ে যায়। এ খাতের ব্যয় ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের নিরাপত্তাসহ কিছু বিষয়ে প্রশ্ন তোলে বিআইএ। নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশনা না মেনে কিছু কোম্পানি নির্ধারিত ফি ও তথ্য দেয়া বন্ধ করে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে বৈঠকেও বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়। এ নিয়ে শেয়ার বিজসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।

নিয়ন্ত্রক সংস্থার দায়িত্বশীল সূত্রগুলোর দাবি, বিমায় ডিজিটাইজেশনের কারণে জাল-জালিয়াতির পথ বন্ধ হয়েছে। কোম্পানিগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রক সংস্থার মনিটরিং বেড়েছে। আইন না মানায় অনেক কোম্পানিকে জরিমানার মুখে পড়তে হচ্ছে। এসব কারণে বিমা কিছু কোম্পানি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে শুরু থেকেই এ কার্যক্রমের বিপক্ষে কথা বলছে। আর সব বিতর্ক এড়িয়ে এ বিষয়ে কাজ করতে চায় বিমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এর অংশ হিসেবেই দুয়ার সার্ভিসেসের সাথে চুক্তির বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি পাঠাল বীউনিক।

বীউনিকের পক্ষ থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়কে দেয়া চিঠিতে জানানো হয়েছে, কিছু গণমাধ্যমে ইন্স্যুরেন্স ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম বিষয়ে নেতিবাচক সংবাদ প্রচারিত হচ্ছে। যেখানে ‘এ সেবা চালুর সময় সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান নির্বাচনে সরকারি বিধিবিধান যথাযথভাবে অনুসরণ করা হয়নি’ বলে অভিযোগ করা হচ্ছে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) পক্ষ থেকে এ বিষয়ে অভিযোগ করা হয়েছে। সেইসঙ্গে বিআইএ ও বিভিন্ন বিমা কোম্পানি অসহযোগিতা করে আসছে। তারা বিমা পলিসির বিভিন্ন তথ্য এবং এ বিষয়ে নির্ধারিত ফি পরিশোধেও অনীহা দেখাচ্ছে। তাই ইন্স্যুরেন্স ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম বিদ্যমান আইন ও বিধিবিধান অনুসরণ করা হয়েছে কি না, চুক্তিতে কোনো ধরনের অনিয়ম বা দুর্নীতি হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে চায় বিমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা। তাই অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে পাঠানো চিঠিতে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠনের অনুরোধ জানিয়েছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ।