তাণ্ডবের ঘটনায় থমথমে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, আটক ১৪

প্রতিনিধি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া: ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরকে কেন্দ্র করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ব্যাপক তাণ্ডবের ঘটনায় বিরাজ করছে থমথমে অবস্থা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ১০ প্লাটুন বিজিবি সদস্য গান-কার নিয়ে শহরের বিভিন্ন এলাকায় টহল দিচ্ছে। শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ ও এবিপিএন সদস্য। হামলার ঘটনায় এ পর্যন্ত ১৪ জনকে আটক করা হলেও হয়নি কোনো মামলা। তবে এক তরুণ নিহত হওয়ার ঘটনায় হয়েছে অপমৃত্যুর মামলা।

মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফর ঘিরে সৃষ্ট আন্দোলনের জেরে গত শুক্রবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের বিভিন্ন সরকারি ভবনে তাণ্ডব চালায় আন্দোলনকারীরা। এ সময় তারা সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে টায়ারে আগুন লাগিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। পরে বিক্ষুব্ধরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে রেলস্টেশনে গিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। রেলস্টেশনের সিগন্যাল, মাস্টার রুম, কন্ট্রোল রুমসহ অন্য কর্মকর্তাদের কক্ষে ব্যাপক ভাঙ্চুর চালিয়ে সব মালামাল জড়ো করে আগুন ধরিয়ে দেয়, তুলে ফেলে রেল লাইনের সিøপার। সিগন্যাল বক্স ভেঙে

ধরিয়ে দেয়া হয় আগুন। এর ফলে রাজধানীর সঙ্গে সিলেট ও চট্টগ্রামের সব ধরনের ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। ঢাকাগামী কর্ণফুলী এক্সপ্রেস ট্রেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশনে প্রবেশকালে বিক্ষুব্ধদের পাথর নিক্ষেপ করতে থাকলে ট্রেনটি আখাউড়া জংশনে ফিরে যায়।

শুক্রবার বিকাল সোয়া ৫টার দিকে জেলা পরিষদ কার্যালয়ে আন্দোলনকারীরা হামলা চালায়। শহরের কাউতলী ও ভাদুঘরে ভাঙচুর করে। সড়কে আগুন ধরিয়ে তারা রাস্তায় অবরোধ করে। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের খাঁটিহাতা বিশ্বরোড মোড়, কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের শহরতলীর নন্দনপুর, সুহিলপুর, মজলিশপুর, ঘাটুরাসহ বিভিন্ন স্থানে সড়কে সৃষ্টি করে প্রতিবন্ধকতা। বন্ধ হয়ে যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সঙ্গে দেশের বিভিন্ন স্থানে দূরপাল্লার সড়ক যোগাযোগ। শহরের জেলা পরিষদ, পৌর মুক্তমঞ্চ, পৌর মার্কেটসহ বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীরা বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভেঙে ফেলে। প্রধান সড়কে বন্ধ করে দেয় যানবাহন চলাচল। মুহূর্তে সব দোকানপাট বন্ধ হয়ে গোটা

শহর পরিণত হয় ভুতুড়ে নগরে। বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে টায়ার জ্বালিয়ে করতে থাকে বিক্ষোভ।

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বিভিন্ন স্থানে আলোকসজ্জা, সড়ক সজ্জিতকরণ ব্যানার-ফেস্টুন ভেঙে আন্দোলনকারীরা আগুন ধরিয়ে দেয়। শহরের বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত সিসিটিভি ক্যামেরা ভাঙচুর করে। উগ্র বিক্ষুব্ধরা নরেন্দ্র মোদিবিরোধী সেøাগান দেয়। একটা সময়ে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও জেলা জজের বাসভবনের মূল ফটকে চালায় হামলা। পরবর্তী সময়ে প্রায় ৫০০ বিক্ষুব্ধ লোক পুলিশ সুপার কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে গ্যারেজে থাকা গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। ভাঙচুর করে ভবনের নিচতলার জানালা। একই সময় জেলা মৎস্য অফিস, সিভিল সার্জন অফিস, ২নং পুলিশ ফাঁড়ি, জেলা পরিষদের ডাকবাংলোয় করে অগ্নিসংযোগ। পুড়িয়ে দেয় বেশ কয়েকটি গাড়ি।

বিকালের দিকে শহরের কাউতলী এলাকার দাতিয়ারা গ্রামের সাগর মিয়ার ছেলে আশিক (২৫) গুরুতর আহত হলে জেলা সদর হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসারত অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। পরে বিক্ষুব্ধরা লাশ নিয়ে শহরের প্রধান সড়কে বিক্ষোভ করে। লাশ মাদ্রাসায় নিয়ে যায় তারা। রাতে শহরে বিজিবি মোতায়েন করা হয়। শনিবার দুপুরে ময়নাতদন্তের পর আশিকের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ বিষয়ে হয়েছে অপমৃত্যুর মামলা।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার ওসি আবদুর রহিম জানান, হামলার ঘটনায় ১৪ জনকে আটক করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। তবে আশিক নামের যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের হয়েছে একটি অপমৃত্যুর মামলা।

জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খান জানান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ১০ প্লাটুন বিজিবি দায়িত্ব পালন করছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।

আজ রোববার হেফাজতে ইসলাম আহূত হরতালের সমর্থনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মিছিল হয়েছে। গতকাল শনিবার দুপুরে হেফাজতে ইসলাম ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উদ্যোগে জামিয়া ইউনুছিয়া মাদরাসা চত্বর থেকে একটি মিছিল বের হয়ে শহরের প্রধান সড়ক টিএ রোড প্রদক্ষিণ করে। পরে ফকিরাপুলে অনুষ্ঠিত সংক্ষিপ্ত সমাবেশ বক্তব্য রাখেন মাওলানা সাজিদুর রহমান, মাওলানা মুফতি মোবারক উল্লাহসহ অন্যরা। এ সময় বক্তারা মোদির বাংলাদেশ সফরের নিন্দা জানান। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মাদরাসা ছাত্রদের ওপর হামলা ও  হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ জানিয়ে বিচারবিভাগীয় তদন্ত দাবি করেন। সেইসঙ্গে দেশব্যাপী হরতাল সফল করার লক্ষ্যে সবার প্রতি আহ্বান জানান তারা।