শেয়ার বিজ ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রে গত ফেব্রুয়ারি মাসে মূল্যস্ফীতির হার বাড়লেও দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ বা ফেড চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল বলেছেন, ফেড চলতি বছর নীতি সুদহার কমানোর লক্ষ্যমাত্রা থেকে সরে আসবে না। তবে চলতি বছর তিনবার নীতি সুদহার হ্রাস করা হবে এবং সেই সঙ্গে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হারও ভালো থাকবে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। খবর: রয়টার্স।
ফেড গত বুধবার চলতি মাসের মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে। আগে ধারণা করা হয়েছিল, চলতি মাসেই নীতি সুদহার কমানো হবে। কিন্তু সেই পথে না হেঁটে ফেড নীতি সুদহার অপরিবর্তিত রেখেছে। ফলে দেশটির নীতি সুদহার এখন ৫ দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে ৫ দশমিক ৫০ শতাংশের মধ্যে, যা ২৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
সুদহার বেশি থাকার পরও যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি বেশ শক্তিশালী। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, অংশত এর কারণ হলো, মহামারির সময় বাড়ির মালিকরা যে অতি নিম্ন হারে বন্ধক রেখে পুনঃঅর্থায়নের সুবিধা পেয়েছিলেন। ফেডারেল রিজার্ভ তখন বন্ধকের সুদহার প্রায় শূন্যের কোঠায় নামিয়ে এনেছিল। ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা ৩ শতাংশ সুদে বন্ধকি ঋণ নিয়েছিলেন। এখন যার গড় সুদহার ৬ দশমিক ৭৪ শতাংশ। ২০২৩ সালের অক্টোবরে বন্ধকি ঋণের সুদহার ৭ দশমিক ৭৯ শতাংশে উঠে গিয়েছিল। এখন এই হার কমলেও ২০০৮ থেকে ২০২২ সালে তা যতটা ছিল, তার চেয়ে বেশি। এছাড়া গত কয়েক বছরে দেশটির নাগরিকদের আর্থিক ভিত্তি নানাভাবে শক্তিশালী হয়েছে, সে কারণে তাদের হাতে এখন সঞ্চয় রয়েছে এবং খুব একটা ঋণ করতে হচ্ছে না।
ফেডের অর্থনৈতিক পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্রের ২ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে। প্রবৃদ্ধির এই গতি দেশটির জিডিপি নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসের চেয়ে বেশি। গত বছরের ডিসেম্বরে ফেডের পূর্বাভাস ছিল, ২০২৪ সালে প্রবৃদ্ধি হবে ১ দশমিক ৪ শতাংশ; সেই তুলনায় এবারের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস যথেষ্ট বেশি।
ফেড আরও বলেছে, ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ যুক্তরাষ্ট্রের বেকারত্বের হার ৪ শতাংশে উঠতে পারে। বর্তমানে বেকারত্বের হার ৩ দশমিক ৯, অর্থাৎ বেকারত্বের হার এখনকার চেয়ে তেমন একটা বাড়বে না। মূল্যস্ফীতির গুরুত্বপূর্ণ একটি সূচকেরও এ বছর পতন হবে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে, যদিও তার হার খুব একটা বেশি হবে না।
সুদের হার ক্রমান্বয়ে কমানো হলেও ফেড মনে করছে, অর্থনীতি অতটা হোঁচট খাবে না, যদিও মহামারি-উত্তর সময়ে মূল্যস্ফীতির হার ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে চলে গিয়েছিল। জেরোম পাওয়েল বলেন, ফেব্রুয়ারির মূল্যস্ফীতির পরিসংখ্যানে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ বিষয়ে সতর্ক থাকবে, যে কথা তিনি আগেও বলেছেন।
চলতি বছর তিনবার নীতি সুদহার কমানোর কথা বলা হলেও কবে নাগাদ তা করা হবে, সে বিষয়ে পরিষ্কার কিছু বলেননি পাওয়েল। আগের মতোই তিনি বলেছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক যখন নিশ্চিত হবে যে মূল্যস্ফীতির হার দুই শতাংশ লক্ষ্যমাত্রার দিকে নামতে শুরু করেছে, তখনই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যেও যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি ভালো করছে। নীতি সুদহার এত বৃদ্ধির পরও কেন অর্থনীতি ভালো অবস্থায় রয়েছে, তা নিয়ে অর্থনীতিবিদরা কিছুটা বিস্মিত হলেও মানুষের সমস্যা হচ্ছে না।
ফেডারেল রিজার্ভের এই সিদ্ধান্ত বাইডেন প্রশাসন ভালোভাবে নেবে। সরকারও মনে করছে, প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকার পাশাপাশি বেকারত্বের হার কম থাকবে এবং ব্যবসায়ী ও ভোক্তা শ্রেণির জন্য সুদের হার কম থাকবে। ফেডের কর্মকর্তারা চলতি বছর তিনবার নীতি সুদহার হ্রাসের কথা বললেও তারা জানিয়েছেন, আগামী বছর চারবার নয়, বরং তিনবার নীতি সুদহার হ্রাস করা হতে পারে। অর্থাৎ ফেড কিছুটা ধীরে চলো নীতিতেই চলবে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পুঁজিবাজার একের পর এক রেকর্ড গড়ছে।