নিজস্ব প্রতিবেদক: তিন দিন পর অনশন ভাঙলেন প্রাথমিক স্তরে পাঠদানকারী শিক্ষকরা। প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজারের কাছ থেকে স্পষ্ট কোনো আশ্বাস না পেলেও নেতাদের অনুরোধে অনশন ভেঙেছেন ‘বেতন বৈষম্য’ নিরসনের দাবিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তিন দিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে আসা শিক্ষকরা।
শিক্ষক প্রতিনিধিদের সঙ্গে গতকাল সোমবার দুপুরে প্রায় এক ঘণ্টা আলোচনার পর সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যান প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী। সেখানে তিনি পানি ও ফলের রস খাইয়ে শিক্ষকদের অনশন ভাঙান।
বাংলাদেশ প্রাথমিক সরকারি শিক্ষক মহাজোটের নেতা মো. শামসুদ্দীন সাংবাদিকদের বলেন, ‘মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার প্রেক্ষিতে আমরা অনশন কর্মসূচি স্থগিত করলাম। আমরা মন্ত্রীর সঙ্গে আরও আলোচনা চালিয়ে যাব।’
সরকারি প্রাথমিক স্কুলে একজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক যেখানে একাদশ গ্রেডে বেতন পান, সেখানে একই শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে চাকরিতে প্রবেশ করা সহকারী শিক্ষকরা পান চতুর্দশ গ্রেডে।
এই ‘বৈষম্য’ কমিয়ে দ্বাদশ গ্রেডে বেতনের দাবিতে গত শনিবার থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনশন শুরু করেন সারা দেশ থেকে আগত শিক্ষকরা।
জাতীয় প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতি ও বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমাজ নামে তিনটি সংগঠনসহ সম্মিলিতভাবে বাংলাদেশ প্রাথমিক সরকারি শিক্ষক মহাজোটের ব্যানারে এই কর্মসূচিতে কয়েকশ শিক্ষক অংশ নেন।
অনশনে গত তিন দিনে অন্তত ৬০ জন অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
এই পরিস্থিতিতে গতকাল সোমবার দুপুরের পর শিক্ষক প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার। তার মিন্টো রোডের বাসায় প্রায় এক ঘণ্টার ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন প্রায় ১৫ শিক্ষক প্রতিনিধি।
সরকারি শিক্ষক মহাজোটের প্রতিনিধি মো. শামসুদ্দীন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মন্ত্রী সন্ধ্যায় শহীদ মিনারে গেছেন। আলোচনায় নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো অনশনরত শিক্ষকদের সামনে তুলে ধরে অনশন ভাঙান তিনি। মন্ত্রীর কথা শুনে শিক্ষকরাই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তারা অনশন ভেঙেছেন।
মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার বলেন, ‘প্রধান ও সহকারী শিক্ষকদের মধ্যকার বেতন বৈষম্য রয়েছে কি না, এটা আমরা খতিয়ে দেখব। তবে পুরো বিষয়টি সময়সাপেক্ষ। আলোচনা না করে এবং যৌক্তিকতা বিবেচনা না করে এখনই আমি আপনাদের কাগজপত্র দিয়ে দিতে পারব না।’
আন্দোলনরত শিক্ষকরা এ সময় চিৎকার করে মন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদ জানাতে থাকেন। শিক্ষক মহাজোটের নেতারা তখন তাদের শান্ত করার চেষ্টা করেন।
মো. শামসুদ্দীন শিক্ষকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমার আহ্বানে আপনারা অনশনে এসেছিলেন। আমরা এখন এই কর্মসূচি স্থগিত করতে চাই। আপনারা আমাকে এক মাস সময় দিন। এর মধ্যে আমি দাবি আদায় করে ছাড়ব।’
এরপর একপর্যায়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা শান্ত হন। আমাকে আমার কাজ করতে দিন।’ এরপর মন্ত্রীর হাত থেকে ফলের রস ও পানি নিয়ে কয়েকজন শিক্ষক নেতা অনশন ভাঙলে বাকিরাও অনশনের সমাপ্তি টানেন।