নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম: বর্তমানে তালিকাভুক্ত ও তালিকাবহিভর্‚ত কোম্পানির মধ্যে করহারের ব্যবধান খুবই কম। আর পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হলে নানা ধরনের কমপ্লায়েন্স পরিপালন করতে হয়। এতে ব্যয় বেশি হয়। তাই ভালো কোম্পানি এই বাজারে আসতে আগ্রহী হয় না। তাই পুঁজিবাজারে ভালো কোম্পানির তালিকাভুক্তিকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির করহারের বর্তমান ব্যবধান ৭ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা যেতে পারে। গতকাল বাজেট-পরবর্তী এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিক্রিয়ায় এসব তথ্য জানান সিএসই’র চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাজেটের আকার প্রাক্কলন করা হয়েছে ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি, যা জিডিপির ১৫.২ শতাংশ। কিন্তু ঘোষিত বাজেটে পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্ট কিছু বিষয় বিবেচিত হয়নি। তা পুনঃবিবেচনার জন্য অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। বিগত অর্থবছরে বাজেটে পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্ট বিধানসমূহ বাজারবান্ধব ছিল। এ বছর আমাদের চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে দাবি করা হয়েছিল, বিদ্যমান বিধানসমূহ যেন অপরিবর্তিত থাকে। আমরা আনন্দিত যে, প্রায় সকল বিধান অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। তবে স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্যদের লেনদেনের ওপর বিদ্যমান উৎস কর ০.০১৫% নামিয়ে আনার সুপারিশ করা হয়েছিল, যা বাজেটে বিবেচিত হয়নি। তিনি বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের জন্য ১০% কর পরিশোধ করে পুঁজিবাজারে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুবিধা রহিত করা হয়েছে। এই সুবিধা আগামী বছর পর্যন্ত বহাল রাখার জন্য আমরা বিশেষভাবে অনুরোধ করছি। এতে বাজার যেমন শক্তিশালী হবে, তেমনি সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে, পাশাপাশি অর্থ পাচারও কমবে।
তিনি আরও বলেন, ব্রোকারেজ হাউসগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য পরিচালন খরচ বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি তীব্র প্রতিযোগিতার বাজারে ব্রোকারেজ সেবার কমিশন অত্যন্ত কমে আসার কারণে এই কর্তনকৃত অর্থ অধিকাংশ ক্ষেত্রে কার্যকর করদায় হিসেবে অধিক হয়। তাই উৎসে করহার হ্রাসে আমাদের প্রস্তাব পুনঃবিবেচনার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। এছাড়াও ব্রোকারদের বিও অ্যাকাউন্ট মেইনটেন্যান্স ফি হতে প্রাপ্ত আয় ১০০ টাকা হতে বিবেচ্য করকে উল্লিখিত ০.০১৫% উৎসে কর সংযুক্ত হয়েছে বলে বিবেচনা করার জন্য আবেদন করছি। অর্থনীতির অধিকতর আনুষ্ঠানিকীকরণ এবং এক ব্যক্তি কোম্পানির প্রতিষ্ঠা উৎসাহিত করার লক্ষ্যে প্রত্যাশিত বাজেটে এক ব্যক্তি কোম্পানির করহার ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২২ দশমিক ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
সিএসই অন্যান্য দাবির মধ্যে আছেÑপুঁজিবাজারের উন্নয়ন ও বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে পরিশোধিত মূলধনের ১০ শতাংশের অধিক শেয়ারের ক্ষেত্রে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে (আইপিও) আগত তালিকাভুক্ত কোম্পানির জন্য করহার ২২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে ১০ শতাংশ বা তার কম শেয়ার আইপিওর মাধ্যমে হস্তান্তরকারী লিস্টেড কোম্পানির করহার না কমিয়ে পূর্বের হার অর্থাৎ ২২ দশমিক ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। অন্যদিকে অতালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
কৌশলী বিনিয়োগকারী আকর্ষণ করাসহ স্টক এক্সচেঞ্জের কারিগরি এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য মূলধন পুনঃবিনিয়োগের প্রয়োজন হয়। বিনিয়োগকারীদের জ্ঞান, দক্ষতা ও দীর্ঘমেয়াদে একটি স্থিতিশীল পুঁজিবাজার গঠনের লক্ষ্যে সিএসইর আর্থিক সক্ষমতা প্রয়োজন হলেও বর্তমানে এক্সচেঞ্জসমূহের আয় উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। তাছাড়া চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশে প্রথম কমোডিটি এক্সচেঞ্জ গঠনের লক্ষ্যে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। এটি গঠন ও বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অবকাঠামোগত উন্নয়ন, কারিগরি সহায়তা, আইন-কানুন প্রণয়ন, প্রশিক্ষণ প্রদান ও গণসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হবে। তাই চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জের জন্য বর্তমানে বিদ্যমান করপোরেট করহার যা ৩০ শতাংশ, তা জুন ২০২৫ তারিখ পর্যন্ত শূন্য হারে নির্ধারণ করার জন্য দাবি জানাচ্ছি।
এছাড়া এসএমই কোম্পানিসমূহের জন্য প্রথম তিন বছর শূন্য হারে এবং পরবর্তী সময়ে ১৫ শতাংশ হারে কর নির্ধারণ করার প্রস্তাব করেছিলাম, যা সুবিবেচিত হয়নি। আর তালিকাভুক্ত কোম্পানির লভ্যাংশ বাবদ আয় থেকে কেটে রাখা করকে চ‚ড়ান্ত কর হিসেবে বিবেচনা, তালিকাভুক্ত কোম্পানি থেকে প্রাপ্ত নগদ লভ্যাংশ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয়কর মুক্ত। এই করমুক্ত লভ্যাংশের সীমা ১ লাখ টাকা পর্যন্ত নির্ধারণ করা যেতে পারে। মিউচুয়াল ফান্ড বা ইউনিট ফান্ড থেকে প্রাপ্ত নগদ লভ্যাংশ ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত আয়কর মুক্ত।