Print Date & Time : 6 July 2025 Sunday 4:11 am

তিন ঘন্টার জন্য সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের ’ভেল্কি’

বিশেষ প্রতিনিধি: পরপর তিন দিন সর্বোচ্চ উৎপাদনের রেকর্ড গড়েছে বিদ্যুৎ খাত। এ সময় ১৫ হাজার মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। তবে এ উৎপাদনে রয়েছে ফাঁকি। শুধু সন্ধ্যা থেকে রাতের কিছু সময় সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। পরে তা কমিয়ে আনা হয়। এমনকি সর্বোচ্চ উৎপাদনের (রাত ৯টা) তিন থেকে চার ঘণ্টার মধ্যে বড় ধরনের লোডশেডিং হয়। দিনে বিদ্যুৎ ‍উৎপাদন আরও কমিয়ে দেয়া হয়। এতে দিনেও বড় ধরনের লোডশেডিং হচ্ছে এক সপ্তাহ ধরে।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) তথ্য বিশ্লেষণ করে এ চিত্র পাওয়া গেছে। এতে দেখা যায়, গত তিন দিন ধরে সন্ধ্যা ৭টা বা সাড়ে ৭টায় বিদ্যুৎ উৎপাদন ১৫ হাজার মেগাওয়াট ছাড়ায়। রাত ৯টায় তা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। আর ১০টা বা সাড়ে ১০টার পর কমে আবার ১৫ হাজার মেগাওয়াটের নিচে নেমে আসে। তবে সর্বোচ্চ উৎপাদনের সময়ও উৎপাদন পর্যায়ে ৫০০-৬০০ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়। বিতরণ পর্যায়ে তা হাজার মেগাওয়াটের বেশি থাকে।

১৯ এপ্রিলের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ওইদিন রাত ৯টায় ১৫ হাজার ৬৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছিল, যা রেকর্ড। সে সময়ও উৎপাদন পর্যায়ে ঘাটতি ছিল ৪২৮ মেগাওয়াট। সেদিন সর্বোচ্চ লোডশেডিং ছিল রাত ১টায় এক হাজার ৮২০ মেগাওয়াট। ওই সময় বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ১২ হাজার ৬৯৬ মেগাওয়াট।

১৯ এপ্রিল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বিদ্যুৎ উৎপাদন ১৫ হাজার মেগাওয়াট অতিক্রম করে। সে সময় ১৫ হাজার ১২৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছিল। আর রাত ১০টায় উৎপাদন ছিল ১৫ হাজার ৪৪৮ মেগাওয়াট। সাড়ে ১০টায় তা ১৪ হাজার ৮৯৫ মেগাওয়াটে নেমে আসে। এরপর থেকে কমতে শুরু করে বিদ্যুৎ উৎপাদন আর বাড়তে থাকে লোডশেডিং।

এর আগের দিনের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ১৮ এপ্রিল রাত ৯টায় ১৫ হাজার ৬২৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছিল। ওই সময় উৎপাদন পর্যায়ে ঘাটতি ছিল ৪৮২ মেগাওয়াট। তবে সেদিন সর্বোচ্চ লোডশেডিং ছিল সকাল ৯টায় এক হাজার ৭৭২ মেগাওয়াট। ওই সময় বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ১১ হাজার ৯৯৭ মেগাওয়াট।

১৮ এপ্রিল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বিদ্যুৎ উৎপাদন ১৫ হাজার মেগাওয়াট অতিক্রম করে। সে সময় ১৫ হাজার ১৭২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছিল। আর রাত সাড়ে ১০টায় উৎপাদন ছিল ১৫ হাজার ৫৮ মেগাওয়াট। রাত ১১টায় তা ১৪ হাজার ৮৭৩ মেগাওয়াটে নেমে আসে। এরপর থেকে কমতে থাকে উৎপাদন আর বাড়তে থাকে লোডশেডিং।

একই ধরনের চিত্র ১৭ এপ্রিলেরও। ওইদিন রাত ৯টায় ১৫ হাজার ৬০৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছিল। ওই সময় উৎপাদন পর্যায়ে ঘাটতি ছিল ৫৮৯ মেগাওয়াট। তবে সেদিন সর্বোচ্চ লোডশেডিং ছিল রাত ১টায় দুই হাজার ২৫৪ মেগাওয়াট। ওই সময় বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ১২ হাজার ৫৫৪ মেগাওয়াট।

১৭ এপ্রিল সন্ধ্যা ৭টায় বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় ১৫ হাজার ৩৬ মেগাওয়াট। আর রাত সাড়ে ১০টায় উৎপাদন ছিল ১৫ হাজার ১৬১ মেগাওয়াট। রাত ১১টায় তা ১৪ হাজার ৮৪৫ মেগাওয়াটে নেমে আসে। এরপর থেকে কমতে থাকে উৎপাদন আর বাড়তে থাকে লোডশেডিং।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঊর্ধ্বতন পিডিবির কর্মকর্তারা বলেন, তেল-গ্যাস সংকটে চাইলেও পুরোদ্যমে উৎপাদন পরিচালনা করা যায় না। যে হারে গ্যাস ও তেল পাওয়া যায় সে অনুপাতে উৎপাদন করা হয়। তবে পিক আওয়ারে (রাত ৯টা) সর্বোচ্চ উৎপাদনের লক্ষ্যকে সামনে রেখে বিদ্যুৎ ‍উৎপাদন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। সাধারণত রাত ১১টায় সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলো চালু হয়ে যায়। এছাড়া রাতে বেশকিছু কারখানায় উৎপাদন চলে। এ কারণে ১১টা থেকে গ্যাস সরবরাহ কমে যায়। এতে বাধ্য হয়েই বিদ্যুৎ উৎপাদন কমাতে হয়।