গ্রীষ্মকালীন ফল হিসেবেই পরিচিত তরমুজ। মধু মাসের এ ফলটি ছোট-বড় সবার কাছে প্রিয়। আশার কথা হলো, এখন থেকে বছরজুড়ে পাওয়া যাবে ফলটি। বারোমাস্যা তরমুজ চাষ করে এমন সম্ভাবনার পথ দেখিয়েছেন পাবনার কৃষক আনিছুর রহমান। এ তরমুজ চাষে ভাগ্য খুলেছে তার। দেখতে আকর্ষণীয়, খেতে সুস্বাদু তরমুজের বাজারে রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। এ কারণে চলতি মৌসুমে কৃষক আনিছুরের লাভের অংক বেড়েছে।
পাবনা সদর উপজেলার দাপুনিয়া গ্রামের কৃষক আনিছুর রহমান। প্রচলিত জাতের সবজি ও ফলের পাশাপাশি শখ ও কৌতূহলের বশে গত বছর ২০১৬ সালে পরীক্ষামূলকভাবে শুরু করেন থাই জাতের বারোমাস্যা তরমুজ চাষ। সফলতা পাওয়ায় এ বছর দেড় বিঘা জমিতে চাষ করেন কানিয়া, মুনিয়া ও সুইটব্ল্যাক নামের তিন প্রজাতির থাই তরমুজ। ফলন ও বাজারে তুলনামূলক ভাল দাম পাওয়ায় লাভের মুখ দেখেছেন তিনি। সঙ্গত কারনে ফসলটির প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছেন স্থানীয় কৃষকরাও। প্রতিদিনই আশেপাশের গ্রাম থেকে কৃষকরা দেখতে আসছেন আনিছুরের তরমুজ ক্ষেত।
আনিছুরের তরমুজ ক্ষেতে গিয়ে দেখা যায়, জমিতে তরমুজের জন্য তৈরি করা হয়েছে সারি সারি মাচা। মাচাগুলোতে ঝুলছে তিন ধরনের তরমুজ। কানিয়া জাতের তরমুজগুলো ডোরাকাটা সবুজ রঙের; তবে এর ভেতরের অংশ হলুদ রঙের। পাশের মাচায় ঝুলছে হলুদ রঙের বাঙ্গিসদৃশ তরমুজ, এর নাম মুনিয়া; ভেতরের অংশ লাল। কিছু মাচায় কালচে সবুজ রঙের সুইটব্ল্যাক তরমুজ, এর ভেতরের অংশও লাল।
আনিছুর রহমান বলেন, নিত্যনতুন ফসল আবাদে আমার আগ্রহ ছোটবেলা থেকেই। গত বছর পাঁচ কাঠা জমিতে পরীক্ষামূলক তরমুজ চাষ করি। বাজারে দেখলাম ভালো চাহিদা। এ বছর দেড় বিঘা জমিতে বারোমাস্যা তরমুজ রোপণ করে দারুণ ফলন পেয়েছি, খরচ হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। বাজারেও ভালো চাহিদা রয়েছে এর। প্রতি কেজি ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ৮০ হাজার টাকার তরমুজ বিক্রি করেছি। ক্ষেতে যা আছে, তাতে সব মিলে আরও ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকার তরমুজ বিক্রি হবে।
চাষি আনিছুর রহমান আরও জানান, বাজারে ‘কানিয়া’র চাহিদা সবচেয়ে বেশি। এরপরই রয়েছে সুইটব্ল্যাক। গত বছর ঢাকা থেকে এসব তরমুজের বীজ সংগ্রহ করেন তিনি। গত মৌসুমে লাভবান হওয়ায় এ বছর চাষের পরিধি বাড়িয়েছেন। আগামীতে আরও বড় পরিসরে এ ধরনের তরমুজ আবাদের পরিকল্পনা রয়েছে তার। তরমুজ আবাদের জন্য তৈরি করা মাচাতেই ফল সংগ্রহ শেষে শসা, করলা, শিমসহ বিভিন্ন সবজির আবাদ করা যায়। ফলে একই মাচা বারবার ব্যবহারে সাশ্রয় হয় কৃষকের।
দাপুনিয়া এলাকার কৃষক সদর উদ্দিন বলেন, ‘আনিছুর যে তরমুজ চাষ করেছেন, তা দুই মাসেই বিক্রির উপযোগী হয়ে যায়। ক্ষেতের তরমুজ তোলার পর ওই মাচায় শীতের সবজি চাষ করলে দ্বিগুণ লাভ হবে। এ জন্য আমি সামনের বছরই বারমাস্যা তরমুজ চাষের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
পাবনার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক বিভূতি ভূষণ সরকার বলেন, আনিছুর রহমান বিভিন্ন সময় নতুন নতুন ফসল চাষে সফল হয়েছেন। এবার থাই তরমুজ চাষ করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। আমরা এ ধরনের প্রচেষ্টায় সর্বাত্মক সহযোগিতা দিচ্ছি। আশা করছি, আগামীতে জেলায় বারোমাস্যা তরমুজ উৎপাদন অনেক বৃদ্ধি পাবে।
কৃষি বিভাগ জানায়, চলতি বছর জেলায় ১৬৫ হেক্টর জমিতে বারোমাস্যা তরমুজের আবাদ হয়েছে। চাষের প্রসার ঘটলে এ ফলটির স্বাদ ভোক্তারা উপভোগ করতে পারবেন বারো মাসÑএমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
শাহীন রহমান, পাবনা