শেয়ার বিজ ডেস্ক: জার্মানিতে নানা ধরনের ধাতু চুরি করছে কয়েকটি অপরাধী চক্র। নাজেহাল হতে হচ্ছে সাধারণ মানুষ ও বিভিন্ন ব্যাবসায়িক সংস্থাদের। তামার দাম বাড়ায় আরো জটিল হচ্ছে পরিস্থিতি। খবর: ডয়চে ভেলে।
জার্মান রেল সংস্থা ডয়চে বানের সময় গত কয়েক বছর ধরেই ভালো যাচ্ছে না৷ কয়েক দশক ধরে ঠিকঠাক মেরামতের কাজ না হওয়ায় অবকাঠামোর বেহাল দশা, অর্থায়নেও তেমন সুখবর আসছে না।
তার ওপর ২০২২ সালে ডয়চে বানের প্রায় ৭০ লাখ ইউরোর লোকসান হয়েছে তামা চুরির বাড়বাড়ন্তের ফলে, জানাচ্ছে জার্মান সংবাদপত্র হান্ডেলসব্লাট। এবছর, তামা চুরির ফলে দুই হাজার ৬৪৪টি ট্রেনের যাত্রা সময় স্বাভাবিকের চেয়ে ৭০০ ঘণ্টা বেশি, জানাচ্ছে এই সংবাদপত্রটি।
অপরাধীরা কেবল ডাক্ট ভেঙে তামা বা অন্যান্য দামি ধাতুচুরি করে, যা শুধু যাত্রীদের হয়রানির কারণই নয়, এমনকি দেশে সরবরাহ প্রক্রিয়াতেও তার প্রভাব পড়ে৷ ঘন ঘন ট্রেন দেরি হবার কারণে যাত্রীরাও হতাশ হচ্ছেন।
কিন্তু এই বিপাকে শুধু ডয়চে বানই না, বিভিন্ন ভবন নির্মাণের জায়গা থেকেও চুরি হচ্ছে এসব মূল্যবান ধাতু। বাদ পড়ছে না তামার প্রলেপ দেওয়া গির্জার ছাদও!
সবচেয়ে নজরকাড়া তামা চুরির ঘটনা ঘটে হামবুর্গের তামা উৎপাদক ও পুনর্ব্যবহারকারী সংস্থা অরুবিসের সঙ্গে৷ সংস্থাটির পক্ষে জানানো হয়, প্রায় দু’শ মিলিয়ন ইউরো মূল্যের তামা চুরি গেছে।
তামা: সরবরাহ চালাতে গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামাল
আগস্ট মাসের শেষে যখন এই চুরির কথা প্রকাশ্যে আসে, অরুবিস জানায় যে এর পেছনে কাজ করছে একটি অপরাধী চক্র। ইউরোপের সবচেয়ে বড় তামা উৎপাদক এই সংস্থাটি জানায় যে এই চুরির ফলে বার্ষিক লাভের টার্গেট থেকে অনেকটাই দূরে তারা।
বৈদ্যুতিক প্রযুক্তিতে তামার গুরুত্ব অনেকটাই, কারণ কার্বন নিউট্রাল হওয়ার জন্য বেশ কিছু খাতে তামার প্রয়োজনীয়তা বাড়ছে বলে জানালেন আর্থ রিসোর্স ইনভেস্টমেন্টের প্রধান ইওয়াখিম বেরলেনবাখ। তিনি আরো মনে করান যে ভবিষ্যতে আরো বাড়বে তামার ব্যবহার ও চাহিদা।
ডয়চে ভেলেকে বেরলেনবাখ বলেন যে ভবিষ্যতে তামার দাম কতটা বাড়েতা নির্ভর করছে চীন ও ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশে জীবনযাপনের মানের ওপর। যত এই মান উন্নত হবে, তত বাড়বে গাড়ি, বাতানুকূল যন্ত্রের মতো প্রযুক্তির ব্যবহার, যার জন্য তামা অত্যন্ত জরুরি কাঁচামাল।
অন্যদিকে, তামার বাড়ন্ত চাহিদার সাথে পাল্লা দিতে পারচে না তামার উৎপাদন৷ চিলে বা ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গোর মতো দেশে তামার পাশাপাশি রয়েছে ভূরাজনৈতিক জটিলতাও৷ ফলে, নতুন করে তামা খননে বিনিয়োগ তখনই আসবে যখন বিনিয়োগ থেকে লাভের সুযোগ থাকবে।
কোথায় যাচ্ছে চুরি হওয়া তামা?
অরুবিসের হিসাবের খাতায় কলমে তামা চুরির বিষয়টি লুকিয়ে থাকায় বেশ অনেক দিন ধরা পড়েনি। তাছাড়া, বিশাল পরিমাণে চুরি হওয়া তামা ইউরোপের পুনর্ব্যবহারযোগ্য পণ্যের বাজারে বিক্রি করা সহজ নয়, জানান জার্মান ধাতব পণ্য ব্যবসাযী সংস্থার রালফ শ্মিটৎজ।
জার্মান সংবাদপত্র টাগেসশ্পিগেলকে তিনি বলেন, ‘‘কী চুরি হচ্ছে তা ব্যবসায়ীরা জানেন৷ এই একই অবস্থা পাশের দেশ পোল্যান্ডেও৷ চুরি হওয়া তামার বড় অংশ ইউরোপে বিক্রি হয় না৷ আমার ধারণা, বেশিরভাগই কন্টেনারে বিদেশে চলে যায়।”
তামার বিকল্প?
জার্মানিতে তামা চুরির বিষয়ে বেরলেনবাখ বলেন, ‘‘এই তামা চুরির ঘটনা আমাকে সাউথ আফ্রিকার কথা মনে করাচ্ছে। এক সময় এমন ছিল যখন জোহানেসবুর্গের পাড়ায় সবক’টি টেলিফোন লাইন তুলে ফেলা হয়েছিল৷ নিশ্চয়ই কোনো সুপরিকল্পিত চক্র ছিল যাদের ভালো যোগাযোগ ছিল পেশাদার ক্রেতাদের সাথে।”
বেরলেনবাখের মতে এখনও তামার কেবল বা তারের কোনো বিকল্প এই মুহূর্তে নেই, কারণ এটা বিজ্ঞানের বিষয়।