আলোচনা সভায় বক্তারা

তামাকের ব্যয় পেনশন স্কিমে যুক্ত হলে অর্থনীতি শক্তিশালী হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক: ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সী তরুণরা তামাকের পেছনে বছরে ৫০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে, যা দেশের বার্ষিক বাজেটের সাত শতাংশের বেশি। দেশে বর্তমানে প্রতি আটজনের একজন (দুই কোটি ১০ লাখ) পুষ্টিকর খাবার পাচ্ছে না। তামাকজাত দ্রব্যের কর ও মূল্য উচ্চহারে বৃদ্ধি করে এই বাড়তি রাজস্ব জনগণের জন্য পুষ্টিকর খাবারে ভর্তুকিতে ব্যয় করা হলে ২৭ লাখ মানুষের জীবন বাঁচানো সম্ভব হবে। এছাড়া তরুণদের তামাক ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করার পাশাপাশি সঞ্চয়ে উদ্ধুদ্ধ করা গেলে তাদের ভবিষ্যৎ উন্নয়ন এবং দেশের সার্বিক অর্থনীতির উন্নয়ন হবে।

তরুণদের সঞ্চয় মানসিকতা এবং তামাক ব্যবহারের ফলে সম্ভাব্য অর্থনৈতিক ক্ষতি মূল্যায়ন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ প্রদানের জন্য ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্ট ও বাংলাদেশ তামাকবিরোধী জোটের (বাটা) উদ্যোগে ঢাকা শহরের কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ১৮-৩০ বছর বয়সী তরুণদের ওপর একটি জরিপ পরিচালনা করা হয়। জরিপের ফলাফল প্রকাশ ও তরুণদের সঞ্চয়ে উৎসাহী করতে গতকাল রাজধানীর বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রে ‘যুবকদের তামাক ব্যবহার হ্রাস: জনস্বাস্থ্য রক্ষা ও পেনশন কর্মসূচি জোরদার’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

বাংলাদেশ তামাকবিরোধী জোটের সমন্বয়কারী সাইফুদ্দিন মাহবুব আহমেদের সভাপতিত্বে এবং ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের হেড অব প্রোগ্রাম সৈয়দা অনন্যা রহমানের সঞ্চালনায় সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রকল্প কর্মকর্তা মিঠুন বৈদ্য। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান কবিরুল ইজদানী খান, সম্মানিত অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের মহাপরিচালক ড. মো. এনামুল হক, স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের মহাপরিচালক ড. মো. এনামুল হক, অর্থ মন্ত্রালয়ের যুগ্ম সচিব ড. একেএম আতিকুল হক, জাতীয় রাজস্ব বের্ডের সাবেক চেয়ারম্যান নাসিরউদ্দিন আহমেদ, তামাক নিয়ন্ত্রণ বিশেষজ্ঞ এবং ভাইটাল স্ট্র্যাটিজিসের জ্যেষ্ঠ কারিগরি উপদেষ্টা সৈয়দ মাহবুবুল আলম।

কবিরুল ইজদানী খান বলেন, তরুণদের তামাক সেবনের মতো অস্বাস্থ্যকর খাতে ব্যয় নিরুৎসাহিত করে পেনশন স্কিমে অর্থ জমা করতে উদ্ধুদ্ধ করা চিন্তা খুবই প্রশংসনীয়। আমাদের জনগণের এ ধরনের অপ্রয়োজনীয় ও অস্বাস্থ্যকর ব্যয় পরিহার করতে হবে এবং পেনশন স্কিমে জমা করার মতো কাজে উৎসাহী করতে হবে। তিনি তামাকজাত দ্রব্যের ওপর পেনশন সারচার্জ যুক্ত করার বিষয়ে আলোকপাত করেন। তিনি বলেন কল্যাণকর রাষ্ট্র গড়ে তুলতে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাড়াতে হবে। আর এজন্য পেনশন স্কিম শক্তিশালী করার কোনো বিকল্প নেই।

ড. মো. এনামুল হক বলেন, তরুণ প্রজš§কে স্থায়িত্বশীল জনশক্তিকে রূপান্তরিত করতে তামাক, কোমল পানীয়সহ সব অস্বাস্থ্যকর দ্রব্যের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিট মূলত গবেষণার আলোকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে পলিসি অ্যাডভোকেসি করে থাকে। জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে তামাক এবং অস্বাস্থ্যকর খাদ্য নিয়ন্ত্রণের ওপর গুরুত্বারোপ করে এ বিষয়ে গবেষণা করার পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে।

নাসিরউদ্দিন আহমেদ বলেন, তামাক ভবিষ্যৎ প্রজšে§র ক্ষতি করছে। এটি নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজন বহুমাত্রিক উদ্যোগ। তামাক ও অস্বাস্থ্যকর পণ্য নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি টেকসই ও সুসংগঠিত সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ে আওতাভুক্ত করার জন্য জনগণকে উৎসাহিত করা প্রয়োজন।

সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, রোগের চিকিৎসার মাধ্যমে স্বাস্থ্য সুরক্ষা সম্ভব নয়। তামাক, সুগার ও সুইট অ্যান্ড বেভারেজ (এসএসবি) ব্যবহারে মানুষকে নিরুৎসাহিত করতে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। অস্বাস্থ্যকর খাবারের পেছনে অর্থ ব্যয় না করে সে অর্থ পেনশনের জন্য জমা করা হলে জাতীয় অর্থনীতি এবং নিজেদের অর্থনৈতিক জায়গাটা শক্তিশালী হবে। তামাক ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি তরুণদের সঞ্চয়ী মানসিকতা বৃদ্ধিও জরুরি। তিনি আরও বলেন, অস্বাস্থ্যকর খাবারের ওপর উচ্চহারে কর বৃদ্ধি করে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় বিনিয়োগ বৃদ্ধি প্রয়োজন।

সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, স্বাস্থ্যকে শুধু চিকিৎসাকেন্দ্রিক ভাবনার মধ্যে আবদ্ধ রাখা যাবে না। যাতে গড় আয়ু বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মানুষ দীর্ঘদিন সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে পারে, কর্মক্ষম থাকতে পারে, সেজন্য নিরাপদ খাদ্য, উন্নত হাঁটার পরিবেশ নিশ্চিত এবং স্বাস্থ্যকর জীবনাচারে জনগণকে উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা শক্তিশালী করা জরুরি। জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে তরুণদের তামাক ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করার পাশাপাশি জাতীয় পেনশন স্কিম গ্রহণে উৎসাহী করার বিষয়ে তিনি গুরুত্বারোপ করেন।

সভায় অংশগ্রহণকারীরা আরও বলেন, তামাকজাত দ্রব্যের ওপর ৩০ শতাংশ কর বৃদ্ধি করে এই অর্থ সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয়কৃত বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে একটি বড় ভূমিকা রাখবে। তামাক ব্যবহার কমিয়ে জাতীয় পেনশন স্কিমে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এছাড়া সভা থেকে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে ধূমপায়ীদের জন্য বিভিন্ন সরকারি সুযোগ-সুবিধা হ্রাসের আহ্বান জানানো হয়।