Print Date & Time : 6 July 2025 Sunday 4:30 pm

তামাক কোম্পানির রাজস্ব ফাঁকি বন্ধ হোক

তামাকপণ্যের করকাঠামো যুগোপযোগী করার জন্য তামাকবিরোধী সংগঠনগুলোর দাবি দীর্ঘদিনের। দাবির যৌক্তিকতা স্বীকার করলেও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ (এনবিআর) সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকরা এ বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ নিচ্ছে না বলেও অভিযোগ রয়েছে। এনবিআর ও নীতিনির্ধারকদের এমন অবস্থানে অনেকেই বলছেন, তামাকপণ্য উৎপাদনকারী ও বাজারজাত কোম্পানির প্রস্তাবই মেনে নেয়া হচ্ছে। অথচ তামাকপণ্যে যুগোপযোগী ও কার্যকর করারোপের মাধ্যমে তামাক পণ্যোর দাম বাড়ানো গেলে রাজস্ব আদায় বাড়ত।

দীর্ঘদিনের অভিযোগ, তামাক কোম্পানিগুলো উচ্চস্তরের সিগারেট নি¤œস্তরের বলে ঘোষণা দিয়ে রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার সুযোগ নিচ্ছে। সিএসআরের আওতায় কিছু সামাজক কার্যক্রম পরিচালনা করলেও তামাক কোম্পানিগুলোর অবস্থান অনেকটা গরু মেরে জুতা দানের সঙ্গে তুলনীয়। ২০১৬ পঞ্জিকাবর্ষেই দেশের বৃহত্তম তামাকপণ্য উৎপাদন ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানি লিমিটেড (বিএটিবি) রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে দুই হাজার ৫৪ কোটি টাকা। গতকাল প্রকাশিত শেয়ার বিজের প্রতিবেদনের তথ্য: স্থানীয়ভাবে তামাক পাতা সংগ্রহ করা হয়েছে প্রায় ৭৪৫ কোটি টাকার, যা বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে। কিন্তু মূসক রিটার্নে দেখানো হয়েছে প্রায় ৫৫৪ কোটি টাকা। প্রায় ১৯১ কোটি টাকার তামাক পাতা কম দেখানো হয়েছে। এই তামাক পাতা দিয়ে তৈরি করা হয়েছে প্রায় এক হাজার ৮১১ কোটি নি¤œস্তরের ডার্বি ও পাইলট সিগারেট। এই সিগারেট বিক্রির ওপর প্রায় দুই হাজার ৫৪ কোটি টাকার মূসক ও সম্পূরক শুল্ক ফাঁকি দিয়েছে বিএটিবি। ২০১৬ সালেই অর্থাৎ কেবল এক বছরে এই ফাঁকি দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ২০১৮ সালের এক তদন্তে এ ফাঁকি উদ্ঘাটিত হয়। এরপর দুটি তদন্ত কমিটির দ্বিধাবিভক্ত মতামতের পর ২০২১ সালে অব্যাহতি পেয়ে যায় বিএটিবি। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। অব্যাহতির আদেশ বাতিল করে দিয়েছে এনবিআর। সম্প্রতি এনবিআর গঠিত কমিটির পর্যালোচনা শেষে সে সময়ের এলটিইউর কমিশনারের দেয়া আদেশ বাতিল করা হয়েছে। সঙ্গে কমিটির পর্যালোচনায় এই রাজস্ব ফাঁকির প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সব অনিয়ম উঠে এসেছে। এই রাজস্ব আদায়ে এলটিইউকে নির্দেশ দেয়ার পর সম্প্রতি এলটিইউ ফাঁকি দেয়া এই রাজস্ব আদায়ে বিএটিবিকে নোটিশ জারি করেছে। এনবিআর সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

ধূমপান সব বিবেচনায়ই স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এটির মূল কাঁচামাল তামাক। তামাক নিয়ন্ত্রণে ২০০৩ সালে প্রণীত হয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি)। এতে প্রথম স্বাক্ষরকারী দেশ বাংলাদেশ। এদিকে ধূমপানজনিত রোগে আক্রান্ত রোগী ও প্রাণহানির ঘটনাও বাড়ছে। গবেষণায় উঠে এসেছে, দেশে প্রতি বছর তামাকজনিত রোগের চিকিৎসায় ৩০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হলেও রাজস্ব আসে মাত্র ২০ হাজার কোটি টাকা। এখন আমরা জানতে পারছি সেই রাজস্বও যথানিয়মে পরিশোধ করা হচ্ছে না। এ খাতের বৃহত্তম প্রতিষ্ঠান বিএটিবি যখন এ ফাঁকি দিচ্ছে, তখন অন্যরা যে ফাঁকি দিচ্ছে না, তা বোধকরি নিশ্চিত বলা যায় না। নিয়ন্ত্রক সংস্থা তদারকি না করলে রাজস্ব ফাঁকি চলতেই থাকবে। করযোগ্য ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে কর না দিলে তা আদায়ে রাষ্ট্রকে অবশ্যই কঠোর হতে হবে।